বিকিকিনি। পঞ্চুরচকের স্টলে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
একটা সময় স্টলে ভিড় দূর, ক্রেতা খুঁজতে হত দূরবীন দিয়ে। যাঁরা আগ্রহ নিয়ে যেতেন, তাঁরাও মনপসন্দ জিনিস না পেয়ে ফিরে আসতেন খালি হাতে।
ছবিটা এখন উল্টো। ভর্তুকিতে শাড়ি বেচেও লাফিয়ে বাড়ছে আয়। ফল, মেদিনীপুর শহরে রাজাবাজার-পঞ্চুরচক ও জেলা পরিষদ মার্কেট কমপ্লেক্সে দু’টি কাউন্টার থাকা সত্ত্বেও পুজোর আগে ফের ওই মার্কেট কমপ্লেক্সেই একটি কাউন্টার খুলল তন্তুজ। নতুন কাউন্টার বাতানুকূল করার পরিকল্পনাও রয়েছে।
বিগত পাঁচ বছরে দোকানগুলিতে বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে প্রায় দুই থেকে তিনগুণ! পরিসংখ্যান বলছে, বাম জমানার শেষে ২০১০-১১ সালে মেদিনীপুর শহরে তন্তুজের বিক্রি ছিল ১৮ লক্ষ ২৩ হাজার টাকার। গত বছর তা ৬৩ লক্ষ ছাড়িয়েছে। আর চলতি বছরে ৬ মাসেই বিক্রি হয়েছে ৪১ লক্ষ ৭৯ হাজার ৩১১ টাকার জিনিস।
কিন্তু কী ভাবে এটা সম্ভব হল?
আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, এক দিকে ক্রেতাদের মন বুঝে আধুনিক সব ডিজাইনের শাড়ি-পোশাক রাখা আর সেই সঙ্গে কর্মচারীদের মধ্যে পেশাদার মনোভাব তৈরি করেই এই সাফল্য। তন্তুজের মেদিনীপুরের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘বর্তমান সরকার আকর্ষণীয় সব পোশাক আনছে। সরকারি দোকানের গুণগত মানও বজায় থাকছে। আমাদের কর্মীদের মানসিকতাও বদলেছে। সব মিলিয়ে আয় বাড়ছে।’’ অসিতবাবু আরও জানালেন, এখন আর দোকান চালাতে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হয় না। উল্টে লাভ হচ্ছে।
অথচ আগে এক-একটি দোকানে গড়ে বছরে বড় জোর ৫-১০ লক্ষ টাকার জিনিস বিক্রি হত। তাতে ঘর ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, কর্মীদের বেতন মিটিয়ে লাভ হত না। সরকারি এই সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, একটি দোকানে কর্মী পিছু বছরে ন্যূনতম ৮ লক্ষ টাকার সরঞ্জাম বিক্রি হলে ৩ শতাংশ লাভ মেলে। মেদিনীপুরে তন্তুজের দু’টি কাউন্টারে ৫ জন স্থায়ী কর্মী রয়েছেন। সেই মতো বছরে ন্যূনতম ৪০ লক্ষ টাকার পোশাক বিক্রি হলে লাভের মুখ দেখার কথা। ২০১৪-১৫ সাল থেকে সেটা শুরু হয়েছে। গত বছর তো ৬৩ লক্ষ টাকার। চলতি বছরে কোটি টাকার কাছাকাছি যাওয়ার আশা।
কম দাম আর গুণগত মান, এর টানেই তন্তুজতে ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা। ১১ হাত সুতির শাড়ি ১০৬ টাকায় (তৈরিতে খরচ ১৮৭ টাকা), আর ১২ হাত শাড়ি ১৬৫ টাকায় (তৈরিতে খরচ ২৬৮ টাকা) মেলে এখানে। ধনেখালি, বেগমপুরি, টাঙ্গাইল, তসর, বালুচরী, রাজবলহাট শাড়ির সম্ভারও নজরকাড়া। দাম ৩০০ থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। ১৭০ টাকায় লুঙ্গি, ৭০-৮০ টাকায় গামছা, ৩০০-৭০০ টাকায় বিছানার চাদর, ছেলেদের পাঞ্জাবি, ব্যাগ সবই মেলে তন্তুজের স্টলে।
ক্রেতাদের অভিজ্ঞতা বলছে, আগেও অনেক জিনিসপত্র থাকত। কিন্তু বিপণনে খুব একটা আগ্রহী ছিলেন না সংস্থার কর্মী-আধিকারিকরাই। জিনিস দেখানো ও বিক্রির ক্ষেত্রে তাঁদের অনীহা ক্রেতাদের তন্তুজ বিমুখ করেছিল। এখন সেই মানসিকতা পাল্টেছে। সেই সঙ্গে মেয়েদের রকমারি ব্যাগ, পাঞ্জাবি-সহ নানা নতুন ধরনের সরঞ্জামও রাখা হচ্ছে স্টলে। আর বদলে যাওয়া সেই তন্তুজই মন কাড়ছে ক্রেতাদের। মেদিনীপুরে তন্তুজের স্টলে আসা শ্যামলী হালদারের কথায়, “শাড়ি হোক বা পাঞ্জাবি, তন্তুজের জিনিসই আলাদা। আগে কর্মীদের ব্যবহার ভীষণ খারাপ ছিল। এখন তা আর নেই। তাই পুজো বাজার করতে এখানেই এসেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy