যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলছে বাঁধ মেরামতির কাজ। নিজস্ব চিত্র
তৎপরতা শুরু হয়ে গিয়েছিল বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই। তবে প্রবল জলোচ্ছ্বাসের ধাক্কায় মেরিন ড্রাইভের যে অবস্থা তাতে কোনওভাবে বাঁধ মেরামতির কাজ এগোচ্ছিল না। শুক্রবার সকাল থেকে ফের জোরকদমে শুরু হয়েছে কাজ। একের পর এক ছোট ট্রাক্টরে করে পাথরের বড় বড় চাঁই এনে আলমপুর থেকে চাঁদপুর এলাকা জড়ো করা হচ্ছিল।
রামনগর-১ ব্লকের চাঁদপুরে যে অংশে বুধবার রাতে সমুদ্রের বাঁধ ভেঙে গিয়েছিল, সেখানে বেশ খানিকটা দূর থেকে ওই পাথর ফেলা হচ্ছিল। সেচ দফতরের এক সহকারী নির্বাহী বাস্তুকার দাঁড়িয়ে থেকে আপাতত অস্থায়ী ভাবেই বাঁধ মেরামতের তদারকি করছিলেন। ঘড়িতে সকাল ১০টা। স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শম্পা পাত্র পৌঁছে গেলে কাজের জায়গায়। বাঁধ মেরামতের কাজ ঠিকমতো এগোচ্ছে কি না খোঁজখবর নিলেন।
এ দিন ভেঘে যাওয়া অংশে প্রায় ২০-২৫টি ট্রাক্টর ভর্তি পাথর ফেলা হয়। এক ট্রাক্টর চালকের দাবি, ‘‘মেরিন ড্রাইভের পাকা রাস্তা বলতে কিছুই নেই। সব ধুয়ে গিয়েছে।’’ জোয়ার থাকার কারণে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার সকাল দশটা পর্যন্ত পাথর ফেলার কাজ সেভাবে এগোতে পারেনি। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এবং ভাটা পড়ে যাওয়ায় দ্রুতগতিতে পুরোদমে কাজ শুরু হয়। তবে চাঁদপুর থেকে জামড়া হয়ে শঙ্করপুর পর্যন্ত বাঁধ মেরামতি একদিনে শেষ করা যাবে না বলে প্রশাসনিক আধিকারিকদের দাবি। তবে পূর্ণিমার কোটালের প্রভাব ধীরে ধীরে কাটতে থাকায় কিছুটা স্বস্তিতে প্রশাসন। তালগাছাড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বিশ্বজিৎ জানা বলেন, ‘‘বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে। তবে অমাবস্যার কোটালের আগে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ না হলে ফের একই অবস্থা হবে। আপাতত তিনটি গ্রাম সম্পূর্ণ এবং চারটি গ্রাম আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’’
কাঁথির মহকুমা শাসক শুভময় ভট্টাচার্য বলেন, জোয়ারের ‘‘যে সব জায়গায় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেখানে সেচ দফতর পাথর ফেলে মেরামতির কাজ করছে।’’
বাঁধ মেরামতি শুরু হলেও চাঁদপুর ও তার একেবারেই গা ঘেঁষে মেরিন ড্রাইভের ধারে জামড়া, ক্ষীরপাল গ্রাম এখনও জলমগ্ন। বাড়ি থেকে বেরোনোর পথ টুকু জল থৈ থৈ করছে। সমুদ্র বাঁধের একদম গা ঘেঁষে একতলা পাকা বাড়ি থেকে বেরোচ্ছিলেন এর মহিলা। আশ্রয়কেন্দ্রে যাননি কেন প্রশ্ন করায় জানালেন, ‘‘বুধবার রাতে জোয়ারের সমুদ্র ভয়ঙ্কর হতে পারে বলেই প্রশাসন আগেই সতর্ক করেছিল। বাড়ির সবাইকে নিয়ে আয়লাকেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিলাম। এ দিন ঘরদোর কেমন আছে দেখতে এসেছি।’’
একটু এগোতেই কায়মা গ্রাম। দেখা গেল সদ্য রোপণ করা আমন ধান সমুদ্রের নোনা জলের তলায়। আনাজের খেত থেকে পাম্প চালিয়ে জল বের করতে দেখা গেল কয়েকজনকে। সকলেই জানালেই অনেক টাকার ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। তবে একই সঙ্গে তাঁদের আশঙ্কা বাড়িয়েছে অমাবস্যার কোটাল। ভানু কামিল্যা নামে এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘পূর্ণিমার কোটালে যা ক্ষতি হল তাতে বাঁধ না সারালে ফের অমাবস্যার কোটালে একেবারে পথে বসতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy