Advertisement
E-Paper

নড়বড়ে বাস নামিয়েই বাড়ছে বিপদ!

সব জেনেও রক্ষণাবেক্ষণ তো দূরের কথা, গোলোযোগ নিয়েই পথে চালকেরা বাস নামান বলে অভিযোগ। দিন কয়েক আগে দাসপুরের হোসেনপুরে উল্টে যায় যাত্রীবাহী বাস। জখম যাত্রীদের বক্তব্য, বাসে যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল।

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৮ ০২:০৭
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

কোনও বাসের চাকার টায়ারের গ্রিপ নেই, কোনও বাসে আবার যাত্রিক ত্রুটি রয়েছে!

সব জেনেও রক্ষণাবেক্ষণ তো দূরের কথা, গোলোযোগ নিয়েই পথে চালকেরা বাস নামান বলে অভিযোগ। দিন কয়েক আগে দাসপুরের হোসেনপুরে উল্টে যায় যাত্রীবাহী বাস। জখম যাত্রীদের বক্তব্য, বাসে যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল। কিন্তু তার পরোয়া না করেই বাসটি মেদিনীপুর থেকে ছেড়েছিল। গন্তব্যে পৌঁছনোর আগে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। কেন যন্ত্রাংশের মেরামত না করে বাস নামানো হল, সেই প্রশ্ন ওঠে। শুধু হোসেনপুর নয়, সম্প্রতি মেদিনীপুর সদর ব্লকের বাড়ুয়া, বেলদার জাহালদাতেও বাস উল্টে জখম হন যাত্রীরা। কোনও গাড়ির সঙ্গে মুখোমুখি ধাক্কা লাগেনি। আচমকাই নিয়ন্ত্রণ হারায় বাস।

জখম যাত্রীদের দাবি, যান্ত্রিক ত্রুটি না থাকলে এ ভাবে বাস নিয়ন্ত্রণ হারায় না। একের পর এক দুর্ঘটনায় তাই প্রশ্নের মুখে পড়েছে বাসের ফিটনেস পরীক্ষাই। নিয়মানুযায়ী, বছরে একবার বাসের ফিটনেস পরীক্ষা হয়। সব দিক খতিয়ে দেখে ফিট সার্টিফিকেট দেন পরিবহণ দফতরের আধিকারিকেরা। অবশ্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই পরীক্ষা খাতায়-কলমে হয় বলেই অভিযোগ। সেই ভাবে সব দিক খুঁটিয়ে দেখা হয় না। জেলার অতিরিক্ত পরিবহণ আধিকারিক অমিত দত্ত মানছেন, “গত এক-দেড় মাসে পরপর কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। বাস উল্টে যাত্রীরা জখম হয়েছেন। একের পর এক দুর্ঘটনায় আমরাও উদ্বিগ্ন।”

বাসের ফিটনেস ঠিকঠাক থাকলে কি এ ভাবে নিয়ন্ত্রণ হারায়? অমিতবাবু বলেন, “নানা কারণে বাস নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারে। সব বাসেরই বছরে একবার ফিটনেস পরীক্ষা হয়। সব দিকই খতিয়ে দেখা হয়। এ দিকে নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।” দফতরের এক কর্মীর অবশ্য স্বীকারোক্তি, “আমাদের লোকবল কম। বাসের ফিটনেসের সব দিক যে ভাবে দেখার কথা, সব ক্ষেত্রে হয়তো সেই ভাবে দেখা সম্ভব হয় না।” তাঁর কথায়, “তবে চালকের লাইসেন্স রয়েছে কি না, ইমার্জেন্সি গেট রয়েছে কি না, সেই সব দিক দেখা হয়।”

যাত্রীদের বক্তব্য, অনেক ক্ষেত্রে বাসের স্টিয়ারিং কিংবা ব্রেকে ত্রুটি থাকে। চাকাতেও ত্রুটি থাকে। সুশোভন দাস, শ্রেয়া দত্ত প্রমুখ যাত্রীর কথায়, “কিছু কিছু বাসে উঠতেই ভয় লাগে। দেখেই মনে হয় বাস অনেক পুরনো। অনেক দিন রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি।” যাত্রীদের বক্তব্য, বাসগুলো কেমন হেলেদুলে চলাচল করে। মনে হয়, এই বুঝি দুর্ঘটনায় পড়ল! পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিক মানছেন, “যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য দুর্ঘটনা যে ঘটে না তা নয়। কিছু ক্ষেত্রে বাসের স্টিয়ারিং ফেল করে। কিছু ক্ষেত্রে বাসের ব্রেক ফেল করে। আচমকা যান্ত্রিক ত্রুটি হলে অনেক সময় কিছু করার থাকে না।”

কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির কথা জেনেবুঝেও বাস নামানো হয় কী করে? ওই আধিকারিকের কথায়, “এমনটা হওয়ার কথা নয়। এ ব্যাপারে বাস চালকদের সতর্ক করা হবে।” পশ্চিম মেদিনীপুরে বাসের সংখ্যা কম নয়। জেলার উপর দিয়ে দিনে প্রায় ৮০০ বাস চলাচল করে।

প্রায়শই কোথাও না কোথাও যাত্রীবাহী বাস দুর্ঘটনায় পড়ছে। মাস খানেক আগে খড়্গপুর গ্রামীণের সতকুইতে ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনায় সাতজনের প্রাণ গিয়েছে। এ ক্ষেত্রেও বাস নয়ানজুলিতে উল্টে গিয়েছিল। পথ দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে পশ্চিম মেদিনীপুরের পরিস্থিতি যে উদ্বেগজনক তা মানছে পুলিশও। জেলা পুলিশের এক সূত্রে খবর, রাজ্যের ৪০টি দুর্ঘটনাপ্রবণ থানার মধ্যে ৪টি থানা এ জেলারই। জেলার পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়ার আশ্বাস, “দুর্ঘটনা কমানোর সব রকম চেষ্টা চলছে। সচেতনতা বাড়ানোরও চেষ্টা চলছে।”

Danger Bus Defect Bus Service
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy