বেহাল বন বাংলো। দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।
বেলপাহাড়ি ব্লকের বাঁশপাহাড়িতে ইংরেজ আমলের কাছারি বাংলোটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এক দশক আগেও এই ভবনটি ছিল বন দফতরের অতিথিশালা। পর্যটকরাও এসে থাকতেন। জঙ্গলমহলের বিভিন্ন এলাকাকে নিয়ে ট্যুরিজম সার্কিট গড়ার কথা বলে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু এখনও পাহাড়-জঙ্গলে ঘেরা বাঁশপাহাড়ি এলাকায় পর্যটকদের জন্য উপযুক্ত থাকার জায়গা গড়ে তোলা হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, সামান্য সংস্কার করলেই বাড়িটিকে আদর্শ বন বাংলো হিসেবে গড়ে তোলা যায়। কিন্তু এ ব্যাপারে প্রশাসনিকস্তরে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বাঁশপাহাড়ি-ঝিলিমিলি পিচ রাস্তায় বাঁশপাহাড়ি চক থেকে পশ্চিমদিকে মোরাম রাস্তা ধরে কয়েক পা গেলেই বাঁশপাহাড়ি ফরেস্ট রেঞ্জ অফিস। ওই চত্বরের মধ্যে রয়েছে বাংলোটি। বাঁশপাহাড়ি থেকে বাঁকুড়ার ঝিলিমিলি, সুতান ও মুকুটমণিপুরের মতো দর্শনীয় জায়গায় সহজে যাওয়া যায়। অনেকেই প্রাকৃতিক নৈসর্গের টানে এলাকায় থাকতে চান। কিন্তু বাঁশপাহাড়িতে রাত্রিযাপনের কোনও ব্যবস্থা নেই।
প্রশাসনিক তথ্য অনুযায়ী, ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে মিরজাফর দ্বিতীয়বার বাংলার নবার হওয়ার পরে বেলপাহাড়ির বিস্তীর্ণ অংশ চলে যায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও ব্রিটিশ রাজের নিয়ন্ত্রণাধীন ‘মেদিনীপুর জমিদারি কোম্পানি’র অধীনে। ইংরেজ আমলে বাঁশপাহাড়িতে সাহেবদের রেস্ট হাউসটি তৈরি হয়। স্থানীয় বাসিন্দা মথন মাহাতো, আনন্দ মুড়ার বক্তব্য, “বাঁশপাহাড়ির এই বাড়িটিতে ইংরেজ সাহেব-মেমরা হাওয়া বদল করতে আসত বলে বাবা-ঠাকুরদার কাছে শুনেছি।” বাংলোটিতে লম্বা দালান-সহ দু’টি বড় ঘর রয়েছে। একটি ঘরে ফায়ার প্লেসও আছে। বাথরুমটিও বিশাল। বাংলোর কিছুটা দূরে বাবুর্চি ও খানসামার আউট হাউসও আছে। চারপাশে সেগুন গাছের সারি। পরবর্তী কালে এই ভবনটি বন দফতরের অতিথিশালা হয়ে যায়। দফতরের শীর্ষ কর্তারা এসে থাকতেন। আসতেন। পর্যটকদেরও বুকিং দেওয়া হত।
২০০৪ সালে মাওবাদীরা কাঁকড়াঝোর গ্রামে দু’টি বন বাংলো ল্যান্ড মাইন ফাটিয়ে ধ্বংস করে দেয়। তারপর থেকে এলাকায় পর্যটকদের যাতায়াত কমে যায়। জঙ্গলমহলে ২০০৯-১০ সালে মাওবাদী অশান্তি পর্বের সময় পাকাপাকি ভাবে বাংলোটি বন্ধ হয়ে যায়। ঝাড়গ্রাম পর্যটন সংস্থার কর্তা সুমিত দত্ত বলেন, “এখন এলাকায় প্রচুর পর্যটক আসেন। অনেকেই পাহাড়-জঙ্গলের মাঝে থাকতে চান। বাঁশপাহাড়ির হেরিটেজ ভবনটি অনাদরে পড়ে রয়েছে। এটি সংস্কার করা হলে দু’টি ঘরে কমপক্ষে ৮ জন থাকতে পারবেন।” বাঁশপাহাড়ির রেঞ্জ অফিসার দুর্গাদাস হাঁসদা বলেন, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy