Advertisement
০৮ মে ২০২৪
ডেঙ্গি নিয়ে সচেতন নন নাগরিকরা
Dengue

জমা-জলে বাড়ছে এডিস মশা

এ দিন ঝাড়গ্রাম শহরের ৯ নম্বরের ওয়ার্ডের চণ্ডীপুর বস্তিতে গিয়ে দেখা মেলে নমিতা হেমব্রমের। মাটির বাড়ির দাওয়ায় বসে রান্না করছিলেন তিনি, চারপাশে বিনবিনে মশা। উঠোনের পাশে জমে আছে আবর্জনা। ভাঙা কাপ, মাটির হাঁড়ির ভিতর জমা জলে কিলবিল করেছে ‘এডিস’ মশার লার্ভা।

 নিশ্চিন্ত-বাস: বেড়ার বাঁশের ভিতর জমেছে জল। সেখানেও বাড়ছে মশার লার্ভা। পরীক্ষা করে দেখছেন সিএমওএইচ। নিজস্ব চিত্র

নিশ্চিন্ত-বাস: বেড়ার বাঁশের ভিতর জমেছে জল। সেখানেও বাড়ছে মশার লার্ভা। পরীক্ষা করে দেখছেন সিএমওএইচ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:১০
Share: Save:

শহরের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে নিজে এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। ঝাড়গ্রাম পুর-এলাকার তিনটি বস্তি এলাকায় গিয়ে তিনি যা দেখেছেন তা উদ্বেগজনক। বাসিন্দাদের সরাসরি ধমকও দিয়েছেন সিএমওএইচ অশ্বিনী মাঝি।

এ দিন ঝাড়গ্রাম শহরের ৯ নম্বরের ওয়ার্ডের চণ্ডীপুর বস্তিতে গিয়ে দেখা মেলে নমিতা হেমব্রমের। মাটির বাড়ির দাওয়ায় বসে রান্না করছিলেন তিনি, চারপাশে বিনবিনে মশা। উঠোনের পাশে জমে আছে আবর্জনা। ভাঙা কাপ, মাটির হাঁড়ির ভিতর জমা জলে কিলবিল করেছে ‘এডিস’ মশার লার্ভা।

আবার কেশবডিহি বস্তির প্রদীপ পড়িয়ার বাড়ির শৌচাগারের পিছনে দেখা গেল আবর্জনার স্তূপে থার্মোকলের বাতিল বাক্স। ভিতর জমা জলে নিশ্চিন্তে বা়ড়ছে এডিসের লার্ভা। পাশেই হুটোপাটি করছে শিশুরা, সকলেই খালি গায়ে।

চণ্ডীপুরের পুঁটি হেমব্রমের বেড়ার বাঁশের ফোঁকরেও বৃষ্টির জমা জলে থিকথিকে এডিস মশার লার্ভা। কাছেই মাটির একটি বড় গর্ত। সেখানে বৃষ্টির জমা জলেও কিলবিল করছে মশার লার্ভা।

সোমবার ঝাড়গ্রাম জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দুই পতঙ্গবিদ ইন্দ্রনীল ঘোষ ও অন্বেষা গোস্বামীকে সঙ্গে নিয়ে ঝাড়গ্রাম শহরের কয়েকটি বস্তি এলাকা পরিদর্শন করে এমনই সব ছবি দেখলেন সিএমওএইচ (ঝাড়গ্রাম) অশ্বিনী মাঝি। গত তিন মাস ধরে ঝাড়গ্রাম পুরসভা মশা-নিধন কর্মসূচি ও সচেতনতা প্রচার চালাচ্ছে।

কিন্তু পুরবাসিন্দাদের সচেতনতা দেখে বিরক্ত হয়ে সিএমওএইচ বলেন, “বাড়ির চারপাশটা তো মশার আঁতুড়ঘর বানিয়ে ফেলেছেন। এত প্রচারের পরেও আপনারা সচেতন হচ্ছেন না কেন?”

চণ্ডীপুর বস্তির স্থানীয় কয়েকজন অনুযোগ করেন, পুরসভার সাফাই কর্মীরা নিয়মিত আসেন না। তাই এই চিত্র। এ কথা শুনে খানিক রেগে অশ্বিনীবাবু বলেন, “দোষারোপ না করে নিজেরা সচেতন হোন। বাড়ির উঠোনে বাতিল কাপ, ডাবের খোলা জমিয়ে রেখেছেন! সেগুলো পরিষ্কার করুন। সমস্যা হলে পুরসভাকে জানান।” তারপর নিজে হাতেই ফেলে দেন টব ও বাতিল পাত্রের জমা জল। পুঁটি হেমব্রমের বাড়ির বেড়ার ফাঁকে ভরে দেন বালি-মাটি। উড়ন্ত মশা ধরে পতঙ্গবিদরা এলাকাবাসীকে দেখান কোনটি ডেঙ্গিবাহী মশা।

পরে অশ্বিনী মাঝি বলেন, “পুরসভার উদ্যোগে সচেতনতা প্রচার ও মশা মারার কর্মসূচি কেমন হচ্ছে তা এদিন খতিয়ে দেখলাম। সচেতনতা প্রচারে আরও জোর দেওয়ার জন্য পুরসভাকে বলেছি।”

স্বাস্থ্যকর্তার পরিদর্শনের পরে অস্বস্তিতে পড়েছে পুরসভা। উপ-পুরপ্রধান শিউলি সিংহ অবশ্য দাবি করেন বলেন, “নিয়মিত মশা নাশক স্প্রে করা হচ্ছে। পুরসভার ৪২টি দলকে দিয়ে শহরের ১৮টি ওয়ার্ডে প্রতি মাসে দু’বার সমীক্ষা ও সচেতন কর্মসূচি হচ্ছে। যে এলাকায় লার্ভা মিলেছে সেখানে সচেতনতা প্রচারে আরও জোর দেওয়া হবে।”

সরকারি হিসেবে গত এক মাসে ঝাড়গ্রাম শহরে ৩ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন। এ ছাড়া একজন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন। ডেঙ্গি আক্রান্তকে পরে কলকাতায় পাঠাতে হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE