E-Paper

আঠারোর আগেই মা অনেকে, রাশ কই!

জেলায় নাবালিকা গর্ভধারণ কমেনি। দেখা যাচ্ছে, জেলায় প্রসূতির প্রায় ২১ শতাংশই নাবালিকা। অর্থাৎ, জেলায় ১০০ জন প্রসব করলে, তার মধ্যে গড়ে ২১ জনই নাবালিকা, যাদের বয়স ১৮-র কম।

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০২৩ ০৬:৫৩
pregnancy

জেলার বেশ কয়েকটি ব্লকে নাবালিকা প্রসূতির সংখ্যা চিন্তা বাড়াচ্ছে প্রশাসনেরও। প্রতীকী ছবি।

বাল্যবিবাহ রোধে কন্যাশ্রী- রূপশ্রীর মতো প্রকল্পের প্রচার চলছে বলে দাবি প্রশাসনের। অথচ নাবালিকা প্রসূতির সংখ্যায় সে ভাবে রাশই টানা যাচ্ছে না। ছবিটা পশ্চিম মেদিনীপুরের।

জেলায় নাবালিকা গর্ভধারণ কমেনি। দেখা যাচ্ছে, জেলায় প্রসূতির প্রায় ২১ শতাংশই নাবালিকা। অর্থাৎ, জেলায় ১০০ জন প্রসব করলে, তার মধ্যে গড়ে ২১ জনই নাবালিকা, যাদের বয়স ১৮-র কম। জেলার বেশ কয়েকটি ব্লকে নাবালিকা প্রসূতির সংখ্যা চিন্তা বাড়াচ্ছে প্রশাসনেরও। জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদেরী বলেন, ‘‘বাল্যবিবাহ আটকাতে নিচুস্তর পর্যন্ত পরিকল্পনা করা হচ্ছে। নাবালিকাদের গর্ভধারণের ঝুঁকি সম্পর্কেও সচেতন করা হচ্ছে।’’ জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গীর কথায়, ‘‘অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ ঠেকাতে সচেতনতা প্রচার চলছে।’’

অবশ্য সচেতনতা প্রচারই সার। জেলা প্রশাসনেরই এক সূত্রে খবর, জেলায় নাবালিকা গর্ভধারণের হার সে ভাবে নিম্নমুখী হচ্ছে না। এর প্রধান কারণ, বাল্যবিবাহ ঠেকাতে না পারা। ওই সূত্রে খবর, ২০২২ এর এপ্রিল থেকে ২০২৩ এর মার্চ পর্যন্ত, এই ১২ মাসে জেলায় ৬১,০১৬ জন প্রসব করেছেন। এর মধ্যে ১২,৫১৫ জনই নাবালিকা, প্রায় ২০.৫ শতাংশ। প্রশাসনের ওই সূত্রের অবশ্য দাবি, ধীরে ধীরে নাবালিকা প্রসূতি কমছে। ২০১৯-’২০ তে ওই হার ছিল ২৬.৭ শতাংশ। ২০২০-’২১ সালে বেড়ে হয় ২৭ শতাংশ। ২০২১-’২২-এ কমে হয় ২৬.২ শতাংশ, ২০২২-’২৩-এ আরও হয়েছে ২০.৫ শতাংশ। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের মতে, ‘‘প্রচারের সুফল পুরোপুরি পেতে আরও কিছুটা সময় লাগবে।’’

জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরের ২১টি ব্লকের মধ্যে ১২টি ব্লকেই নাবালিকা গর্ভধারণের হার উদ্বেগজনক। একাধিক ব্লকে তা ২৫ শতাংশের বেশি। ওই ১২টি ব্লকের মধ্যে ৮টি ব্লকে নাবালিকা প্রসূতি ২২ শতাংশের বেশি। এই ব্লকগুলি হল চন্দ্রকোনা- ১ (২২.১ শতাংশ), চন্দ্রকোনা- ২ (২৫ শতাংশ), গড়বেতা- ২ (২৫.৭ শতাংশ), গড়বেতা- ৩ (২৬.১ শতাংশ), কেশপুর (২২.৬ শতাংশ), খড়্গপুর- ১ (২৪.৬ শতাংশ), সবং ২২.৫ (শতাংশ), শালবনি (২৫.৩ শতাংশ)। ৪টি ব্লকে ২০ শতাংশের বেশি। তবে ২২ শতাংশের কম। ওই ব্লকগুলি হল দাঁতন- ২ (২০.৭ শতাংশ), কেশিয়াড়ি (২১.৬ শতাংশ), খড়্গপুর- ২ (২০.২ শতাংশ), পিংলা (২১.৪ শতাংশ)।

এর প্রভাব পড়ছে প্রসূতি মৃত্যু, শিশু মৃত্যুতে। এই দুই ক্ষেত্রে মৃত্যু সে ভাবে কমছে না। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের পর্যবেক্ষণ, ‘‘যে এলাকায় নাবালিকা গর্ভধারণ বেশি, সেই এলাকায় প্রসূতি মৃত্যুর হারও তুলনায় বেশি।’’ মূলত বাল্যবিবাহ রুখতে কন্যাশ্রী প্রকল্প চালু করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। দুঃস্থ পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের বিয়েতে সহায়তার জন্য চালু হয়েছে রূপশ্রী প্রকল্প। তাও কেন বাল্যবিবাহে রাশ টানা যাচ্ছে না?

জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমেও নাবালিকা বিয়ের কুফল প্রচার করা হচ্ছে। জেলার কোন কোন এলাকায় বাল্যবিবাহের প্রবণতা বেশি, ইতিমধ্যেই এমন কিছু এলাকা চিহ্ণিত করা হয়েছে। এলাকাওয়াড়ি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা হচ্ছে।’’ তিনি জুড়ছেন, ‘‘কমবয়সি মেয়েদের জোর করে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা না করে, তাদের বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে জানাতে হবে। তবেই সমাজ থেকে এই ধরনের সমস্যা দূর হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Pregnancy midnapore

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy