Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সর্বশিক্ষায় গরমিল, সাতশো স্কুলকে শো-কজ

ছিল রুমাল। হয়ে গেল বেড়াল। বছরের শুরুতে স্কুলের তরফে ছাত্র-ছাত্রীদের যে সংখ্যা দেওয়া হয়েছিল, বছরের শেষে দেখা গেল হিসেব মিলছে না। সংখ্যাগুলোর মধ্যে ফাঁক অনেকটাই।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

আনন্দ মণ্ডল
তমলুক শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৭ ০১:১৮
Share: Save:

ছিল রুমাল। হয়ে গেল বেড়াল।

বছরের শুরুতে স্কুলের তরফে ছাত্র-ছাত্রীদের যে সংখ্যা দেওয়া হয়েছিল, বছরের শেষে দেখা গেল হিসেব মিলছে না। সংখ্যাগুলোর মধ্যে ফাঁক অনেকটাই। আর এমন গরমিলের কারণ জানতে চেয়ে বিভিন্ন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে শো-কজ করল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সর্বশিক্ষা মিশন। জানা গিয়েছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলিয়ে গত কয়েকদিনে জেলার প্রায় ৭০০ স্কুলকে শো-কজ করা হয়েছে।

সর্বশিক্ষা মিশনের জেলা প্রকল্প আধিকারিক সুমন বিশ্বাস বলেন, ‘‘জেলার কিছু প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যার যে হিসেব দেওয়া হয়েছে তাতে অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। তার কারণ জানতে চেয়েই ওইসব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে শো-কজ করা হয়েছে।’’

জেলা সর্বশিক্ষা মিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা-সহ বিভিন্ন তথ্য জানানোর জন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বছরের শুরু থেকে প্রতি মাসে রিপোর্ট পাঠান জেলা সর্বশিক্ষা মিশনের কাছে। ডিস্ট্রিক্ট ইনফরমেশন সিস্টেম ফর এডুকেশন (ডাইস) নামে পরিচিত ওই তথ্য সম্বলিত রিপোর্ট দেখে জেলা সর্বশিক্ষা মিশন সামগ্রিকভাবে পরিকল্পনা করে। জেলায় মোট ৩২৬৪ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মোট প্রায় এক হাজার হাইস্কুল রয়েছে। ২০১৬ শিক্ষাবর্ষের শুরুতে জেলার প্রতি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় তাঁদের ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যার হিসেব জমা দিয়েছিল। আবার ২০১৬ শিক্ষা বর্ষের শেষ দিকে জেল সর্বশিক্ষা মিশন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়া সংখ্যা, অভিভাবকের নাম, জন্ম তারিখ, জাতিগত তথ্য, আধার কার্ড নম্বর-সহ বিভিন্ন তথ্য সম্বলিত তালিকা জমার জন্য নির্দেশিকা দিয়েছিল।

স্টুডেন্ট ডেটা ইনফরমেশন সিস্টেম নামে ছাত্র-ছাত্রীদের বিস্তারিত ওই তথ্য সম্বলিত তালিকা জমা দেয় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এরপর জেলা সর্বশিক্ষা মিশন বছরের শুরুতে দেওয়া হিসেবের সঙ্গে বছরের শেষে দেওয়া হিসেব মেলাতে গিয়ে দেখে বিস্তর ফারাক। এই গরমিলের কারণ জানতে চেয়ে জেলার ওইসব বিদ্যালয়গুলিকে শো- কজ করেছে জেলা সর্বশিক্ষা মিশন। এর মধ্যে রয়েছে কাঁথি নতুন চক্রের ৫৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও। নতুন চক্রের স্কুল ইন্সপেক্টর সুব্রত জানা অবশ্য দাবি করেছেন, “ডেটা এন্ট্রিতে ভুল হয়েছে। স্কুলগুলো প্রথমবার এতো তাড়াতাড়ি কাজ করতে গিয়ে ঠিকমতো বুঝতে পারেনি। তবে এবার আর এমন হবে না।’’

শো-কজ চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতির জেলা কমিটির সদস্য তথা নন্দকুমারের বাগডোবা জালপাই হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বিধান সামন্ত। তিনি বলেন, ‘‘অভিজ্ঞতায় দেখেছি শিক্ষা বর্ষের শুরুতে স্কুলে যত সংখ্যক পড়ুয়া ভর্তি হয় তার মধ্যে কয়েকজন শিক্ষা বর্ষের মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়ে দেয়। ফলে শিক্ষাবর্ষের শেষে পড়ুয়া সংখ্যা কিছুটা কমে যায়। তবে এ বিষয়ে পর্যালোচনা করার আগে কোনও সিদ্ধান্তে আসা উচিত নয়।’’

বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি গোকুলচন্দ্র মুড়ার কথায়, ‘‘বছরের শেষ দিকে বিদ্যালয়গুলিকে অল্প সময়ের মধ্যে ছাত্র-ছাত্রীদের সব তথ্য জোগাড় করে জমা দিতে হয়েছে। এর ফলে কিছু ক্ষেত্রে এই অসঙ্গতি থাকা অমূলক নয়। এজন্য বিদ্যালয়গুলিকে শো-কজ করার বদলে আরও সময় দেওয়া উচিত ছিল।’’

সহ-প্রতিবেদন শান্তনু বেরা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE