Advertisement
E-Paper

পয়লায় প্রচারের মাতামাতি জেলা জুড়ে

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৫ ০০:০১
হলদিয়ার মাখনবাবুর বাজারে হালখাতার ভিড় সোনার দোকানে।

হলদিয়ার মাখনবাবুর বাজারে হালখাতার ভিড় সোনার দোকানে।

হালখাতা, রক্তদান শিবির, ভোট প্রার্থীর গোলাপ ফুল থেকে বিয়ের আয়োজনে নব দম্পতির নতুন জীবন— বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে নানা অনুষ্ঠানে জমজমাট গোটা জেলা।

নতুন বছরের প্রথম দিন একটা উৎসবের চেহারা তো থাকবেই। এ বছর অবশ্য সেই উৎসবে লেগেছে নতুন রং। ভোট প্রচারের জন্য এমন একটা দিন হাতছাড়া করতে চান না কোনও প্রার্থীই। তাই নববর্ষের পয়লা দিনেই জোরদার প্রচার সারলেন সব দলের প্রার্থীরা। আর সেই প্রচারের নতুনত্বে স্থানীয় বাসিন্দারা যে আনন্দ পেয়েছেন তা বলাই বাহুল্য।

ঘাটাল, তমলুক, এগরা, কাঁথি কোনও পুরসভাই ব্যতিক্রম নয়। এ দিন সকালে থেকেই একদিকে যেমন ভিড় জমেছে বিভিন্ন মন্দিরে, তেমনই ভিড় বেড়েছে রাজনীতির প্রর্থনায়। আর সেখানেই আজ নতুন চিত্র দেখা গেল নববর্ষের সকালে। প্রভাত ফেরিতে রাজনীতির প্রচার তো কেউ আবার লস্যি বিলি করেই ভোট চেয়ে নিলেন। এমনকী সোজা রান্নাঘরে ঢুকে যেতেও দেখা গেল কোনও কোনও প্রার্থীকে।

এ দিন সকাল সকাল গৃহ দেবতার পুজো সেরেই প্রচারে বেরিয়ে পড়েন ঘাটাল পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী তথা ঘাটাল কলেজের টিআইসি লক্ষীকান্ত রায়। কখনও সুসজ্জিত গাড়িতে, কখনও বা পায়ে হেঁটে গোটা ওয়ার্ড চষে বেড়ান। মাঝে মধ্যেই ঢুকে পড়েছেন দোকানে। সেখানে হয়তো তখন চলছে পুজোর আয়োজন বা পুজো। প্রার্থীর দাবি ভাল সাড়াই পেয়েছেন। একই ভাবে ওই ওয়ার্ডেরই নির্দল প্রার্থী অনুপ চক্রবর্তী প্রত্যেকের বাড়িতে গিয়ে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে আসেন।

ঘাটাল ১১ নম্বর ওয়ার্ডে টুম্পা আধিকারী আবার পথ চলতি সাধারণ মানুষের হাতে তুলে দেন ঠাণ্ডা লস্যি। তারপরই নমস্কার করে আশির্বাদ চেয়ে নেন, আর্জি জানান বিজেপি-কে মূল্যবান ভোটটি দেওয়ারও। বিজেপি প্রার্থীর এমন অভিনব প্রচার নিয়ে ঘাটালে সারাদিন বিস্তর আলোচনা চলল।

প্রচারে নেমে আরও একধাপ এগিয়ে গেলেন ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী শম্পা পতি। পয়লা বৈশাখের দুপুরে প্রচারে বেরিয়ে তিনি সোজা ঢুকে পড়েন অন্দরে। মহিলা সংরক্ষিত ওয়ার্ডের প্রার্থী তিনি, তাই রান্নাঘরে ঢুকে হাতে তুলে নিলেন খুন্তিও। বয়স্ক গৃহিনীকে সাহায্য করলেন খানিক্ষণ। আর তাতেই খুশি ওয়ার্ডের বাসিন্দা পূর্ণিমা দাস। কংগ্রেস প্রার্থী শ্যামলি মহাপাত্র আবার সরাসরি নববর্ষের প্রণাম করেন বয়স্ক ভোটারদের। বাড়ি বাড়ি যান সিপিএম প্রার্থী মীরা দাসও।

বাম প্রার্থীরা এ দিন ফের নিয়ে এসেছেন তাঁদের গণ-সঙ্গীতের ধারা। প্রায় সব ওয়ার্ডেই নববর্ষের সকাল থেকে বসেছে গণ-সঙ্গীতের আসর। প্রার্থীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নতুন বছরের শুভেচ্ছাও জানিয়ে আসেন।

একই চিত্র তমলুক শহরেও। এ দিন সকালেই তমলুক ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী বিশ্বজিৎ কয়াল ভোটারদের বাড়ি গিয়ে গোলাপ ফুল দিয়ে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান, সঙ্গে নিয়ে যান চকোলেট ও বাংলা ক্যালেন্ডার। পরে আবার চকোলেট নিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে যান তৃণমূল প্রার্থী ঝড়ুপদ বর্মণ। এত শুভেচ্ছায় ভোটাররা অবশ্য খানিকটা হতভম্ব। স্থানীয় এক বাসিন্দা তো বলেই ফেললেন, ‘‘এমন নববর্ষ কখনও আসেনি আগে।’’ ৩ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী শক্তিপ্রসাদ ভট্টাচার্যের হয়ে প্রচার করে আসেন জলসম্পদ মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে তৃণমূল প্রার্থীর হয়ে তাঁদের সমর্থন চান তিনি।

তবে ভোটের বাইরে য়লা বৈশাখ কাটল নিজস্ব ভঙ্গিতেই। বুধবার ভোররাত থেকেই তমলুক শহরের বর্গভীমা মন্দিরে উপচে পড়েছে ভিড়। মূলত ব্যবসায়ীদের খাতা ছোঁয়ানোর ভিড়ই ছিল বেশি। তবে সাধারণ মানুষও এসেছিলেন বছরের প্রথম দিনটিতে পুজো দিতে। চেনা হালখাতা, মিষ্টিমুখের সঙ্গেই ছিল নববর্ষের অন্য ছবিও। নিমতৌড়িতে ভারত সঙ্ঘের উদ্যোগে গণবিবাহের আসরে আট জোড়া পাত্র-পাত্রীর বিয়ে দেওয়া হয়। পাঁশকুড়া স্টেশনবাজার সংলগ্ন নতুন বাসস্ট্যান্ডে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেছিল পাঁশকুড়া ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স অ্যাসোসিয়েশন। শিবিরে রক্তদান করেন ১৪৫ জন।

এগরার পটাশপুর-২ ব্লকের প্রতাপদিঘি বিদ্যাসাগর মেলা কমিটির উদ্যোগে সন্ধ্যেয় বসে সাহিত্য বাসর। ভগবানপুরেও নববর্ষের দিনটি উৎসাহের মধ্যদিয়ে পালিত হয়। বাজারের দোকানগুলিতে হালখাতা তৈরি থেকে বিভিন্ন এলাকায় বর্ষবরণ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। কাঁথি শহরের বিশ্বম্ভর শিশু উদ্যানে সারস্বতী ক্লাবের উদ্যোগে ক্লাবের শিশু সংগঠন সবুজমেলার পক্ষ থেকে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বর্ষবরণ উপলক্ষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সবুজমেলার শিশু সদস্যরা আবৃত্তি, নৃত্য ও সঙ্গীত পরিবেশন করে। অনুষ্ঠানে সারস্বতী ক্লাবের সদস্যরা ও সবুজমেলার শিশু সদস্যরা ছাড়াও শিশু সদস্যদের অভিবাবকরাও উপস্থিত ছিলেন।

—নিজস্ব চিত্র।

Haldia Swapan Nayak Patashpur Tamluk Ghatal jewellery shop
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy