Advertisement
E-Paper

জঙ্গলে হাতির দল, উৎসব থামিয়ে ছুট

সন্ধে তখন সাতটা ছুঁইছুঁই। নিকষ কালো আঁধারে ডুব দিয়েছে জঙ্গলে ঘেরা ঝাড়গ্রামের আমলাচটি গ্রাম। গ্রামের বাড়িতে রাত কাটাবেন বলে ছাইরঙা গাড়ি থেকে নামলেন গোপীবল্লভপুরের বিজয়ী তৃণমূল প্রার্থী চূড়ামণি মাহাতো। সকালে জয়ের রেশ তখনও কাটেনি। কর্মীরা তারস্বরে তাসা বাজিয়ে চলেছেন।

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৬ ০১:২৪
আমলাচটি গ্রামের এই বাড়িতেই রাত কাটানো হয়নি চূড়ামণি মাহাতোর।

আমলাচটি গ্রামের এই বাড়িতেই রাত কাটানো হয়নি চূড়ামণি মাহাতোর।

সন্ধে তখন সাতটা ছুঁইছুঁই। নিকষ কালো আঁধারে ডুব দিয়েছে জঙ্গলে ঘেরা ঝাড়গ্রামের আমলাচটি গ্রাম। গ্রামের বাড়িতে রাত কাটাবেন বলে ছাইরঙা গাড়ি থেকে নামলেন গোপীবল্লভপুরের বিজয়ী তৃণমূল প্রার্থী চূড়ামণি মাহাতো। সকালে জয়ের রেশ তখনও কাটেনি। কর্মীরা তারস্বরে তাসা বাজিয়ে চলেছেন।

আমলাচটি গ্রামে চূড়ামণিবাবুর টালির ছাদের মাটির বাড়ি। বাড়ির উঠোনে মিষ্টির থালা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন চূড়ামণিবাবুর স্ত্রী ছবিরানিদেবী। সবে স্ত্রীর হাত থেকে একটি রসগোল্লা মুখে পুরেছেন চূড়ামণিবাবু। অমনি দূরের জঙ্গলে দুদ্দাড় শব্দ। মোবাইল ফোন কানে দলের এক কর্মী চূড়ামণিবাবুর কানে ফিসফিস করে জানালেন, পাশের বলদডুবা গ্রামের দিক থেকে তেনারা হুটোপাটি করে এ দিক পানেই হাঁটা দিয়েছেন। দলমার পালের হাতিদের আতঙ্কে তখন কর্মীদের মুখ শুকিয়ে কাঠ।

কে কোথায় লুকোবেন জায়গা খুঁজে পাচ্ছেন না। কাল বিলম্ব না-করে কনভয় ঘুরিয়ে নেন চূড়ামণিবাবু। রাতে আর পরিবারের সঙ্গে আমলাচটি গ্রামের বাড়িতে থাকা হয়নি তাঁর। ঠিক ছিল অনেকদিন পরে পরিবারের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে সময় কাটাবেন। জমিয়ে কব্জি ডুবিয়ে স্ত্রীর হাতের রান্না করা দিশি মুরগির মাংস দিয়ে থালাভরা ভাত খাবেন। সে আর হল কই!

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝাড়গ্রামের গণনা কেন্দ্রে ফল ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই জয়োল্লাসে মেতে ওঠে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা। ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা গোপীবল্লভপুর কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী চূড়ামণিবাবুর জয়ের ব্যবধান গত বারের থেকেও বেড়েছে। ফলে, চূড়ামণিবাবুর বারণ শুনতে রাজি হননি কর্মীরা। আত্মহারা কর্মীদের দাবি মেনে নিজের বিধানসভা এলাকার ভোটারদের সঙ্গে দেখা করতে একাধিক গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন চূড়ামণিবাবু।

বন দফতর সূত্রের খবর, বুধবার রাতে গোটা তিরিশ হাতির দলটি খড়্গপুরের কলাইকুণ্ডার দিক থেকে ঝাড়গ্রাম বন বিভাগের মানিকপাড়া রেঞ্জের বালিয়া-গোলবাঁধির জঙ্গলে ঢুকে পড়ে। বৃহস্পতিবার সন্ধে নামতেই বালিয়া-গোলবাঁধির জঙ্গল থেকে বেরিয়ে হাতিগুলি বামুনমারা এলাকায় ঢোকে। এরপর বলদডুবা গ্রাম লাগোয়া একটি পুকুরে নেমে পড়ে হাতিগুলি। শুকনো পুকুরটিতে কয়েকদিনের বৃষ্টিতে কিছুটা জল জমেছিল। সমস্ত জল খেয়ে পুকুরটাকে খালি করে দেয় হাতিরা।

ওই সময় ভোটারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে নিজের গ্রাম আমলাচটিতে এসে পৌঁছন চূড়ামণিবাবু। কিন্তু ততক্ষণে হাতির পাল বলদডুবা থেকে আমলাচটির দিকে রওনা দেওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন চূড়ামণিবাবুর সঙ্গীরা। চূড়ামণিবাবু বলেন,“সঙ্গে অনেক জন কর্মী ছিলেন। হুড়মুড়িয়ে গ্রামের লাগোয়া জঙ্গলে একপাল হাতিকে আসতে দেখে সকলেই সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। ওখানে বেশিক্ষণ থাকলে অঘটন ঘটার আশঙ্কা ছিল। তাই জনসংযোগ-সফর সংক্ষিপ্ত করে কর্মীদের নিয়ে লোধাশুলিতে ফিরে আসি।”

দলের কাজের জন্য বেশির ভাগ সময় চূড়ামণিবাবু লোধাশুলির একটি অতিথিশালায় থাকেন। বৃহস্পতিবার রাতে আনন্দ-সফর কাটছাঁট করে লোধাশুলিতে ফিরে যান তিনি। লোধাশুলির অতিথিশালায় রাত কাটিয়ে শুক্রবার সকালে কালীঘাটে নেত্রীর বাড়িতে দলীয় বৈঠকে যোগ দিতে যান। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চূড়ামণিবাবুর সঙ্গে ছিলেন বলদডুবা গ্রামের পবন মাহাতো, দিলীপ মাহাতোরা। পেশায় ঝাড়গ্রামের একটি মোটর গ্যারাজের কর্মী দিলীপবাবু বলেন, “এলাকার অনেক গ্রাম ঘুরে আমরা আমলাচটি গ্রামে পৌঁছই। আমি তাসা বাজাচ্ছিলাম। কিন্তু হাতির দলটা লোকালয়ের কাছাকাছি চলে আসায় সকলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। সেই জন্য আমরা চণ্ডীপুর, লবকুশ, কামারবাঁধি ও শিরষি হয়ে লোধাশুলিতে ফিরে যাই।”

চূড়ামণিবাবুর ছেলে উজ্জ্বল মাহাতো কলেজ পড়ুয়া। উজ্জ্বল বলেন, “বাবার বিপুল জয় উপলক্ষে অনেকদিন পরে সবাই একসঙ্গে বাড়িতে সময় কাটাব ভেবেছিলাম, সেটা হল না।” চূড়ামণিবাবুর স্ত্রী ছবিরানিদেবী বলেন, “দলের কাজের জন্য উনি বেশির ভাগ দিন বাইরে থাকেন। আশা ছিল, বিশেষ দিনটিতে বাড়িতে সবার সঙ্গে জয়-উদ্‌যাপন করবেন। হাতিদের জন্য সেটা আর হল না।” চূড়ামণিবাবুরও আক্ষেপ, “বিশেষ দিনটিতে বাড়িতে থাকতে না পেরে আমারও খারাপ লাগছে।”

হুলাপার্টি ও এলাকাবাসীর তাড়া খেয়ে হাতির দলটি মধ্যরাতে নলবোনা ও নোয়াগড়ের জঙ্গলে ঢুকে পড়ে। হাতির হানায় এলাকার বিভিন্ন গ্রামে বেশ কিছু বাড়িঘর ভেঙেছে। শুক্রবার সন্ধে হতেই ফের হাতির দলটি জঙ্গল থেকে বেরিয়ে পড়েছে। মানিকপাড়ার ফরেস্ট রেঞ্জ অফিসার বিজনকুমার নাথ বলেন, “হাতির পালটিকে নিরাপদে দলমার রুটে ফেরানোর
চেষ্টা হচ্ছে।” ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

Amlachoti Jhargram Elephants success party TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy