Advertisement
E-Paper

পরিবেশেও অশনি সঙ্কেত

খাদান নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সতর্কবার্তার পর শুরু হয়েছে তৎপরতা। প্রশাসনের সক্রিয়তায় কি বদলাতে পারে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ? আইনের ফাঁক গলে কীভাবে চলছে বেআইনি খাদান। কী প্রভাব পড়ছে পরিবেশে? খোঁজ নিল আনন্দবাজার। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, যে হারে খাদান কেটে বালি বা মোরাম-বোল্ডার তোলা হচ্ছে তাতে প্রকৃতি, পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এমনকি, অদূর ভবিষ্যতে ক্ষতি হতে পারে কৃষিরও।

রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৩৬
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

শুধু রাজস্ব ক্ষতিই নয়। খাদান দিচ্ছে অশনি সঙ্কেতও।

বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, যে হারে খাদান কেটে বালি বা মোরাম-বোল্ডার তোলা হচ্ছে তাতে প্রকৃতি, পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এমনকি, অদূর ভবিষ্যতে ক্ষতি হতে পারে কৃষিরও।

আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তার প্রমাণ লাউমারা, রঘুনাথপুর-সহ গড়বেতার বেশ কয়েকটি মৌজা। কয়েকবছর আগেই শিলাবতী থেকে যথেচ্ছভাবে বালি তোলার ফলে নদী তীরবর্তী সন্ধিপুর অঞ্চলের এই মৌজাগুলির বহু কৃষিজমি নদীগর্ভে চলে গিয়েছে বলে অভিযোগ। এমনকি, পাট্টার জমিও ভেসে গিয়েছে নদীতে। কয়েকবছর আগে মেদিনীপুর শহরের কাছে অ্যানিকেত বাঁধ ভেঙে পড়েছিল নদী থেকে যথেচ্ছ বালি তোলার ফলে। ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল নদীর চর। এতে পাশাপাশি ৭টি ব্লকে কৃষিতে সেচের জলের সমস্যা দেখা দিয়েছিল। প্রভাব পড়েছিল মেদিনীপুর শহরেও। পরে অবশ্য নতুন বাঁধ তৈরি হয়। শুধু বালির ক্ষেত্রেই নয়, খাদান কেটে মোরাম-বোল্ডার তোলাতেও তৈরি হচ্ছে ভূমিক্ষয়। আমূল পরিবর্তন হচ্ছে জমির চরিত্রের।

বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের অধ্যাপক আশিস পাল বলেন, ‘‘নদী থেকে যথেচ্ছভাবে বালি তোলা হলে নদী ভাঙন দেখা দিতে পারে। নদীর গতিপথ বদলাতে পারে। বাস্তুতন্ত্রেও প্রভাব পড়ে। আবার ব্যাপকহারে মোরাম-বোল্ডার তুললেও ভূমিক্ষয় হয়। বড়বড় গর্ত হয়, কৃষিকাজ বা নির্মাণকাজ করাই যায় না।’’ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ভূমিরূপের বিবর্তন নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করা গবেষক শুভেন্দু ঘোষ বলেন, ‘‘নদীবক্ষ থেকে যত্রতত্র বালি তুললে নদীর পার্শ্বক্ষয় তো ত্বরান্বিত হবেই, সেইসঙ্গে নদীর তলদেশ এবড়োখেবড়ো হয়ে পুল-রিফিল টোপোগ্রাফির ভারসাম্য হারায়। ফলে অনেকসময় নদীর জলপ্রবাহ অসমান হয়, যা দুর্ঘটনা ঘটায় মাঝেমধ্যেই। তাছাড়া নদীর তলদেশের রিভারবেড অবদমিত হলে দেখা দিতে পারে জলসঙ্কট।’’ প্রখ্যাত নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র অবশ্য বালি তোলার ক্ষেত্রে নদীর গতিপথের পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা তেমন দেখছেন না। তিনি বলেন, ‘‘নদীপথ বদলানোর কথা নয়। তবে পাড়ের কাছ থেকে বালি তুললে পাড় ভেঙে পড়তে পারে।’’ জেলার এক ভূমিকর্তার স্বীকারোক্তি, ‘‘খাদানের বাড়বাড়ন্তে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য।’’

খাদানের বাড়বাড়ন্তে কী ভাবে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশে ভারসাম্য? বিশেষজ্ঞদের মতে, যে হারে নদী থেকে বালি তোলা বাড়ছে, তাতে বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি হচ্ছে। শিলাবতী, কংসাবতী, সূবর্ণরেখা সহ জেলার যেসব নদী থেকে বালি তোলা হচ্ছে সেই সব এলাকায় জলজ উদ্ভিদ, ব্যাকটেরিয়া, পোকামাকড় সহ জলজ প্রাণী, কার্যত নির্মূল হয়ে যাচ্ছে। এতে নষ্ট হচ্ছে নদী তীরবর্তী জমির উর্বরতা। ভূমি সংস্কার দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বড়বড় খাদান করার ফলে সেই জমিতো নষ্ট হচ্ছেই, সেইসঙ্গে জমি পার্শ্ববর্তী এলাকার উপর দিয়ে বহন ক্ষমতার বেশি গাড়ি যাতায়াতে ধ্বংস হচ্ছে রাস্তাঘাট। দুর্বল হয়ে পড়ছে ভূমিস্তর।’’

কী বলছে প্রশাসন? পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) উত্তম অধিকারী বলেন, ‘‘কীভাবে আরও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ম্যানুয়েলে এই কাজ করা যায় তা দেখছি। তাছাড়া স্যাকশন মেশিন, মাটি কাটার যন্ত্র ব্যবহার করে অবৈজ্ঞানিক উপায়ে এই কাজ করলে অর্ডার বন্ধ করে দিয়েছি। তাছাড়া এইসব ক্ষেত্র থেকে যা আসে তার ২ শতাংশ অর্থ জেলা মিনারেলস তহবিলে জমা হয়। যা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় রাস্তাঘাট, পরিবেশ রক্ষার্থে বা গাছ লাগানোর কাজে ব্যবহার করা হয়।’’

রাজস্ব ক্ষতির সঙ্গে খাদান দিচ্ছে অশনি সঙ্কেতও।

(তথ্য সহায়তা: বরুণ দে, অভিজিৎ চক্রবর্তী)

Environment Illegal Mining Sand Bolder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy