বাজারের অবৈধ নির্মাণ উচ্ছেদে গিয়ে ব্যবসায়ীদের ক্ষোভের মুখে পড়ল রেল। মঙ্গলবার খড়্গপুরে গেটবাজারের বোম্বে সিনেমা হল সংলগ্ন যাবতীয় বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে অভিযান শুরু করেছিল রেলের ওয়ার্কস বিভাগ। রাস্তার ধারের সেই জবরদখল সরাতে গেলে ব্যবসায়ীরা তেতে ওঠেন। বিক্ষোভের মুখে পড়েন রেল আধিকারিকেরা। তবে পিছু না হটে একের পর এক দোকান ভাঙা শুরু হয়। তখন অশান্তি বাধে। জমি নির্ধারণ করে উচ্ছেদ অভিযান চালানোর দাবি জানান ব্যবসায়ীরা। বন্ধ হয়ে যায় উচ্ছেদ অভিযান। তবে ফের অভিযান চলবে বলেই জানিয়েছে রেল।
এক সময় গোলবাজারের পাশাপাশি শহরের পশ্চিম ঘেঁষা রেল কলোনি এলাকায় একটি বাজার গড়ে তোলে রেল। রেল ওয়ার্কশপ ও গিরি ময়দান রেলগেট সংলগ্ন এই বাজারই হল গেটবাজার। ক্রমে বাজারে রেলের লাইসেন্সপ্রাপ্ত দোকানের সংখ্যার সঙ্গে বাড়তে শুরু করে ঝুপড়ি দোকান। এখন এই বাজারে বৈধ দোকানের থেকেও রেলের জমিতে মাথা তোলা বেআইনি দোকানের সংখ্যা বেশি। সম্প্রতি বাজারের রাস্তাঘাটের উন্নয়নে উদ্যোগী হয়েছে রেল। ঠিক হয়েছে, গেটবাজারের রাস্তা সম্প্রসারণের পাশাপাশি নিকাশি নালার সংস্কার করা হবে। কিন্তু সেই কাজে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাস্তার ধারের জবরদখল। ঝুপড়ি দোকান ছাড়াও বৈধ দোকানের ছাউনি রাস্তা পর্যন্ত উঠে আসায় সমস্যা আরও বেড়েছে। তাই উচ্ছেদ অভিযানের সিদ্ধান্ত।
মাস খানেক আগেই এ ব্যাপারে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল রেল। পরে দোকানিদের বাধায় সাময়িক পিছু হটেছিল রেল। তবে দিন তিনেক আগে ফের বিজ্ঞপ্তি জারি করে এ দিন বাজারে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। ব্যবসায়ীদের দাবি, নিকাশি নালা ও রাস্তার জন্য রেল যেটুকু জায়গা চাইছে তা ছেড়ে দিতে জমি নির্ধারণ করে শুধুমাত্র সেই অংশে দোকান উচ্ছেদ করা হোক। কিন্তু তা না করে বিশাল এলাকা জুড়ে যে ভাবে দোকানপাট ভাঙচুর করা হচ্ছে, তাতে দোকানিরা বিপাকে পড়বেন।
উচ্ছেদের মুখে পড়া জামাকাপড়ের দোকান মালিক মোহন দাস বলেন, “এই দোকানের ভরসাতেই সংসার চালাচ্ছি। এ ভাবে উচ্ছেদ করলে খাব কী! রেলের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে উচ্ছেদ চালানো উচিত ছিল।’’ আর এক দোকানি সুরেশচন্দ্র দ্বিবেদী আবার বলেন, “রাস্তা ও নালার জন্য ২০ ফুট জমি লাগবে রেলের। কিন্তু রেল ৫০ ফুট এলাকা জুড়ে উচ্ছেদ করছে। আমরা চাইছি প্রয়োজনীয় জমি নির্ধারণ করে তবেই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হোক। সেই সঙ্গে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হোক।’’ ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর পূজা নায়ডুও। আর বাজার কমিটির তরফে ওমপ্রকাশ সিংহ বলেন, “যেখানে বাজারে বৈধ দোকানেও বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পারে না রেল, সেখানে এ ভাবে উচ্ছেদ অভিযান চালানো ঠিক নয়।’’
রেল অবশ্য নিজেদের অবস্থানে অনড়। এ দিন কাজ বন্ধ হয়ে গেলেও পরে ফের উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। রেলের ওয়ার্কস বিভাগের আধিকারিক (নর্থ-ওয়েস্ট) এ কে ভৌমিক বলেন, “রাস্তা ও নিকাশি নালা তৈরির জন্য রেলের জমি খালি করার নির্দেশ এসেছে। সেই মতো আমরা কাজ করছি। অনেক দিন আগে নোটিস দিয়েছি। তাই উচ্ছেদ অভিযান চলবে।”যদিও এখনই পুনর্বাসন নিয়ে কোনও ভাবনা নেই বলেই রেল জানিয়েছে।