কাজে ব্যস্ত ঘাটালের একটি দোকানের কর্মীরা। ছবি: কৌশিক সাঁতরা।
ভোট এলেই আয়ের মুখ দেখেন তাঁরা। গরমাগরম স্লোগানে দেওয়াল ভরানো থেকে রকমারি ফেস্টুন- তাঁদের কাছেই ভিড় করেন রাজনীতিকরা। কাজের চাপে তাঁদের দম ফেলারও ফুরসত নেই। হাতে বেশি সময় না থাকায় অনেকে তাঁরা নতুন কাজের অর্ডার নেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছেন।
আগে ভোটের প্রচারে দেওয়ালেই মূলত চলত প্রচার যুদ্ধ। এখন দেওয়াল লিখনের জায়গা নিয়েছে রকমারি ফেস্টুন-ব্যানার। ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার আগে থেকেই অনেকে ফেস্টুনের অর্ডার দিয়ে রেখেছেন। চলছে জোরকদমে দেওয়াল লেখার কাজও। ঘাটালের কয়েকটি ভোটের প্রচার সরঞ্জামের দোকানে খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, ফেস্টুন থেকে ভোটের টুপির অর্ডার দেওয়ার নিরিখে শাসকদলের পাল্লাই ভারী।
শাসকদলের এক নেতার কথায়, দেওয়াল লেখার অনেক সমস্যা রয়েছে। সরকারি দেওয়ালে প্রচার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কারও বাড়ির দেওয়ালে লিখতে গেলেও বাড়ির মালিকের অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন। অনুমতি না নিয়ে বাড়ির দেওয়াল লিখলেই মামলা করার নিয়মও রয়েছে। তার চেয়ে বরং ফ্লেক্স-ফেস্টুন ব্যবহার করে প্রচার করা অনেক সহজ। সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির সদস্য গুরুপদ দত্তের মতে, “দেওয়াল লেখার খরচ ও ফ্লেক্স-ফেস্টুনের খরচ প্রায় একই। দেওয়াল লেখানোর শিল্পী পাওয়াও সমস্যাজনক।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের কিছু কর্মী দেওয়াল লিখতে পারে- তা বলে গোটা বিধানসভা এলাকায় দেওয়াল লিখতে গেলে তো কাউকে অবশ্যই প্রয়োজন। রং, তুলি থেকে একজন কারিগরকে নিয়ে একটি দেওয়াল লিখতেই এখন প্রায় আটশো টাকার মতো খরচ পড়ে যাচ্ছে। তাই দেওয়াল লেখার পাশাপাশি ফ্লেক্সের মাধ্যমে প্রচারেও আমরা জোর দিচ্ছি।”
তৃণমূলের ঘাটাল ব্লক সাধারণ সম্পাদক দিলীপ মাঝির মতে, “দেওয়াল লিখন ও ফ্লেক্স- দু’ভাবেই প্রচার চলছে। অনুমতি নিয়েই বাড়ির দেওয়ালে লেখা হচ্ছে।” প্রচারে এখন অনেকটাই পিছিয়ে গেরুয়া শিবির। দলের জেলা সভাপতি ধীমান কোলের বক্তব্য, “সবেমাত্র প্রচার সরঞ্জামের অর্ডার দেওয়া হয়েছে। দু’চারদিনের মধ্যেই জোর কদমে প্রচার শুরু হয়ে যাবে।”
ঘাটাল মহকুমার তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রে মোট ৯৬৫টি বুথ রয়েছে। প্রচার সরঞ্জামের জন্য প্রায় প্রতি বুথ থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরা ঘাটালের ফ্লেক্স-ব্যানারের দোকানগুলিতে ভিড় করছেন। ঘাটালের একটি ফ্লেক্স দোকানের মালিক তারক মাইতি বলেন, “এখন দিনভর কাজ হচ্ছে। রাতেও বিরতি নেই। আমরা সময় ভাগ করে একেক জন কাজ করছি। অন্য সময়ে দোকানে দু’জন কাজ করে। ভোটের সময় কর্মীদের সংখ্যাটা বেড়ে ৩০ জনে দাঁড়ায়।’’ তাপসবাবুর কথায়, “সব দলই ফেস্টুন-ব্যানারের অর্ডার দিয়েছে। অগ্রিম টাকাও দিয়ে দিচ্ছে। ফলে কাঁচামাল কিনতেও কোনও সমস্যা হচ্ছে না।” শহরের আর এক দোকানের ম্যানেজার সুবীর মণ্ডল বলছেন, “সব দল মিলিয়ে প্রায় কয়েক হাজার ফ্লেক্স ও ফেস্টুন ছাপা হয়ে গিয়েছে। এখনও প্রায় প্রতিদিনই নতুন অর্ডার আসছে। ৪০ জন মিলে কাজ করেও চাপ সামলানো যাচ্ছে না।’’ দম ফেরার সময় নেই দেওয়াল লিখন কারিগরদেরও। দাসপুরের বেলতলার অনুপ ভট্টাচার্য, ঘাটাল শহরের অনুপম খাঁড়ারা বলেন, “দিন-রাত এক করে কাজ করেও দেওয়াল লেখার কাজ শেষ করতে পারছি না। এই সময়ই তো একটু আয়ের মুখ দেখছি, তাই কষ্ট সামলে নিচ্ছি।’’ দেওয়াল লেখার কারিগরদের বুকিং শুরু হয়েছে গত মাসের শেষে।
ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন দামের ফ্লেক্স ও পতাকা রয়েছে। তিন ফুট লম্বা ও দু’ফুট চওড়া প্রতি পতাকার দাম ১৮ টাকা। ৭-১৬ টাকা বর্গফুট দরে বিকোচ্ছে ফ্লেক্সও। চন্দ্রকোনার এক ফ্লেক্স দোকানের মালিক নিতাই সামন্তের কথায়, “ফ্লেক্স ও পতাকা বিক্রি করে লাভ ভালই হয়। এখন ভোটের সময় যেহেতু অর্ডারের পরিমাণ বেশি, তাই বেশি লোক রেখে খরচ পুষিয়ে নেওয়া যাচ্ছে।’’ আর এক দোকানের মালিক অরুণ সরকার বলেন, “সারা বছরই কমবেশি কাজ হয়। তবে ভোটের সময় বেশি কাজ তো হয়ই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy