Advertisement
E-Paper

ভাটি কত, হিসেব নেই আবগারির

জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের মানছেন, ‘‘শান্তিপুরের ঘটনার পরে জানার চেষ্টা করেছিলাম, জেলায় কত ভাটি থাকতে পারে। যা জানলাম, এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা আর আকাশের তারা গোনা সমান!’’

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:০১

বিষমদে শান্তিপুরে ১২ জনের মৃত্যুতে নাড়া পড়েছে অন্য জেলাতেও। নড়ে বসে প্রশাসন। পশ্চিম মেদিনীপুরেও শুরু হয়েছে আবগারি অভিযান। আর তাতে যে পরিসংখ্যান সামনে এসেছে তাতে বোঝা যাচ্ছে এই জেলার বিভিন্ন প্রান্তও চোলাইয়ের আঁতুড়ঘর!

জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের মানছেন, ‘‘শান্তিপুরের ঘটনার পরে জানার চেষ্টা করেছিলাম, জেলায় কত ভাটি থাকতে পারে। যা জানলাম, এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা আর আকাশের তারা গোনা সমান!’’ জেলায় কত চোলাইয়ের ভাটি রয়েছে, তা অনুমান করা যেতে পারে প্রশাসনিক সূত্রের এক পরিসংখ্যানে। ওই সূত্র জানাচ্ছে, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে নভেম্বর, এই ৮ মাসে জেলার ৪,৮৭৭টি ভাটিতে হানা দেওয়া হয়েছে। মামলা দায়ের হয়েছে ২,৭৯১টি। গ্রেফতার করা হয়েছে ২৫৯ জনকে।

এর মধ্যে ১৮২ জনকে গ্রেফতার করেছে আবগারি দফতর, ৭৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওই সূত্র জানাচ্ছে, ধৃতদের মধ্যে ২১০ জন পুরুষ আর ৪৯ জন মহিলা। স্থানীয় সূত্রে খবর, এদের অনেকেই এখন জামিনেমুক্ত। ফের চোলাইয়ের কারবারও শুরু করেছে।

এ প্রসঙ্গে জেলাশাসক পি মোহনগাঁধী বলেন, ‘‘অভিযান হয়। আরও অভিযানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ জেলা আবগারি সুপারিন্টেনডেন্ট একলব্য চক্রবর্তীও মানছেন, ‘‘এখন জেলা জুড়েই অভিযান চলছে। চোলাই উদ্ধার হচ্ছে। মামলা হচ্ছে, গ্রেফতারও হচ্ছে।’’

আবগারি দফতর ও স্থানীয় সূত্রের খবর, জেলায় সব থেকে বেশি ভাটি রয়েছে গোয়ালতোড়, কেশিয়াড়ি, শালবনি, মেদিনীপুর গ্রামীণ, আনন্দপুরের মতো আদিবাসী এলাকায়। ঘাটাল, দাসপুর, দাঁতন, ডেবরা, সবং, পিংলায়ও ভাটি রয়েছে। ঘাটাল, দাসপুরে রীতিমতো চোলাইয়ের ব্যবসা ফেঁদেছেন অনেকে। প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, ঘাটালের মনসুখা, হরিশপুর, দণ্ডিপুর, হরিপালে এই কারবার চলে। দাসপুরের আড়িত, বেলতলা, চাঁদপুর, দুর্গাপুরে এই কারবার চলে। এক-এক এলাকায় ভাটি রয়েছে? এক আবগারি কর্মীর কথায়, ‘‘বলা কঠিন! গোয়ালতোড়েই ২০-২২টি ভাটি রয়েছে। মেদিনীপুর গ্রামীণে ১২-১৪টি ভাটি রয়েছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘দাঁতনের মালপাড়ার মতো এলাকার ছবিটা আবার অন্য। এখানে পুরো গ্রাম নয়। ৩-৪ জন এই কারবার করে।’’

তল্লাশি-অভিযান হয়, ভাটি ভাঙা হয়, চোলাই নষ্ট করা হয়। অবশ্য চোলাই তৈরির রোজনামচায় ছেদ পড়ে না। আবগারি দফতর সূত্রে খবর, জেলার ইতিউতি বেশ কিছু ‘ক্যারিয়ার’ রয়েছে। এদের হাত ধরেই চলাচল করে চোলাই। অভিযোগ, পুলিশের একাংশের সঙ্গে সমঝোতা করেই ব্যবসা চলে। কারবারিদের সঙ্গে আবগারির একাংশেরও যোগসাজশ থাকে। অনেক সময়ে অভিযানে যাওয়ার আগেই খবর পৌঁছে যায় কারবারিদের কাছে। তারা পালিয়ে যায়। অনেক সময় আবার অভিযানে গিয়ে বাধার মুখোমুখি হতে হয়। অভিযান বন্ধ রেখে পালিয়ে আসতে হয় আবগারি কর্মীদের। পাশের জেলা থেকেও বিষমদ আসে এই জেলায়। ঝাড়গ্রামের নয়াগ্রাম থেকে চোলাইয়ের ড্রাম নিয়ে সুবর্ণরেখা পেরোয় কিছু লোক। আসে এই জেলার কেশিয়াড়িতে। পরে সেখান থেকে বেলদা, নারায়ণগড়, দাঁতনে। সব মিলিয়ে যেন পশ্চিম মেদিনীপুরে চোলাইয়ের কারবার রমরমিয়ে চলে।

Hooch Shop Excise Department Information
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy