উল্টো-রথ: রথযাত্রার আগে প্রস্তুতি লালগড়ে। নিজস্ব চিত্র
এক সপ্তাহের মেলার ইতি পড়ল উল্টোরথে। লালগড়ের রথযাত্রা ঘিরে আবেগে ভাসলেন এলাকার বাসিন্দারা। আটদিন হাটচালায় মাসির বাড়িতে কাটিয়ে সোমবার উল্টোরথের সন্ধ্যায় লালগড়ের বাবুপাড়ায় শ্রীমন্দিরে ফিরলেন সপার্ষদ রাধামোহন।
এক সময় লালগড়ে ১৬ চাকার কাঠের রথে সপার্ষদ সওয়ার হতেন রাধামোহন জিউ ও শ্রীমতী। আর এখন রথযাত্রার দিনে ৮ চাকার লোহার ছোট রথে চড়েন লালগড় রাজপরিবারের গোপীনাথ জিউ, গোবিন্দ জিউ, তাঁদের দুই শ্রীমতী, সাক্ষীগোপাল, কৃষ্ণ-বলরাম, ধাম গৌরাঙ্গ ও জগন্নাথও। কেবলমাত্র রথযাত্রার সময় রাধামোহন, শ্রীমতী-সহ রাজপরিবারের বিগ্রহদের সোনার অলঙ্কারে সাজানো হয়।
সোমবার বিকেল থেকেই লালগড়ের বিভিন্ন এলাকার মানুষ হাটচালায় মাসির বাড়ি প্রাঙ্গণে জমায়েত হন। রথযাত্রার দিন থেকেই সেখানে মেলা বসেছিল। উল্টোরথে বিকেলে শেষবারের মতো জমে উঠল মেলা।
লালগড়ের তিনশো বছরের পুরনো রথযাত্রার জৌলুস অনেক আগেই ফিকে হয়ে গিয়েছে। গত আড়াই দশক ধরে রথযাত্রা পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন লালগড় রাজ পরিবারের সদস্য বছর পঞ্চাশের দর্পনারায়ণ সাহসরায়। লালগড় রাজ পরিবারের কুলদেবতা রাধামোহন জিউ মন্দিরের সেবাইতও তিনি। মন্দিরের দেবোত্তর জমির ভাগচাষের ধান থেকে বছরে কয়েক হাজার টাকা মেলে। রথের মেলার আয়োজন করে প্রায় ২০ হাজার টাকার মতো সংগ্রহ হয়। এই দিয়েই ভক্তির উপাচারে নমো নমো করে ফি-বছর রথযাত্রার আয়োজন করা হয়।
দর্পনারায়ণবাবুর আক্ষেপ, “জাঁকজমক অনেক দূরের কথা, নিয়ম রক্ষার বার্ষিক উৎসব ও আচার-অনুষ্ঠান করতে গিয়ে ঢাকের দায়ে মনসা বিক্রির মতো অবস্থা। পুর্বপুরুষের ঐতিহ্য-পরম্পরা কতদিন এ ভাবে টানতে পারব জানি না।”
স্থানীয় লোক-সংস্কৃতি গবেষক পঙ্কজকুমার মণ্ডলের কথায়, “লালগড়ের রথযাত্রার উৎসবকে হেরিটেজ উৎসব বলা চলে। এমন একটি উৎসবকে সরকারি ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হলে ভাল হয়।” ঝাড়গ্রামের একটি পর্যটন সংস্থার কর্তা সুমিত দত্ত-ও বলছেন, ‘‘এ বছরই আমরা রথ কেন্দ্রিক প্যাকেজ ট্যুর চালু করেছি। সরকারি স্তরে লালগড়ের রথ সম্পর্কে প্রচার হলে আগামী দিনে আরও বহু মানুষ এখানে আসবেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy