E-Paper

ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থা ফের সক্রিয়, প্রতারণার নালিশ

আবার অনেকে অভিযোগ করছেন, ওই সব সংস্থা থেকে যাঁরা ধার হিসেবে টাকা নিয়েছেন, তাঁদের থেকে সুদ হিসেবে অতিরিক্ত টাকা চাওয়া হয়। পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে নানা ভাবে হেনস্থা করা হয়।

কেশব মান্না

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২৫ ০৮:৪৩
এই ধরনের কাগজ দেওয়া হয় গ্রাহকদের।

এই ধরনের কাগজ দেওয়া হয় গ্রাহকদের। নিজস্ব চিত্র ।

সারদা বা রোজ়ভ্যালির মতো ভুঁইফোড় অর্থ লগ্নি সংস্থায় সর্বস্বান্ত হয়েছিলেন বহু মানুষ। পূর্ব মেদিনীপুরের অনেক বাসিন্দাও তাঁদের মধ্যে ছিলেন। কিন্তু এরই পরেও জেলার বিভিন্ন প্রান্তে এখনও কোথাও ‘মা জগদ্ধাত্রী’, আবার কোথাও ‘মা মনসা’ কিংবা ‘নীল সরস্বতী’ নামে বেআইনি স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প সংস্থা চালু করে প্রতারণা চক্র সক্রিয় বলে অভিযোগ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েও সুরাহা মিলছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

ভাজাচাউলি গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর কৌশল্যা গ্রামে এ রকমই একটা সংস্থার বিরুদ্ধে মারিশদা থানায় প্রতারণার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন এলাকার এক বাসিন্দা। তাঁর কথায়, ‘‘নীল সরস্বতী নামে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে অর্থ জমা করেছিলাম। কিন্তু পাঁচ বছর পরেও সেই টাকা ফেরত পাচ্ছি না।’’ অভিযুক্ত সংস্থার কর্মকর্তারা এখন ধরাছোঁয়ার বাইরে। আবার অনেকে অভিযোগ করছেন, ওই সব সংস্থা থেকে যাঁরা ধার হিসেবে টাকা নিয়েছেন, তাঁদের থেকে সুদ হিসেবে অতিরিক্ত টাকা চাওয়া হয়। পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে নানা ভাবে হেনস্থা করা হয়।

নিজনাড়ুয়া গ্রামের এক বাসিন্দা অভিযোগ করেন, ‘‘৮০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। অর্ধেক টাকা পরিশোধ করি। তারপরেও বলা হচ্ছে, আরও ৮০ হাজার টাকা দিতে হবে। ওই সংস্থার লোকেদের কথা না শোনায় আমাকে এবং আমার স্ত্রীকে মারধর করা হচ্ছে।’’ এ বিষয়ে তিনি ভূপতিনগর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। একের পর এক এ ধরনের ঘটনা বাড়ায় বেআইনি আর্থিক লেনদেন বন্ধ করতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা শাসক এবং পুলিশ সুপারের কাছে ডাকযোগে লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছেন। কাঁথির মহকুমা শাসক প্রতিক অশোক ধূমাল বলেন, "সংশ্লিষ্ট এলাকার থানার দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে কথা বলব, যাতে কোনও ভাবে কোনও বেআইনি আর্থিক লেনদেন না চলে।’’

স্থানীয় সূত্রের খবর, ভগবানপুর -২ ব্লকের অর্জুন নগর এবং কাঁথি -৩ ব্লকের ভাজাচাউলি এলাকায় দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে স্থানীয় কয়েকটি ক্লাবের মাধ্যমে এই ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থাগুলি বেআইনি আর্থিক কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। নিজ নাড়ুয়া, চিংড়া, হাটুরিয়া, উত্তর কৌশল্যার মতো প্রত্যন্ত গ্রামে এই কারবার চলছে বলে অভিযোগ।

কী ভাবে চলে এই কারবার? স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, বাজার থেকে প্রতিমাসে রেকারিং ডিপোজিট হিসেবে আমানত সংগ্রহ করে স্থানীয় কিছু ক্লাব এবং কয়েকটা সমিতি। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, পাঁচ বছরে দ্বিগুণ অর্থ ফেরত দেওয়া হবে। কিন্তু কোনও নথিপত্র দেওয়া হয় না। গ্রামীণ এলাকার মানুষদের আকৃষ্ট করতে শনি দেব থেকে মা জগদ্ধাত্রী, মনসা কিংবা নীল সরস্বতীর মতো দেব-দেবীর নামে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প তৈরি করা হয়। অভিযোগ, সংস্থাগুলিতে অর্থ জমা দেওয়ার পরেও সঠিক সময়ে টাকা ফেরত পাচ্ছে না উপভোক্তারা।

এ ভাবে মানুষকে প্রতারিত করার ঘটনার জন্য তৃণমূলকে দায়ী করেছে বিরোধীরা। বিজেপির উত্তর কাঁথি বিধানসভার-৩ নম্বর মণ্ডলের সভাপতি বিপুলেশ ধাড়া বলেন, ‘‘ক্লাবের মাথায় তৃণমূলের লোকেরাই আছেন। তাঁরা প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থেকে দীর্ঘদিন ধরে গ্রামের মানুষের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করছেন। অনেকেই প্রতারিত হচ্ছেন।’’ অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মানব পড়ুয়া বলেন, ‘‘দু-একটি ক্লাব এ ধরনের আর্থিক কারবার করে বলে শুনেছি। তবে এতে দলের কোনও সম্পর্ক নেই।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

midnapore

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy