অগ্নি-যুদ্ধ: আগুন নেভাতে ব্যস্ত দমকল কর্মীরা। দাসপুরের খুকুরদহে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা
লাইসেন্স নেওয়ার বালাই নেই। প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘাটাল-পাঁশকুড়া সড়কের ধারে রমরমিয়ে চলত পেট্রলের দোকান, হোটেল, অবৈধ মদের কারবারও। বুধবার দুপুরে আচনকা আগুন লেগে দাসপুরের খুকুরদহে ভস্মীভূত হয়ে গেল পেট্রলের দোকান। পুড়ে ছাই হয়ে যায় একটি ট্যুরিস্ট অফিস, হোটেলও।
বুধবার বেলা দেড়টা নাগাদ খুকুড়দহের ওই হোটেল ঘেঁষা পেট্রল দোকানে হটাৎ আগুন লেগে যায়। মুহূর্তের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে যায় হোটেল ও সংলগ্ন এক ট্যুরিস্ট অফিসে। দুপুর হোটেলে তখন অনেকেই খাওয়া-দাওয়া করছিলেন। অভিযোগ, পাশেই বসেছিল মদের আসরও।
সঙ্গে সঙ্গেই খাবার ফেলে হোটেল থেকে সকলে বেরিয়ে পড়েন। বেরিয়া আসেন পেট্রল দোকানের কর্মীরাও। পেট্রল দোকানটিতে একাধিক প্লাস্টিকের ব্যারেল ভর্তি পেট্রল ছিল। আগুনে সেগুলি পরপর বিকট শব্দে ফেটে যায়। আগুন ও ধোঁয়া দেখে জড়ো হয়ে যায় স্থানীয়রা। প্রথম দিকে স্থানীয়রাই পাশের পুকুর থেকে জল নিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। খবর পেয়ে ঘাটাল থেকে দমকলের দু’টি ইঞ্জিন পৌঁছে যায়। ঘণ্টাখানেক পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
ঘাটাল-পাঁশকুড়া রাস্তার ধারের হোটেলটি আশিস প্রামাণিক নামে এক ব্যাক্তির। আশিসবাবুর ঘর ভাড়া নিয়েই স্বপন মাইতি নামে এক যুবক পেট্রল-ডিজেল ব্যবসা করছিলেন। পাশের একটি ঘরে ছিল ট্যুরিস্ট অফিস। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, হোটেলের নামে দোকানে রমরমিয়ে মদের ব্যবসা চলত। দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যেই চলছিল মদ বিক্রি। বসে খাওয়ার ব্যবস্থাও ছিল। ফলে সকাল-সন্ধ্যায় সব সময় ভিড় লেগেই থাকত।
অভিযোগ, পুলিশ-প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদতেই চলত এই অবৈধ মদের ব্যবসা। মদ বিক্রির লাইসেন্স দূর, ট্রেড লাইসেন্সও ছিল না। শুধু হোটেল নয়, রমরমিয়ে বিনা লাইসেন্সেই পেট্রলের মত দাহ্য পদার্থও বিক্রি হত। এমনিতেই বিনা লাইসেন্সে পেট্রল-ডিজেল বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অভিযোগ, রাজ্য সড়কের একেবারে পাশে দিনের পর দিন পেট্রল বিক্রি হলেও পুলিশ-প্রশাসন নীরব দর্শক। এমনকী বুধবারের ঘটনার পরেও হোটেল মালিক ও পেট্রল মালিক প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি।
হোটেল মালিক আশিস প্রামাণিক বলেন, “আমার ঘরেই পেট্রলের দোকান ও একটি ট্যুরিস্ট অফিস ছিল। আগুনে সব পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে।” লাইসেন্সের প্রসঙ্গ উঠতেই আশিসবাবুর সোজাসাপ্টা জবাব, “লাইন হোটেলে মদ বেচার জন্য লাইসেন্সের দরকার হয় না।” পেট্রল দোকানের মালিক স্বপন মাইতিও জানালেন, “এমন ভাবেই তো ব্যবসা করছি। লাইসেন্স থাকতে হবে কেউ কোনও দিন বলেনি।”
প্রাথমিক তদন্তে দমকলের অনুমান, পেট্রলের দোকান থেকেই আগুন ছড়িয়েছে। সিগারেটের আগুন থেকেই ঘটনাটি ঘটেছে।
ঘাটালের মহকুমা শাসক পিনাকিরঞ্জন প্রধান বলেন, “লাইসেন্স ছাড়াই পেট্রল-ডিজেল বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। পুলিশকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছি।”
পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, “নির্দিষ্ট মামলার ভিত্তিতেই ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দমকল দফতরের এক কর্তা জানান, “এখনই হোটেল ও পেট্রল দোকানের মালিককে গ্রেফতার করা উচিত। দোকানগুলিতে বেআইনি কারবার চলত।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy