পেনশনের টাকা তুলে স্বস্তি নেই! সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে।
আমি ও আমার স্ত্রী দীপ্তি সরকার দু’জনই অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক। আমাদের দুই ছেলে কর্মসূত্রে বাইরে থাকে। তাই বাজার করা থেকে সংসারের যাবতীয় কাজ আমাদেরই করতে হয়। এতদিন সে ভাবে কোনও সমস্যা হয়নি। পুরনো ৫০০-১০০০ টাকার নোট বাতিলের পর থেকেই টের পাচ্ছিলাম মাসের প্রথমে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। হলও তাই।
নতুন মাস পড়ে গেলেও অধিকাংশ এটিএমের ঝাঁপ বন্ধ। ব্যাঙ্কেও টাকা নেই। নতুন ৫০০ টাকার নোটও এখনও পাওয়া যাচ্ছে না। গত ২ ডিসেম্বর স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ায় টাকা তোলার জন্য লাইনে দাঁড়ালাম। ক্যাশ কাউন্টারে পোঁছতেই ব্যাঙ্ক কর্মী জানিয়ে দিলেন, ১০০ টাকার নোট বাড়ন্ত। ২০০০ টাকার নোটই নিতে হবে। বাধ্য হয়ে তাই নিয়ে নিলাম।
এরপরেই আসল সমস্যার শুরু। যে দোকানেই যাচ্ছি, সেখানেই খুচরোর আকাল। বাজারে মাছ কিনে দু’হাজার টাকার নোট দিতেই মাছ বিক্রেতা বলে দিলেন, স্যার টাকা না হয় পরে দিয়ে দেবেন। না হলে টাকা জমা রাখুন। মাছের দোকানে বাধ্য হয়ে দু’হাজার জমা রেখেছি।
কিন্তু কাজের মেয়ের টাকা, দুধের টাকা, ফল দোকানের টাকা, বাড়ি পরিষ্কারের জন্য সুইপারের টাকা, মুদি দোকানের টাকা— সবই তো বাকি। এখন নিয়ম করে সকাল-বিকালে হাঁটতে গেলে পকেটে দু’হাজার টাকার নোট নিয়ে যাই। পরিচিত বন্ধু-বান্ধব বা কোনও দোকানে গিয়ে খুচরোর কথা বললে সবাই মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছেন। আর তাঁরাও কী-ই বা করবেন। খুচরোর আকাল তো সবর্ত্রই।
আমার মনে হয়, শুধু আমার নয় অধিকাংশ প্রবীণ মানুষেরই এই একই সমস্যা। খারাপ লাগছে একটা জায়গায়, এখনও বাড়ির রান্নার লোক, কাজের মাসিদের টাকা দিতে পারিনি। আমাদের সমস্যার কথা বুঝে তাঁরা কিছপ বলছেন না ঠিকই। কিন্তু তাঁদেরও তো সংসার রয়েছে।
শুক্রবার এক প্রাক্তন ছাত্র ২০০০ টাকার নোট ভাঙিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তা তো নিমেষে খরচ হয়ে গিয়েছে। খুচরোর আতঙ্কে এখন বাজারে যাওয়াও ভুলে গিয়েছি। আমি মিষ্টি খেতে ভালবাসি। এ মাসে বাড়িতে মিষ্টিও ঢোকেনি। এককথায় টাকা আছে, আবার নেইও। তাই দুশ্চিন্তা নিত্যসঙ্গী। খুচরোর আকাল কবে মিটবে কে জানে। (লেখক ঘাটালের বাসিন্দা প্রাক্তন কলেজ শিক্ষক)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy