Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

চোখে ধুলো দিতে নেশা নিবারণ কেন্দ্রে

তদন্তকারীর কথায়, ‘‘গা- ঢাকা দিতে বা অভিযোগ থেকে রেহাই পেতে অনেক দুষ্কৃতী অনেক রকম উপায় বের করে। রবি সেরকমই এক উপায় বের করেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সেটা কাজে লাগেনি।’’   

মেদিনীপুর আদালতে আনা হচ্ছে অভিযুক্তদের। ফাইল চিত্র

মেদিনীপুর আদালতে আনা হচ্ছে অভিযুক্তদের। ফাইল চিত্র

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৯ ০০:৩৭
Share: Save:

পুলিশের চোখে ধুলো দিতে নেশা নিবারণ কেন্দ্রে ‘ব্যাক ডেটে’ ভর্তি হতে চেয়েছিল অভিযুক্ত এক দুষ্কৃতী। আদিবাসী যুবতীকে গণধর্ষণের তদন্তে নেমে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য এসেছে তদন্তকারীদের হাতে। সেই কথা মেনে নিয়ে পুলিশের কছে ধৃতের দাবি, ধর্ষণের অভিযোগ থেকে রেহাই পেতেই এই উপায় বের করেছিল সে।সোমবার সকালে মেদিনীপুরের নবীনাবাগের কাছ থেকে বিবস্ত্র অবস্থায় বছর একুশের ওই যুবতীকে উদ্ধার করা হয়। পেশায় পরিচালিকা ওই যুবতীকে গণধর্ষণের ঘটনায় পুলিশ ইতিমধ্যেই তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম রবি দাস ওরফে ছোটু, শেখ আজিমোশান আলি ওরফে বাবাই এবং অর্জুন দাস। তারা এখন পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। এদের মধ্যে দু’জনকে সোমবার রাতেই ধরেছিল পুলিশ। মঙ্গলবার বিকেলে অর্জুনকে গ্রেফতার করা হয়। এই মামলার সরকারি আইনজীবী গৌতম মল্লিক বলেন, ‘‘জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে। তাই ধৃতদের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।’’

পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের বাড়ি নবীনাবাগের আশেপাশে। রবির বাড়ি মীরবাজারে বিমলাপুকুর পাড়ে। আজিমোশানের বাড়ি ধর্মা ক্যানেল পাড়ে। আর অর্জুনের বাড়ি নবীনাবাগেই। এদের মধ্যে রবি নেশা নিবারণ কেন্দ্রে ভর্তি হতে চেয়েছিল। ঘটনার পরের দিন অর্থাৎ, সোমবার সকালে রবি মেদিনীপুরের এক নেশা নিবারণ কেন্দ্রে যায়।

তদন্তকারীদের জেরায় রবি জানিয়েছে, সে জানত যে কোনও সময়ে ধরা পড়ে যাবে। তাই এই উপায় বের করেছিল। কারণ পুলিশ ধরতে এলে সে দাবি করত, রবিবারের ঘটনার সঙ্গে সে কোনও ভাবেই যুক্ত থাকতে পারে না। কারণ, যে দিন ঘটনা ঘটেছে তার আগে থেকেই সে নেশা নিবারণ কেন্দ্রে ভর্তি রয়েছে। সেই জন্য রবি সোমবার নেশা নিবারণ কেন্দ্রে গিয়ে বলেছিল, সে আর নেশা করবে না। ভালভাবে থাকতে চায়। কিন্তু শর্ত একটাই। তাকে ‘ব্যাক ডেটে’ অর্থাৎ অন্তত দু’- তিন দিন আগের তারিখে ভর্তি নিতে হবে। তবেই সে ভর্তি হবে। এই কথা শুনে সন্দেহ হয়েছিল ওই নেশা নিবারণ কেন্দ্রের কর্মীদের। তাঁরা জানিয়ে দেন, এ ভাবে আগের তারিখে ভর্তি হওয়া যায় না। এক তদন্তকারীর কথায়, ‘‘গা- ঢাকা দিতে বা অভিযোগ থেকে রেহাই পেতে অনেক দুষ্কৃতী অনেক রকম উপায় বের করে। রবি সেরকমই এক উপায় বের করেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সেটা কাজে লাগেনি।’’

রবিবার সন্ধ্যা ৮টা থেকে রাত ২টো—এই ৬ ঘণ্টার মধ্যে ওই যুবতী তিন বার গণধর্ষণের শিকার হন বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। শুরুতে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় খয়েরুল্লাচকে। পরে ধর্মা, সেখান থেকে আনা হয় নবীনাবাগে। পুলিশের কাছে ওই যুবতী দাবি করেছে, ওই যুবকেরা তাঁকে দিঘা নিয়ে যেতে চেয়েছিল। ধৃতদের মধ্যে অর্জুন ওই যুবতীর পরিচিত বলে তিনি জানিয়েছেন। তবে ওই যুবতী জানতেন, অর্জুনের পদবি রায়। পুলিশকে তিনি তাই জানিয়েছিলেন। তবে পুলিশ পরে জানতে পারে, অর্জুনের আসল পদবি রায় নয়, দাস।

গণধর্ষণের ঘটনায় কি এই তিনজনই যুক্ত? না কি আরও কেউ যুক্ত রয়েছে? জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘তদন্তে এটাও দেখা হচ্ছে।’’ তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, আরও এক যুবক এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। তারও বাড়ি ধর্মায়। বুধবার ওই অভিযুক্তের এক আত্মীয়কে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Gangrape Midnapur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE