Advertisement
২৯ এপ্রিল ২০২৪

অর্থ বরাদ্দ সত্ত্বেও গরিব-গৃহ অসম্পূর্ণই

সরকারি হিসাবে নিয়ম করে প্রতি বছর স্থির করা হয় লক্ষ্যমাত্রা, বরাদ্দ হয় অর্থও। তবু মানুষগুলোর মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। কারও বাড়ির দেওয়াল গাঁথা হচ্ছে তো কারও চালের ছাউনি বসান হয়েছে মাত্র। গ্রামীণ এলাকায় দারিদ্র সীমার নীচে বসবাসকারী পরিবার গুলির জন্য ইন্দিরা আবাস যোজনায় পাকা বাড়ি তৈরির সংস্থান রয়েছে। হিসেব বলছে গত তিনটি আর্থিক বছরে বাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদ। শুধু তাই নয় সাফল্যের হার কমছে প্রতি বছর।

আনন্দ মণ্ডল
তমলুক শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৫ ০০:৫৮
Share: Save:

সরকারি হিসাবে নিয়ম করে প্রতি বছর স্থির করা হয় লক্ষ্যমাত্রা, বরাদ্দ হয় অর্থও। তবু মানুষগুলোর মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। কারও বাড়ির দেওয়াল গাঁথা হচ্ছে তো কারও চালের ছাউনি বসান হয়েছে মাত্র। গ্রামীণ এলাকায় দারিদ্র সীমার নীচে বসবাসকারী পরিবার গুলির জন্য ইন্দিরা আবাস যোজনায় পাকা বাড়ি তৈরির সংস্থান রয়েছে। হিসেব বলছে গত তিনটি আর্থিক বছরে বাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদ। শুধু তাই নয় সাফল্যের হার কমছে প্রতি বছর।

জেলা পরিষদ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে জেলায় বাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৭,০৩৯। কিন্তু এখনও পর্যন্ত মোট ১৩,৪৭৪ টি বাড়ি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। অর্থাত্‌ প্রায় সাড়ে তিন হাজার বাড়ি তৈরির কাজ নির্দিষ্ট সময়ের দু’বছর পরেও সম্পূর্ণ হয়নি। ওই বছর প্রতিটি বাড়ি তৈরির জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল ৪৫ হাজার টাকা। দু’টি কিস্তিতে টাকা দেওয়া হত। প্রথম কিস্তির টাকা দিয়ে বাড়ির অর্ধেক কাজ সম্পূর্ণ হলে শংসাপত্র জমা দিলে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পাওয়া যেত।

২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও পূরণ করা সম্ভব হয়নি। ওই বছর মোট ৯,৫৫৯ টি বাড়ি তৈরির কথা ছিল। সেই মতো বাড়ি পিছু বরাদ্দ করা হয়েছিল ৭০ হাজার টাকা। প্রথম কিস্তিতে ১৭,৫০০ টাকা, দ্বিতীয় কিস্তিতে ৪২ হাজার টাকা আর তৃতীয় কিস্তিতে ১০,৫০০ টাকা পাওয়ার কথা উপভোক্তার। কিন্তু এখনও পর্যন্ত মাত্র ৩ হাজার ৩৩২ টি বাড়ি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে শেষ কিস্তির টাকা পেয়েছেন আরও ৪,৯৮০ টি পরিবার।

সবচেয়ে খারাপ অবস্থা চলতি বছরে। ২০১৪-১৫ আর্থিক বছরে ইন্দিরা আবাস যোজনায় জেলায় মোট ২৩,২৫১ টি বাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়। আগের বছরের মতো ৭০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ থাকলেও মাটি কাটা ও ভরাট করার ৯০টি শ্রমদিবসের অর্থ (প্রতিটি শ্রমদিবস ১৬৯ টাকা করে) ও স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার তৈরির জন্য অতিরিক্ত ১০ হাজার টাকার সংস্থান করা হয়েছিল এ বছর।

এই আর্থিক বছর শেষ হতে মাত্র সপ্তাহ দুয়েক বাকি (৩১ মার্চ, ২০১৫)। এখনও পর্যন্ত জেলায় মাত্র ১৪৪৭ টি বাড়ি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। সম্প্রতি ১১,০৮২ পরিবারকে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা দেওয়া হয়েছে। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে এ বছর লক্ষ্যমাত্রার ধারে কাছে পৌঁছনোও সম্ভব নয়।

তবে দেরিতে হলেও নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলা শাসক (উন্নয়ন) অজয় পাল জানান ইন্দিরা আবাস যোজনায় উপকৃতদের বাড়ির তৈরির জন্য টাকা দেওয়ার পরেও যাঁরা কাজ করছে না তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ব্লক প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেসব পরিবার বাড়ি তৈরির অর্থ পেয়েও কাজ সম্পূর্ণ করেনি তাঁদের দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য সতর্ক করে চিঠে দেওয়া হয়েছে। এমনকী যেসব পরিবার অর্থ নিয়েও বাড়ি তৈরির কাজ করেনি তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে প্রশাসন।

অতিরিক্ত জেলাশাসকই বলেন, “২০১২-১৩, ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে পরিকল্পনা অনুযায়ী বাড়ি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। চলতি (২০১৪-১৫) আর্থিক বছরে বরাদ্দ ১৭৩ কোটি টাকার বেশিরভাগটাই বণ্টন হয়েছে। মাত্র ১১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা হাতে রয়েছে।”

কিন্তু ইন্দিরা আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির কাজে এই দীর্ঘসূত্রিতা কেন?

উপকৃত মানুষ বলছেন টাকা পেতে দেরি হওয়াতেই আটকে ছিল বাড়ি তৈরির কাজ। শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের বল্লুক ১ গ্রামপঞ্চায়েতের পাইকপাড়ী গ্রামে গিয়ে দেখা গেল সেই ছবিই। স্থানীয় বাসিন্দা ৭৫ বছরের বৃদ্ধা শাখাম্বরী মিশ্রের বাড়ি তৈরির জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়েছিল ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে। কিন্তু এখনও ইটের দেওয়ালের উপর লিল্টেনের ঢালাই। তার উপরেই ওই চালা তৈরির বাঁশের কাঠামো। বৃদ্ধার জামাই লালবিহারী সান্ধকি বলেন, “প্রথম কিস্তির ১৭,৫০০ টাকা দেওয়া হয়েছিল গত বছর মার্চ মাসে। তা দিয়ে জানালা অবধি দেওয়াল তৈরির কাজ করা হয়। দ্বিতীয় কিস্তির ৪২ হাজার টাকা পাওয়া গেল নভেম্বরে। তাতেই দেরি।”

ওই গ্রামেরই বাসিন্দা নিরঞ্জন মাইতির জন্য টাকা বরাদ্দ হয়েছিল ২০১৪-১৫ আর্থিক বছরে। তাঁর বাড়ির কাজও সম্পূর্ণ হয়নি। সবে বাড়ির দেওয়াল গাঁথার কাজ চলছে। নিরঞ্জনবাবু বলেন, “প্রথম কিস্তির ১৭,৫০০ টাকা পেয়েছিলাম গত নভেম্বর মাসে। দ্বিতীয় কিস্তির ৪২ হাজার টাকা পেয়েছি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে। তা দিয়েই এখন কাজ করছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ananda mandal tamluk indira awas yojana Midnapur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE