Advertisement
E-Paper

হলদির ম্যানগ্রোভে পর্যটনের নতুন ঠিকানা

পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তিলক চক্রবর্তী জানালেন, দ্বীপে ঢোকার মুখে একটি জেটি তৈরির করে দেওয়া হয়, যাতে সুবিধা হয় পর্যটকদের। তবে উদ্বোধন বা নতুন পরিকাঠামোর জন্য অপেক্ষা করতে নারাজ পর্যটকরা।

আরিফ ইকবাল খান

শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:৩০
বন্য: হলদি নদীতে দেখা যায় এমন ম্যানগ্রোভ। নিজস্ব চিত্র

বন্য: হলদি নদীতে দেখা যায় এমন ম্যানগ্রোভ। নিজস্ব চিত্র

হলদি নদীর বুকে এক টুকরো দ্বীপ। হঠাৎই জেগে উঠেছিল একদিন। ম্যানগ্রোভের সবুজ আস্তরণে ঢাকা পড়ে গিয়েছে ধীরে ধীরে— এখন তা ‘মিনি সুন্দরবন’। গত দশ বছরে ক্রমশই আকর্ষণ বেড়েছে মহিষাদলের কাছে ওই দ্বীপের। নতুন বছরে হলদি দ্বীপে উদ্বোধন হবে নতুন পর্যটন কেন্দ্রের। অবশ্য তার আগেই সেখানে ভিড় জমিয়েছেন পিননিক করতে আসা মানুষজন।

পরিস্থিতি অবশ্য এমন ছিল না আগে। দশ বছর ধরে একটু একটু করে ওই চর জেগে উঠছে হলদি নদীর বুকে। ২০১৩-১৪ সালে চরটিকে ভাঙনের হাত থেকে বাঁচাতে উদ্যোগী হয়েছিল মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতি। বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ শিক্ষক সোমনাথ মাইতির চেষ্টায় সুন্দরবন থেকে ম্যানগ্রোভ সুন্দরী, গরান, বাইন, কাঁকড়ার মতো গাছের চারা এনে লাগানো হয়েছিল হলদি দ্বীপে। ম্যানগ্রোভের বাড়-বাড়ন্ত অবশ্য দেখে যেতে পারেননি সোমনাথবাবু। কয়েক বছর আগে পথ দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়।

তবে তারপর থেকে সবুজ ম্যানগ্রোভের টানে পর্যটক এসেছেন মহিষাদলে। এখন এত বেশি গাছ রয়েছে ওই দ্বীপে যে, ওই সব গাছকে ভবিষ্যতে বাণিজ্যিক ভাবে কাজে লাগানোর কথা ভাবছে পঞ্চায়েত। ইটামগরা-২ পঞ্চায়েতের প্রধান রামকৃষ্ণ দাস বলেন, ‘‘২০১৩-১৪ সাল থেকেই আমরা একশো দিনের কাজের প্রকল্পে এই সব ম্যানগ্রোভের নার্সারি তৈরি করেছি। এখন কয়েক লক্ষ গাছ রয়েছে। কাঁকড়া, বাইনের চারা এতো বেশি যে সেগুলি বাণিজ্যিক ভাবে কাজে লাগানোর কথা ভাবছি।’’

হলদিয়া মহকুমার মহিষাদল ব্লকের ইটামগরা-২ পঞ্চায়েত এলাকায় তেরাপেখ্যা–নন্দীগ্রাম নদী পথেই দেখা মেলে হলদি দ্বীপের। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এক সময় হঠাৎ জেগে ওঠা ওই চর নিয়ে আতঙ্কও ছিল। নদী পেরিয়ে সেখানে যাওয়ার প্রশ্নই উঠত না। কিন্তু দিন যত গড়িয়েছে ভয় তত কেটেছে। এখন আশপাশ এলাকার মানুষ ব্যক্তিগত নৌকো ভাড়া করেই দ্বীপে পৌঁছে যাচ্ছেন।

প্রায় আশি একর জমির ওপর গড়ে ওঠা এই দ্বীপটিতে সুন্দরবন থেকে গাছ এনে লাগানো হয়েছিল। লবনাক্ত জলের সান্নিধ্যে ম্যানগ্রোভ অরণ্য গোটা এলাকায় বিস্তার লাভ করেছে। পঞ্চায়েতের তরফে এখানে তৈরি করা হয়েছে একটি বিশ্রামাগার। তার নামও আবার ‘হলদি’। একশো দিনের কাজের প্রকল্পে একটি পুকুরও খনন করা হয়েছে, বসেছে পানীয় জলের গভীর নলকূপ। আগামী দিনে সৌর বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে বলে জানালেন পঞ্চায়েত প্রধান রামকৃষ্ণ দাস। তাঁর কথায়, ‘‘রাত্রি বাসের উপযোগী পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছি আমরা। পরে পাখিরালয়, প্রজাপতি পার্ক ও একটি মিনি চিড়িয়াখানার প্রস্তাব রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হচ্ছে।’’ জোয়ারের সময় প্রচুর মাছও আসে। মাছের জন্যও একটি পুকুর খনন করা হয়েছে। পূর্ব দিকে রয়েছে ঝাউ জঙ্গলও।

পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তিলক চক্রবর্তী জানালেন, দ্বীপে ঢোকার মুখে একটি জেটি তৈরির করে দেওয়া হয়, যাতে সুবিধা হয় পর্যটকদের। তবে উদ্বোধন বা নতুন পরিকাঠামোর জন্য অপেক্ষা করতে নারাজ পর্যটকরা। বছরের শেষ দু’দিন বহু মানুষ বিকেল পর্যন্ত সময় কাটিয়েছেন হলদি দ্বীপে।

শনিবার ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে পিকনিক করতে এসেছিলেন মহিষাদলের শিক্ষক শুভেন্দু কর। তেরাপেখ্যা–নন্দীগ্রাম ফেরিঘাট থেকে নৌকা ভাড়া করে নিজেরাই চলে এসেছেন হলদি দ্বীপে। তিনি বললেন, ‘‘এখানে তো কোনও শ্বাপদের বাস নেই। অথচ, এমন সুন্দর জঙ্গল, পাখিও আসে অনেক, তাই নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়ানো যায়। ছোটদেরও ভাল লাগে।’’

তবে এই বিষয়টি নিয়েও চিন্তিত প্রশাসন। স্থানীয় কেশবপুর জলপাই গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য দিব্যেন্দু দল্পতি বলেন, ‘‘আমাদের অনুমতি না নিয়ে অনেকেই চলে আসছেন এখানে। গাছেরও ক্ষতি করছেন। আমরা পদক্ষেপ করব।’’ রামকৃষ্ণবাবু অবশ্য জানালেন, প্লাস্টিক ও থার্মোকল নিষিদ্ধ করা হচ্ছে হলদি দ্বীপে। বায়ো-টয়লেট তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছি তাঁদের। কোনও ধরনের মাইক ব্যবহার করার ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ আরোপ করেছে পঞ্চায়েত।

River Haldi River হলদি নদী
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy