ক’দিন আগেই পানীয় জলে ব্যাকটেরিয়া মিলেছিল খাস মেদিনীপুর মেডিক্যাল চত্বরে। আনন্দবাজারে সেই খবর প্রকাশের পরই নড়ে বসল স্বাস্থ্য দফতর। মেডিক্যালের যে তিন জায়গায় ব্যাকটেরিয়া মিলেছিল, সেখানে জল শোধনের পাশাপাশি জেলার সব গ্রামীণ হাসপাতাল এবং ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোকে নিয়মিত জল পরীক্ষার নির্দেশ দিল পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা স্বাস্থ্য ভবন। জানা গিয়েছে, মেডিক্যালের ঘটনা সামনে আসার পরে অন্য হাসপাতালগুলোর সুপার এবং বিএমওএইচদের এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জল পরীক্ষার রিপোর্টের খুঁটিনাটি জেলায় জানাতেও হবে।
মেডিক্যালের ঘটনার পরই কি এই নির্দেশ? সদুত্তর এড়িয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, ‘‘হাসপাতালের পানীয় জল বছরে অন্তত দু’বার পরীক্ষা করানোর কথা। প্রায় সব জায়গাতেই তা হয়। এ ব্যাপারে নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে।’’ তবে জেলার এক বিএমওএইচ মানছেন, ‘‘জেলা স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশ পেয়েছি। মাস কয়েক আগে একবার গ্রামীণ হাসপাতালের জল পরীক্ষা করানো হয়েছিল। পিএইচই-র সঙ্গে কথা বলছি। ফের জল পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে।’’
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জলে মারণ ব্যাকটেরিয়ার খোঁজ মিলেছিল জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের (পিএইচই) পরীক্ষাতেই। সব মিলিয়ে হাসপাতালের ৮টি জায়গায় জলের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। তার মধ্যে তিন জায়গায় ই-কোলির মতো মারণ ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া যায়। ই-কোলি অর্থাৎ ইসকেরিয়া ব্যাকটেরিয়া থেকে ডায়েরিয়া, অ্যানিমিয়ার মতো রোগ হতে পারে। এর থেকে নানা সংক্রমণও ছড়াতে পারে। চিকিত্সকদের বক্তব্য, এই ব্যাকটেরিয়া অত্যন্ত দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে। ছ’ঘন্টার মধ্যে এক থেকে বেড়ে দাঁড়ায় দশ লক্ষে। অ্যান্টিবায়োটিকে প্রাথমিক ভাবে এরা মরে যায়। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক যেহেতু একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কাজ করে, তাই পরিমাণে কম হলে এর কার্যকারিতাও কমে যায়। আর সেই সুযোগেই জিন মিউটেশনের মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করে এই ব্যাকটেরিয়া।
একমাত্র নিয়মিত নজরদারি ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বজায় রাখলেই এই ধরনের সমস্যা এড়ানো সম্ভব। অভিযোগ, সেই কাজেই ফাঁক থেকে যায়। মেদিনীপুর মেডিক্যাল হোক বা জেলার কোনও প্রত্যন্ত এলাকার গ্রামীণ হাসপাতাল— জলাধার নিয়মিত পরিষ্কার হয় না, আশপাশে সামান্য ব্লিচিংও ছড়ানো হয় না। ফলে, আবর্জনা জমে। নিয়মিত জল পরীক্ষারও বালাই নেই। হয় না জল শোধন। দেখভালের অভাবেই জলের মধ্যে জীবাণু বাসা বাঁধে।
অথচ নিয়ম করে জল পরীক্ষার সময় বেশ কয়েকটি জিনিস দেখার কথা। জেলা স্বাস্থ্য ভবনের এক সূত্রে খবর, নলকূপ থেকে ১০ মিটারের মধ্যে খানাখন্দ কিংবা গর্ত আছে কি না, জঞ্জালের স্তূপ কিংবা নোংরা জল জমে আছে কি না, নলকূপের চাতাল থেকে দু’মিটারের মধ্যে কোনও নোংরা জলাধার আছে কি না, শৌচাগার থাকলে তা নলকূপের থেকে উঁচু জায়গায় আছে কি না, নলকূপের চাতালটি এক মিটারের থেকে কম ব্যাসার্ধের কি না, নলকূপের চালাতে কোনও গর্ত আছে কি না, নলকূপের চাতালে কোনও ফাটল বা ভাঙা আছে কি না — এসবই দেখার কথা। সেই সঙ্গে জলের মান পরীক্ষা করার কথা। রিপোর্ট খতিয়ে দেখে প্রয়োজনে জল শোধন করার কথা। এ বার থেকে নিয়মিত এই জল পরীক্ষা করানোরই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই কাজ কতটা হয়, সেটাই এখন দেখার!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy