Advertisement
E-Paper

ডেঙ্গি-তথ্য গোপন, কড়া স্বাস্থ্য দফতর

নিয়ম অনুযায়ী, নার্সিংহোমে ভর্তি হওয়া রোগীর তালিকা-সহ সমস্ত তথ্য প্রতি মাসে স্বাস্থ্য দফতরে জমা দিতে হয়। নতুন লাইসেন্স বা পুরানো লাইসেন্স পুনর্নবীকরণের সময় স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা তা বিভিন্ন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও দেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৭ ০০:৪৬
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

লাফিয়ে বাড়ছে জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা। বাড়ছে ডেঙ্গি আক্রান্তও। সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি অনেক ডেঙ্গি আক্রান্ত জেলার বিভিন্ন নার্সিংহোমেও ভর্তি হচ্ছেন। কতজন ডেঙ্গি আক্রান্ত ভর্তি রয়েছেন, তাঁদের শারীরিক অবস্থাই বা কেমন— সেই সংক্রান্ত তথ্য দিতে নার্সিংহোমগুলি গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ উঠছে। সঠিক তথ্য না দিলে লাইসেন্স বাতিল করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।

রাজ্যের ডেঙ্গি-চিত্র গোপন করার অভিযোগ উঠেছে খোদ স্বাস্থ্য দফতরের বিরুদ্ধে। এমনকী এ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কাছেও অভিযোগ পৌঁছেছে। এ বার স্বাস্থ্য দফতর এমন নির্দেশ দেওয়ায় একাংশ চিকিৎসক অভিযোগ করছেন, এ ভাবে কার্যত নার্সিংহোমগুলিকেও পরোক্ষে চাপ দেওয়া হচ্ছে, যাতে ডেঙ্গির খবর প্রকাশ্যে না আসে।

নিয়ম অনুযায়ী, নার্সিংহোমে ভর্তি হওয়া রোগীর তালিকা-সহ সমস্ত তথ্য প্রতি মাসে স্বাস্থ্য দফতরে জমা দিতে হয়। নতুন লাইসেন্স বা পুরানো লাইসেন্স পুনর্নবীকরণের সময় স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা তা বিভিন্ন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও দেন। লাইসেন্সেও সরকারি সব নিয়মকানুন লেখা থাকে। এ বারও ডেঙ্গি ও জ্বরের প্রকোপ বাড়তেই জেলা স্বাস্থ্য দফতর নির্দেশে দিয়েছে, নার্সিংহোমে কোনও ডেঙ্গি বা জ্বরে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হলে চিকিৎসা শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট রোগীর নাম ও রোগের সমস্ত বিবরণ জানাতে হবে।

যদিও জেলার সিংহভাগ নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষই এই নিয়মের তোয়াক্কা না করেই ডেঙ্গি আক্রান্তের চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ। সঠিক তথ্য পেতে সরকারি হাসপাতালগুলিকেও নিয়ম করে রিপোর্ট পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলি থেকেও তথ্য পেতে উদ্যোগী হয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক স্বীকার করছেন, “সময় মতো সঠিক তথ্য না আসায় ডেঙ্গি আক্রান্তের চিকিৎসা কেমন হচ্ছে, সে বিষয়ে আমরা পুরোপুরি অন্ধকারে। আক্রান্তের সংখ্যাও অনেক সময় অজানাই থেকে যাচ্ছে।”

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১৩০টি নার্সিংহোম রয়েছে। প্রায় প্রতিটি নার্সিংহোমেই জ্বর নিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৭৫-৮০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। এদের মধ্যে এনএসওয়ান পজেটিভ রিপোর্ট মিলেছে, এমন রোগীর সংখ্যা গড়ে ৩৫-৪০। এই সমস্ত রোগীদের ঠিকঠাক চিকিৎসার পাশাপাশি ম্যাক অ্যালইজা পরীক্ষা করার কথা সরকারি ভাবে বারবার বলাও হচ্ছে।

ঘাটাল-সহ জেলা সদরে মাত্র দু’টি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজেই একমাত্র ডেঙ্গির ম্যাক অ্যালাইজা পরীক্ষা হয়। অভিযোগ, ম্যাক অ্যালাইজা পরীক্ষা দূর-অস্ত, নার্সিংহোমগুলি এনএসওয়ান পজেটিভ রোগীদের ডেঙ্গিতে আক্রান্ত বলে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। একজন রোগীকে আট-দশ দিন ভর্তি রেখে বিলের অঙ্ক বাড়ানোর অভিযোগও উঠছে একাংশ নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নার্সিংহোম মালিকের সাফ বক্তব্য, “এ বিষয়ে আমাদের বলা হলেও তথ্য পাঠাতে চাপ দেওয়া হয়নি।” দাসপুরের এক নার্সিংহোম মালিক তো বলেই ফেললেন, “আমাদের সচেতনতার অভাবেই ডেঙ্গি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সামনে আসছে না।” যদিও নার্সিংহোম সংগঠনের জেলা সভাপতি সুব্রত রায় দাবি করছেন, নিয়ম মেনে রোগীর তালিকা পাঠানো হয়।

এ বিষয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “এ বার ডেঙ্গি বা জ্বর সংক্রান্ত কোনও তথ্য গোপন করলে সেই নার্সিংহোমের লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ করা হবে না। কোনও নার্সিংহোমে আচমকা পরিদর্শনে গিয়ে যদি দেখা যায়, সঠিক তথ্য না পাঠিয়ে ডেঙ্গি বা জ্বরে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা চলছে। তবে সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোমের লাইসেন্স বাতিলও করা হবে।”

Dengue Malaria Mosquitoes fever Water pollution ঘাটাল
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy