Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ইদ থেকে ছট, চাচা সকলের

রোজ সকালে গুরুদ্বারে যেতেন। আর গোলবাজারে কংগ্রেস কার্যালয়ে তাঁর টেবিলে শোভা পেত ফ্রেমবন্দি বালাজি। শিখ হয়েও কোনও দিনই বিশেষ সম্প্রদায়ের গন্ডিতে আটকে থাকেননি জ্ঞানসিংহ সোহনপাল। হয়ে উঠেছিলেন নানা ভাষাভাষী ও মিশ্র সংস্কৃতির শহর খড়্গপুরের মুখ।

তখন ১৯৭১। মহাকরণে যুক্তফ্রন্ট সরকারের শেষ ক্যাবিনেট বৈঠকে জ্ঞানসিংহ সোহনপাল। —ফাইল চিত্র

তখন ১৯৭১। মহাকরণে যুক্তফ্রন্ট সরকারের শেষ ক্যাবিনেট বৈঠকে জ্ঞানসিংহ সোহনপাল। —ফাইল চিত্র

দেবমাল্য বাগচী ও বরুণ দে
খড়্গপুর ও মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৭ ০৬:৩০
Share: Save:

মাথায় বড়সড় একটা পাগড়ি, গালেতে গালপাট্টা।

রোজ সকালে গুরুদ্বারে যেতেন। আর গোলবাজারে কংগ্রেস কার্যালয়ে তাঁর টেবিলে শোভা পেত ফ্রেমবন্দি বালাজি। শিখ হয়েও কোনও দিনই বিশেষ সম্প্রদায়ের গন্ডিতে আটকে থাকেননি জ্ঞানসিংহ সোহনপাল। হয়ে উঠেছিলেন নানা ভাষাভাষী ও মিশ্র সংস্কৃতির শহর খড়্গপুরের মুখ। শহরবাসীর প্রিয় চাচা।

শুধু রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, ইদ, মাতাপুজো, উগাদি-পোঙ্গল, দুর্গোৎসব, বড়দিন, ছটপুজো— সব সম্প্রদায়ের উৎসবেই খড়্গপুরের অলিতেগলিতে দেখা যেত চাচাকে। ধর্মীয় হোক বা সামাজিক, বিভিন্ন উৎসব কমিটির তিনিই ছিলেন পৃষ্ঠপোষক। সবরকম মানুষের সঙ্গে অবলীলায় মিশে যাওয়ার এই ক্ষমতাই জ্ঞানসিংহকে খড়্গপুরের চাচা করে তুলেছিল। শুধু নিজের পাড়া নয়, শহরের যে কোনও প্রান্তের মানুষই চাচাকে দেখলে সৌজন্য বিনিময় না করে পারতেন না। মাঝবয়সীরা প্রণাম করতেন। আর কচিকাঁচাদের আব্দার ছিল ‘হ্যান্ডশেক’-এর। কাউকে কখনও নিরাশ করেননি চাচা। তাই দশবারের কংগ্রেস বিধায়ক, অকৃতদার এই মানুষটি রাজনীতির দুনিয়ার লোক হয়েও সব শিবিরের, সব স্তরের শহরবাসীর অভিভাবক ছিলেন।

চাচা যে খড়্গপুর শহরের ‘মিথ’ ছিলেন, তা মানছেন সব পক্ষই। সিপিআইয়ের জেলা নেতা বিপ্লব ভট্ট বলছেন, “মানুষের সমস্যা নিয়ে অনেকবার ওনার কাছে গিয়েছি। কখনও নিরাশ করেননি। উনি কখনও মনে করতেন না যে কোনও দলের প্রতিনিধিত্ব করছেন। মনে করতেন, উনি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছেন।” তৃণমূল নেতা রবিশঙ্কর পাণ্ডের কথায়, ‘‘ব্যক্তিগত লোকসান হয়ে গেল। উনি বাবার মতো ছিলেন। দক্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হতে গেলে কোন নীতিতে চলতে হয় তা ওঁর থেকেই শিখেছি।’’

শুধু রাজনীতির দুনিয়ার মানুষরাই নন, আমজনতার কাছেও এমনই ছিল চাচার ভাবমূর্তি। খড়্গপুরের দেবলপুরের বাসিন্দা শেখ সেলিম বলছিলেন, “ইদের দিন উনি সকালেই ইদগাতে চলে আসতেন। নমাজ পাঠের জন্য অনেকে আসেন। উনি সকলের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন। ওঁর মতো মানুষ হয় না।” শহরের আর এক দক্ষিণ ভারতীয় বাসিন্দা ভেঙ্কট রাও বলছেন, “নিজের কাজের মধ্য দিয়েই উনি শহরের মানুষের কাছের হয়ে উঠেছিলেন।” খড়্গপুরের একটি চার্চের ফাদার ফিলিপও বলছিলেন, “উনি সত্যিই অন্য ধাতের ছিলেন চাচা।” এমন খাঁটি একটা মানুষকে হারিয়ে মন ভার রেলশহরের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE