Advertisement
E-Paper

রেলশহরে গুলি, প্রশ্নে নিরাপত্তা

কাপড়ের ব্যবসার জন্য বাড়ি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার আড়ালে আসলে চলছিল বেআইনি অস্ত্রের কারবার। বাড়ি মালিকের মামা উল্টো দিকেই থাকেন। শুক্রবার গভীর রাতে তিনি শৌচকর্মের জন্য ভাগ্নের ওই বাড়ির কাছে যেতেই এক যুবক সটান গুলি ছুড়ে দেওয়ায় গোটা বিষয়টি সামনে এসেছে। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচেছেন বৃদ্ধ।

-স্থানীয়রাই পাকড়াও করলেন এক অভিযুক্ত অভিমন্যু কুমারকে। (ইনসেটে) সেই বাড়ি। — রামপ্রসাদ সাউ।

-স্থানীয়রাই পাকড়াও করলেন এক অভিযুক্ত অভিমন্যু কুমারকে। (ইনসেটে) সেই বাড়ি। — রামপ্রসাদ সাউ।

নিজস্ব সংবাদদাতা,

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৬ ০১:০৫
Share
Save

কাপড়ের ব্যবসার জন্য বাড়ি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার আড়ালে আসলে চলছিল বেআইনি অস্ত্রের কারবার। বাড়ি মালিকের মামা উল্টো দিকেই থাকেন। শুক্রবার গভীর রাতে তিনি শৌচকর্মের জন্য ভাগ্নের ওই বাড়ির কাছে যেতেই এক যুবক সটান গুলি ছুড়ে দেওয়ায় গোটা বিষয়টি সামনে এসেছে। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচেছেন বৃদ্ধ।

খড়্গপুরের ঝুলি এলাকার দাফাইপাড়ার এই ঘটনার পরে ফের বেআব্রু হল রেল শহরের নিরাপত্তা। সেই সঙ্গে প্রশ্ন উঠে গেল ভোট-পর্বে খাস শহরের বুকে এমন অস্ত্রের ডেরা তৈরি করা হল কেন। কারণ, ওই বাড়ির মালিক রোহিত শঙ্করের দাবি, ১৫ জানুয়ারি থেকে ৫ মে পর্যন্ত বাড়ি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। ৫ মে রাজ্যে শেষ দফা ভোট। সে দিন নির্বাচন রয়েছে পাশের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে।

দাফাইপাড়ার ওই বাড়ির কাছে শুক্রবার রাত আড়াইটে নাগাদ স্থানীয় বাসিন্দা বছর ষাটের ভোলা শঙ্করকে লক্ষ করে গুলি ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। ঘটনার পরেই ওই বাড়ির চার যুবক পালিয়ে যায়। বাড়ির মালিক রোহিতের অবশ্য দাবি, তিনি ওই যুবকদের বাড়ি ভাড়া দেননি। দিয়েছিলেন শহরের ওল্ড সেটলমেন্টের সাঁই মন্দির সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা জগেশ্বর প্রসাদকে। তিনি ও তাঁর ছেলে কাপড়ের ব্যবসা করবেন বলেই বাড়ি ভাড়ায় নিয়েছিলেন। জগেশ্বর ও তাঁর ছেলে বিজয় প্রসাদকে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার সকালে বাড়িতে ঢুকতে গেলে অভিমন্যু কুমার নামে এক যুবককে ধরে ফেলেন
স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

ওই বাড়ি থেকে বেশ কিছু অস্ত্রও মিলেছে। প্রথমে উদ্ধার হয়েছিল তিনটি পিস্তল ও কুড়ি রাউন্ড গুলি। এ দিন অভিমন্যুকে গ্রেফতারের পরে ফের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ আরও দু’টি পিস্তল ও ১ লক্ষ ৯১ হাজার টাকা উদ্ধার করে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত অভিমন্যুর বাড়ি বিহারের মুঙ্গেরে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, বেআইনি অস্ত্র সরবরাহের সঙ্গে যুক্ত ছিল অভিমন্যু ও তার সঙ্গীরা। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্ত বলেন “একটা বাড়ি ভাড়া নিয়ে কিছু যুবক দুষ্কর্ম চালাচ্ছিল। এর আগেও কাপড় ব্যবসার নামে ঘাটালে ও পূর্ব মেদিনীপুরে এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানতে পারছি। কয়েকজনকে আটক ও একজনকে গ্রেফতার করে তদন্ত করছি। কিছু আগ্নেয়াস্ত্রও উদ্ধার হয়েছে।’’ এ দিন হিজলি ফাঁড়িতে ধৃতকে জেরার পরে খড়্গপুরের এসডিপিও কার্তিক মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হচ্ছে এরা অস্ত্রের কারবারে যুক্ত। তদন্ত চলছে।’’

খড়্গপুর শহরে গুলি-খুন-ছিনতাই নতুন নয়। একটা সময় রেলের ঠিকাদারি নিয়ে মাফিয়াদের দাপাদাপিতে খুন-জখম ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। কিন্তু এ ভাবে শহরের বুকে অস্ত্রের কারবার এবং বিষয়টি জানাজানি হওয়ার আশঙ্কায় এক বৃদ্ধকে লক্ষ করে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেনি। ফলে, শহরবাসী আতঙ্কিত। তাঁদের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে বলেই এমন ঘটনা ঘটছে। আর পুলিশ সব জেনেও নীরব। শহরের খরিদার বাসিন্দা রাজীব যাদব বলেন, “এ সব শুনে আতঙ্ক বাড়ছে। এরপর তো নিশ্চিন্তে রাস্তাতেও বেরোতে পারব না।’’ আইআইটির কর্মী বালা সেশুরও বক্তব্য, “পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা বাড়ছে। আগে আইআইটি চত্ত্বর সুরক্ষিত ছিল। এখন সেখানেও নিরাপত্তার অভাব দেখা দিচ্ছে।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আদতে পুরীগেটের বাসিন্দা রোহিত শঙ্কর নির্মাণ ব্যবসায়ী। বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি ও দোকান তৈরি করে তিনি ভাড়া দেন। ঝুলিতেও তিন বছর ধরে তিনি একটি দোতলা বাড়ি তৈরি করছিলেন। বাড়ির এক দিকের কাজ শেষ হয়ে যাওয়ায় সেই অংশ তিনি ভাড়ায় দেন। রোহিতের কথায়, “জগেশ্বর প্রসাদ আমার পরিচিত। তাই তিনি বাড়ি ভাড়া নেবেন বলায় রাজি হয়েছিলাম। ১৫ জানুয়ারি বাড়ি ভাড়া দেওয়ার পরে দেখেছিলাম ওঁরা অনেক কাপড় নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু তারপরে আর সে ভাবে ওঁদের উপর নজর রাখিনি।’’

কিন্তু এই ব্যবসার আড়ালে যে ওই বাড়িতে অস্ত্রের কারবারের ডেরা গজিয়ে উঠেছিল, তা জানতেন না বলেই রোহিতের দাবি। বিষয়টি ঘুণাক্ষরে টের পাননি এলাকার বাসিন্দারাও। স্থানীয় এক জন বলেন, “এত দিন ধরে কিছুই বুঝতে পারিনি। ওই যুবকেরা রাতে আসত। হিজলি স্টেশন কাছে হওয়াতেই বোধহয় এই জায়গাটা বেছেছিল।’’

রোহিতের ওই নির্মীয়মাণ বাড়ির ঠিক উল্টো দিকেই বাড়ি ইমারতি সরঞ্জামের ব্যবসায়ী ভোলা শঙ্করের। তিনি রোহিতের মামা। ভাগ্নের নির্মীয়মাণ বাড়িটি তিনিই দেখভাল করছিলেন। বৃদ্ধ ভোলাবাবুর অভিযোগ, “রাতে আমাকে দেখেই এক যুবক ছুটে এসে প্রথমে পেটে ঘুঁষি মারে। আমি তার একটা হাত ধরতেই অন্য হাত দিয়ে কোমর থেকে পিস্তল বের করে গুলি ছোড়ে। পায়ের কাছ দিয়ে গুলি বেরিয়ে যায়। মনে হচ্ছে পুনর্জন্ম পেলাম।’’ ভোলা শঙ্করের মেয়ে সোনি বলেন, “ওই যুবকদের সঙ্গে কোনও কথা হত না। তবে দেখতাম ওরা রাতে আসত, সকালে চলে যেত। মনে হয় রাতে বাবাকে দেখে ভয় পেয়ে এই কাণ্ড করেছে।’’

কে গুলি চালিয়েছিল, তা স্পষ্ট না হলেও পুলিশের দাবি, জেরায় অভিমন্যু অস্ত্র সরবরাহের কথা স্বীকার করেছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় তারা তিনবার এসেছে বলেও জানিয়েছে। ওই বাড়ি থেকে পাওয়া চারটি ওয়ান শটার পিস্তল ও একটি ছয় বোরের পিস্তল মুঙ্গেরে তৈরি বলে পুলিশের ধারণা। অভিমন্যুর কাছে ফোন নম্বরের তালিকাও পেয়েছে পুলিশ। সেই সব নম্বরের অধিকাংশই ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ডের বলে জানা গিয়েছে। গোটা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।

khargapur midnapore arms deal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy