ভেঙে যাওয়া সিয়াজোড়া সেতু। ছবি-সৌমেশ্বর মণ্ডল।
পারাং নদীর উপর শালবনির সিয়াজোড়ায় সেতু ভেঙে গিয়েছে চার বছর আগে। যাতায়াতের সুবিধার জন্য পারাং নদীর উপর বাঁধ দিয়ে অস্থায়ী সেতু তৈরি করা হয়েছে। সেই রাস্তা দিয়েই সারা বছর বাস ও যানবাহন চলাচল করলেও বর্ষাকালে সমস্যা বাড়ে। বর্ষার বৃষ্টিতে নদী ফুলেফেঁপে উঠলে তখন রাস্তা ভেঙে দিতে হয়। সেই সময় বন্ধ থাকে যান চলাচল। সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়।
সমস্যা সমাধানে সিয়াজোড়া সেতু তৈরির জন্য অর্থ বরাদ্দ করল পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতর। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদকে ওই টাকা দেওয়া হয়েছে। যদিও জেলা পরিষদ পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরকেই সেতুটি নির্মাণ করে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছে।
কেন? জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, নয়াগ্রামের কেশররেখা সেতু নির্মাণের জন্য দু’বছর আগে বরাদ্দ হওয়া ৫ কোটি টাকা পড়ে রয়েছে। তিন বার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ঠিকাদার সংস্থাকে অনুরোধ করেও কাজটি করানো যায়নি। তাই চতুর্থ বার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ বলেন, “ঠিকাদাররা কাজ না করলে কী ভাবে উন্নয়নে গতি আসবে। কেশররেখার ক্ষেত্রে তিন বার দরপত্র আহ্বান করেও কাজ হয়নি। তাই সিয়াজোড়া সেতুর কাজটি যাতে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরই করে সেই আবেদন জানিয়েছি। তাঁরা রাজিও হয়েছেন।”
পিঁড়াকাটা, সিজুয়া হয়ে সিয়াজোড়ার এই সেতু দিয়ে সহজে মেদিনীপুর থেকে গোয়ালতোড়ে যাওয়া যায়। সিয়াজোড়া সেতু বন্ধ থাকলে চন্দ্রকোনা রোড দিয়ে ঘুরে গোয়ালতোড়ে যেতে হয়। ফলে অতিরিক্ত ১৫-২০ কিলোমিটার পথ ঘুরতে হয়। বেসরকারি সংস্থার কর্মী কিশোর খামরুই বলেন, “ব্যবসার কাজে প্রায়ই গোয়ালতোড়ে যেতে হয়। কিন্তু বর্ষার সময় ওই পথে যেতে পারি না। চন্দ্রকোনা রোড হয়ে ঘুরতে হয়। মোটরবাইকের তেল যেমন বেশি খরচ হয় তেমনই সময়ও নষ্ট হয়। সেতু হলে উপকৃত হব।”
এই সেতু বন্ধ থাকলে সাধারণ মানুষের ঝক্কির পাশাপাশি ব্যবসারও ক্ষতি হয় বলে একাংশ ব্যবসায়ীর দাবি। পশ্চিম মেদিনীপুর বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মৃগাঙ্ক মাইতি বলেন, “বর্ষায় সিজুয়া পর্যন্ত বাস গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। গোয়ালতোড় যাওয়া যায় না। আমাদের ক্ষতি তো হয়ই। আমরাও দ্রুত সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছি।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সাধারণত একটি প্রকল্পে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতর ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত অর্থ দেয়। এ ক্ষেত্রেও সেই মতো অর্থ বরাদ্দের কথা বলেছিল দফতর। কিন্তু সেতুটি নির্মাণ করতে ৬ কোটি টাকার প্রয়োজন। তাই জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে দফতরের কাছে আবেদন জানানো হয়, যাতে ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। এ বার দফতর ৬ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে বলে জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে।
কেশবরেখা সেতুর সমস্যা কী করে মিটবে? নয়াগ্রাম ব্লকের মুরুলি খালের উপর থাকা এই সেতুটি ৭ বছর আগে ভেঙে পড়ে। তারপর থেকে কেশররেখা গ্রাম পঞ্চায়েতটি নয়াগ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। আগে কেশবরেখা সেতু দিয়ে সহজেই বালিগেড়িয়া থেকে সাতফুটিয়া পৌঁছনো যেত। এখন ধানশোল হয়ে ঘুরে সাতফুটিয়া যেতে হয়।
নয়াগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি উজ্জ্বল দত্ত বলেন, “চতুর্থ দরপত্রটি দেখি। এ বারও কিছু না হলে অস্থায়ী কাঠের সেতুটি আবার ভাল করে করতে হবে। নয়তো এলাকার মানুষ সমস্যায় পড়েন।” চতুর্থ বার ডাকা দরপত্রে সাড়া মিলবে বলে আশাবাদী জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শৈবাল গিরিও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy