এক টুকরো জমি। ধান, সব্জি, বাদাম চাষ করে চলত সংসার। সেই জমিটুকু রক্ষা করতেই আন্দোলনে নেমেছিলেন রাধেশ্যাম গিরি, গৌরহরি মণ্ডলরা। ধরা পড়ে জেলও খেটেছেন তাঁরা। ততদিনে ঘর ছেড়েছে সোনাচূড়ার বেশ কয়েকটি তরুণী। তাদের মধ্যে ছিল ঝর্নাও, রাধেশ্যাম গিরির মেয়ে। তারপর থেকে অবশ্য সোনাচূড়া হাইস্কুলের নবম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রীটির খোঁজ রাখেনি গ্রাম। অন্তত তেমনই দাবি বাসিন্দাদের। বুধবার মাওবাদী নেতা রঞ্জিত পাল আত্মসমর্পণ করেন, তখনই তাঁর স্ত্রীকে চিনতে পারেন সকলে— তাঁদের ঝর্না।
২০০৭ সালে জমিরক্ষা আন্দোলন শুরুর সময় থেকেই এলাকায় আনাগোনা চলত মাওনেতাদের। বাসিন্দাদের নিয়ে গোপন বৈঠক করতেন তাঁরা, দলে যোগ দেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতেন ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের। সেই সময় জমি রক্ষা আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন ঝর্নার বাবা রাধ্যেশ্যাম। সে বছর নভেম্বরেই নন্দীগ্রাম পুনর্দখল করে সিপিএম। রাধেশ্যাম-সহ কয়েকজন সক্রিয় আন্দোলনকারী জলপথে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগর দ্বীপে পালিয়ে যান। পরে কাকদ্বীপ থেকে গ্রেফতার হন রাধেশ্যাম গিরি, গৌরহরি মণ্ডল ও প্রকাশ মুনিয়ান। তাঁদের বিরুদ্ধে মাওবাদীদের সঙ্গে যুক্ত থাকা ও অস্ত্র আইনে মামলা রুজু হয়েছিল। প্রায় পাঁচ বছর জামিনে মুক্ত তাঁরা। কিন্তু খোঁজ ছিল না ঘরছাড়া মেয়েগুলির। তখনও এলাকার বাসিন্দারা জানতেন না ওরা মাওবাদী দলে যোগ দিয়েছে।
তবে কয়েক মাস আগে কবিতা ঘোড়ই নামে স্থানীয় এক তরুণী ঝাড়খণ্ড সীমানায় পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। তাঁকে চিনতে পেরেছিলেন প্রতিবেশীরা। আর তারপর বুধবার রাজ্য পুলিশের ডিজি-র কাছে রঞ্জিত পাল যখন আত্মসমর্পন করলেন, তাঁর সঙ্গে ঝর্নাকে দেখেও চিনতে পেরেছেন সোনাচূড়া গ্রামের বাসিন্দারা।
কিন্তু গ্রামের মেধাবী ছাত্রীটি কী ভাবে হয়ে গেল মাওনেতার স্ত্রী? জানেন না স্থানীয়রা। রঞ্জিতের সঙ্গে কি এই গ্রামেই পরিচয়? উত্তর
মেলে না।
স্থানীয়রা অনেকেই বলেন, মাওবাদীরা সে সময় আনাগোনা করত এই গ্রামে। সকলেরই দু’তিনটি নাম। রঞ্জিৎ এ গ্রামে আসত কিনা বোঝার উপায় নেই। সোনাচূড়া পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান কালীকৃষ্ণ প্রধান বলেন, ‘‘সে সময় এখানে অনেকেই এসেছিলেন। তাঁরা কাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত আমাদের পক্ষে সব কিছু জানা সম্ভব ছিল না।’’ নন্দীগ্রামে জমিরক্ষা আন্দোলনের নেতা সবুজ প্রধান বলেন, ‘‘আন্দোলন পর্বে রাধেশ্যামবাবু সক্রিয় ভাবে জড়িত ছিলেন। পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে মাওবাদী তকমা দিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছিল। সে জন্য আইনি লড়াও করেছি। তবে আন্দোলন পর্বে ঝর্না কী ভাবে জড়িত ছিল বা ঘর ছেড়েছিল আমাদের জানা নেই। এতদিন কোথায় ছিল তাও জানি না।’’
এখনও গ্রামেই থাকেন ঝর্নার বাবা, মা, ভাই। অসুস্থ রাধেশ্যামবাবু চান যে ভাবেই হোক ছেলেকে এর প্রভাব থেকে বাঁচিয়ে রাখতে। নিজের সাধ্যের বাইরে গিয়ে ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া শেখাতে চেয়েছিলেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy