Advertisement
০৬ মে ২০২৪

বগড়ির উল্টোরথে ফেরেন রাধাকৃষ্ণ

চতুর্দশ শতকের শেষ দশকে কৃষ্ণনগরে একটি কৃষ্ণমূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন গড়বেতার বগড়ির রাজা গজপতি সিংহ। সেবাইত হিসেবে নিযুক্ত করেন রাজ্যধর রায়কে। ১৪৭০ সালে গজপতিবাবুর প্রপৌত্র রাজা রঘুনাথ সিংহ কৃষ্ণের পাশে একটি রাধামূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন।

যুগলে: বগড়ির মন্দিরে রাধাকৃষ্ণের মূর্তি। নিজস্ব চিত্র

যুগলে: বগড়ির মন্দিরে রাধাকৃষ্ণের মূর্তি। নিজস্ব চিত্র

সৌমেশ্বর মণ্ডল
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৭ ০১:০৬
Share: Save:

আজ উল্টোরথ। সাত দিন মাসির বাড়িতে কাটানোর পর আজ বাড়ি ফিরবেন জগন্নাথদেব। কিন্তু এই রীতিটাই একটু বদলে গিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতার বগড়িতে। সেখানে জগন্নাথের রীতি মেনেই রথে চড়ে মাসির বাড়ি যান রাধাকৃষ্ণ। জগন্নাথের মতো রোজ আলাদা সাজের পোশাকে সেজে ওঠেন তাঁরা। তার পর উল্টোরথে মাসির বাড়ি থেকে ফিরে আসেন নিজের মন্দিরে। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ ভিড় জমান এই রাধাকৃষ্ণের রথ দেখতে।

চতুর্দশ শতকের শেষ দশকে কৃষ্ণনগরে একটি কৃষ্ণমূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন গড়বেতার বগড়ির রাজা গজপতি সিংহ। সেবাইত হিসেবে নিযুক্ত করেন রাজ্যধর রায়কে। ১৪৭০ সালে গজপতিবাবুর প্রপৌত্র রাজা রঘুনাথ সিংহ কৃষ্ণের পাশে একটি রাধামূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। আর সেখানে বংশপরম্পরায় চোদ্দ প্রজন্ম ধরে সেবাইতের কাজ করে আসছেন রায় বংশধরেরা। শিলাবতীর ভাঙনে প্রাচীন মন্দির তলিয়ে গেলে ১২৬২ বঙ্গাব্দে কৃষ্ণনগরে পঞ্চরত্ন মন্দির গড়ে ওঠে। রাধাকৃষ্ণ মূর্তিটি সেই মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়।

বগড়ি বিরাজিত শ্রী শ্রী কৃষ্ণরায়জিউ ঠাকুর দেবত্তোর ট্রাস্ট-এর আয়োজনে ১৯৩৮ সাল থেকে শুরু হয়েছে রাধাকৃষ্ণের এই রথযাত্রা।বগড়ি-কৃষ্ণনগর থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে মায়তাতে মাসির বাড়ি যান রাধাকৃষ্ণ। নিয়ম অনুযায়ী, সন্ধের আগে রথ পৌঁছতে হয়। কোনও কারণে দেরি হলে যেখানে সন্ধে হয়, রথ সেখানেই থেকে যায়। তখন রাধাকৃষ্ণকে পালকিতে মাসির বাড়ি পৌছে দেওয়া হয়। মাসির বাড়িতে প্রথম দিন কালো পোশাক পরিধান করেন তাঁরা। দ্বিতীয় দিন কোটালবেশ, তৃতীয় দিন রায় বলরামবেশ, চতুর্থ দিন গৌরবেশ, পঞ্চম দিন লালবেশ, ষষ্ঠ দিন রাখালবেশ, সপ্তম দিন রাজবেশ ধারণ করে। অষ্টম দিন বিশ্রাম। নবম দিন উল্টোরথ। সে দিন সকালে মাসির বাড়ির সামনেই গোকুলকুঞ্জ মন্দিরে রাধাকৃষ্ণ মূর্তি নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সকাল থেকে সাতটি বেশের একটি একটি করে পরানো হয়। প্রতি বারই নিজস্ব ঘরানার একটি করে কীর্তন গান হয়। সিমলাপাল, ভূতশহর, শালবনি, গড়বেতা, চন্দ্রকোনা, বেনাচাপড়া থেকে বিভিন্ন ধর্মসম্প্রদায়ের মানুষই ভিড় জমান এই দিন। বিকেলে মাসির বাড়ি থেকে রথে চড়ে কৃষ্ণনগরের মন্দিরে ফিরে আসেন রাধাকৃষ্ণ।ট্রাস্টের সম্পাদক বিকাশ রায় বলেন, “দীর্ঘ দিন ধরেই এই রীতি মেনে রথযাত্রা হয়ে আসছে। উল্টো রথের দিন সকালে গোকুলকুঞ্জ আমাদের বিশেষ আকর্ষণ। বহু মানুষের সমাগম হয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE