Advertisement
E-Paper

গাড়িতে তুলে সোনার ব্যবসায়ীকে গুলি

ভোররাতে পাঁশকুড়া স্টেশনে যাবেন বলে গাড়ির অপেক্ষায় ছিলেন ওড়িশার সোনার ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ পলমল। দাঁড়িয়ে ছিলেন ঘাটাল-পাঁশকুড়া রাস্তার ধারে। হঠাৎই পরিচিত আর এক সোনার ব্যবসায়ী ট্যাক্সি নিয়ে হাজির। তিনিও ওড়িশার বাসিন্দা। তাঁর গাড়িতে উঠতে তাই দ্বিধা করেননি বিশ্বজিৎবাবু।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:০০
তখনও তমলুক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিশ্বজিৎবাবু।

তখনও তমলুক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিশ্বজিৎবাবু।

ভোররাতে পাঁশকুড়া স্টেশনে যাবেন বলে গাড়ির অপেক্ষায় ছিলেন ওড়িশার সোনার ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ পলমল। দাঁড়িয়ে ছিলেন ঘাটাল-পাঁশকুড়া রাস্তার ধারে। হঠাৎই পরিচিত আর এক সোনার ব্যবসায়ী ট্যাক্সি নিয়ে হাজির। তিনিও ওড়িশার বাসিন্দা। তাঁর গাড়িতে উঠতে তাই দ্বিধা করেননি বিশ্বজিৎবাবু। কিন্তু সেই পরিচিতই গাড়ির মধ্যে বিশ্বজিৎবাবুকে গুলিতে জখম করে প্রায় একশো ভরি গয়না লুঠ করে পালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠল।

রবিবার ভোরে কোলাঘাটের দেউলবাড় গ্রামের কাছে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে বিশ্বজিৎবাবুকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। গুলি লেগেছিল বুকের বাঁ দিকে। প্রথমে তাঁকে তমলুক জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে স্থানান্তরিত করা হয় কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘জখম ওই সোনার ব্যবসায়ী সঞ্জয় নামে এক পরিচিতের কথা বলছেন। বিশ্বজিৎবাবু আমাদের জানিয়েছেন, সঞ্জয়ই তাঁকে গুলি করে গয়নার ব্যাগ কেড়ে নেয়। তারপর তাঁকে রাস্তায় ফেলে পালায়। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযুক্তের খোঁজ শুরু হয়েছে।’’

দিন পনেরো আগে চলন্ত গাড়িতে খেলনা পিস্তল দেখিয়ে লুঠের অভিযোগ উঠেছিল পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমার থানা এলাকায়। সে বারও ঘটনাস্থল ছিল ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক। গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তায় রাতে পুলিশি টহল থাকা সত্ত্বেও কী করে একের পর দুষ্কর্ম ঘটছে,ই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, আদতে ঘাটালের খড়ারের বাসিন্দা বিশ্বজিৎবাবু। তবে সোনার ব্যবসার সূত্রে গত ২৫ বছর ধরে স্ত্রী, দুই ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে তিনি কটকে থাকেন। সেখানেই তাঁর সোনার দোকান রয়েছে। তবে দাসপুরের কারিগরদের দিয়ে গয়না বানানোর জন্য মাঝেমধ্যেই তিনি আদি বাড়িতে আসেন। শনিবারও সেই কাজেই এসেছিলেন। প্রায় এক কিলোগ্রাম ওজনের নানা ধরনের সোনার গয়না ব্যাগে নিয়ে গভীর রাতে ওড়িশা রওনা দেন বিশ্বজিৎবাবু। প্রথমে ভেবেছিলেন পাঁশকুড়া থেকে ট্রেন ধরে কটক যাবেন। তবে পরে সঞ্জয়ের সঙ্গে দেখা হয়ে যাওয়ায় তাঁর গাড়িতেই কটক যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বিশ্বজিৎবাবু।

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বৌদি । নিজস্ব চিত্র।

এ দিন তমলুক জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘‘পাঁশকুড়ার মেচগ্রামের কাছে এসে খড়গপুরের বদলে কোলাঘাটের দিকে গাড়ি ঘোরায় সঞ্জয়। আমি কারণ জানতে চাইতেই রিভলভারের বাঁট দিয়ে মাথায় মারে। তখনও গয়নার ব্যাগটা আঁকড়ে থাকায় ও আমার বুকে গুলি চালায়। ব্যাগটা পড়ে যেতেই ছিনিয়ে নেয়। আর আমাকে গাড়ি থেকে ঠেলে ফেলে দেয়।’’

পুলিশ জানিয়েছে, দেউলবাড় গ্রামের কাছে জাতীয় সড়কের ধারে বিশ্বজিৎবাবুকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন এক গাড়ি চালক। তিনি কোলাঘাট থানার টহলরত পুলিশকে বিষয়টা জানান। পুলিশ বিশ্বজিৎবাবুকে উদ্ধার করে। পরে সিদ্ধা বাজারের কাছে পাওয়া যায় একটি রিভলভার। পুলিশের অনুমান, ওই রিভলভার সঞ্জয়েরই।

জাতীয় সড়কে সারারাত থাকে পুলিশি টহল, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের নজরদারিও চলে। তারপরেও কী করে দুষ্কৃতীরা এমন কাণ্ড ঘটাতে পারে, সেই প্রশ্ন উঠছে। চলতি বছরের গোড়ায় হলদিয়া-মেচেদা ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কেই মহিষাদল থানার কাপাসএড়্যায় দুষ্কৃতী ধরতে গিয়ে খুন হন এক পুলিশকর্মী। গত ২৬ অগস্ট এই জাতীয় সড়কেই খেলনা পিস্তল দেখিয়ে লুঠের অভিযোগ উঠেছিল। তারপর চলেছে ধরপাকড়। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি।

অভিযুক্ত সঞ্জয়কে ধরতে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া জেলার সব থানা তরফে সড়কে গাড়ি তল্লাশি শুরু হয়। যদিও ওই অভিযুক্তের সন্ধান মেলেনি। পুলিশ জানিয়েছে, সঞ্জয় ওড়িশায় চলে গিয়েছে। তবে বিশ্বজিতের পরিচিত হওয়া সত্ত্বেও সঞ্জয় কেন তাঁকে গুলি করে সোনার গয়না ভর্তি ব্যাগ ছিনতাই করল তা নিয়ে ধন্দে পুলিশ। এ দিকে বিশ্বজিতের উপর আক্রমণের ঘটনায় উদ্বিগ্ন তাঁর পরিবার। বিশ্বজিতের বৌদি রেবাদেবী বলেন, ‘‘আঠারো বছর বয়স থেকে বিশ্বজিৎ কটকে। তবে মাঝেমধ্যেই দাসপুরে আসে। শনিবার ব্যবসার কাজে এলেও বাড়ি আসেনি। ওর উপর কেউ হামলা করতে পারে, ভাবতেই পারি না।’’

Jewelry Businessman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy