Advertisement
E-Paper

দু’টাকার চাল পেতে ফের তৃণমূল!

বেলপাহাড়ির হাটে এসেছিলেন নয়নাগড়ার এক বৃদ্ধ। পরিচিত এক শিক্ষককে দেখতে পেয়ে ওই বৃদ্ধ জানতে চান, মমতার সরকার ক্ষমতা থেকে চলে গেলে রেশনে দু’টাকা কিলো দরে চাল কি বন্ধ হবে যাবে?

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৬ ০১:৩২

বেলপাহাড়ির হাটে এসেছিলেন নয়নাগড়ার এক বৃদ্ধ। পরিচিত এক শিক্ষককে দেখতে পেয়ে ওই বৃদ্ধ জানতে চান, মমতার সরকার ক্ষমতা থেকে চলে গেলে রেশনে দু’টাকা কিলো দরে চাল কি বন্ধ হবে যাবে?

প্রশ্ন শুনে হতবাক শিক্ষক। একই ভাবে ঝাড়গ্রাম শহরের এক বধূর কাছে নিত্য আনাজ বেচতে আসা এক সব্জি বিক্রেতা মহিলারও প্রশ্ন, দু’টাকা দরে রেশনের চালটা কি মমতার দল দেয়?’ ওই বধূ জানতে চান, কে বলেছে এ সব কথা। জবাবে মহিলাটি জানান, শাসকদলের ছেলেরা পাড়া বৈঠকে এসে বলে গিয়েছে, মমতার প্রার্থীকে ভোট না দিলে রেশনে দু’টাকা কিলো দরে চাল পাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে।

জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত এলাকায় কান পাতলেই এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই কমিশনে মৌখিক ভাবে অভিযোগ জানিয়েছে বিরোধী দলগুলি। তাদের অভিযোগ, তৃণমূল প্রার্থীর সমর্থনে ডাকা পাড়া-বৈঠকের নামে এ ভাবে ভোটারদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। ঝাড়গ্রামের সাপধরার রাস্তায় বাড়িমুখো এক দিনমজুরের কথায়, “পার্টির ছেলে ছোকরারা এসে তো হামেশাই বলে যাচ্ছে, তৃণমূল ক্ষমতায় না থাকলে চালও মিলবে না।”

জারালাটা গ্রামের এক যুবক বললেন, “বাম জমানায় আমরা ঝাড়খণ্ড পার্টি করতাম। এখন তৃণমূল। রেশনে প্রতি সপ্তাহে দু’টাকা কিলো দরে চাল ও দু’টাকা ৬২ পয়সা দরে আটার প্যাকেট পাচ্ছি। এটা চালু রাখতে গেলে তৃণমূল প্রার্থীকে আবার জেতাতে হবে, সেটাই এলাকায় প্রচার করছি।” সূত্রের খবর, এ বার ঝাড়গ্রাম, বিনপুর ও নয়াগ্রাম আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আশঙ্কা করছে শাসকদল। অবধারিত ভাবে প্রচারে উঠে আসছে রাজ্য সরকারের সাফল্যের খতিয়ান। ঝাড়গ্রাম বিধানসভার তৃণমূল প্রার্থী আদিবাসী উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদার হয়ে দিনরাত এক করে এলাকায় প্রচার করছেন লালগড় ব্লক যুব তৃণমূলের সহ-সভাপতি জলধর পণ্ডা। তিনি বলেন, “সরকারি সাফল্যের কথা শাসকদলের প্রচারে থাকাটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের কর্মীরা কখনই চাল বন্ধ হয়ে যাবে এমন কথা বলেননি। এটা অপপ্রচার।”

একই ভাবে বিনপুর বিধানসভার বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূল প্রার্থী খগেন্দ্রনাথ হেমব্রমের প্রচারে বেরিয়ে দলীয় কর্মীরা চাল নিয়ে ভোটারদের ভয় দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। নয়াগ্রাম বিধানসভার গ্রামে গঞ্জেও এমন প্রচার চলেছে। ঘটনা হল, ঝাড়গ্রাম মহকুমার চারটি বিধানসভা এলাকায় ১২ লক্ষ উপভোক্তা রেশনে দু’টাকা কিলো দরে চাল পান। এর মধ্যে ভোটার রয়েছে প্রায় সাড়ে ছয় লক্ষ। ফলে, প্রতি বিধানসভায় চাল প্রাপকদের সংখ্যাটা নেহাৎ কম নয় বলেই মনে করছেন বিরোধীরা।

কংগ্রেসের ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, “ভোট পাওয়ার জন্য তৃণমূল মারাত্মক খেলা শুরু করেছে। অবিলম্বে এই মিথ্যা প্রচার বন্ধ হোক।” ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন) নেত্রী চুনিবালা হাঁসদা বলেন, “তৃণমূলের পায়ের তলায় মাটি নেই। তাই এখন চাল নিয়ে মিথ্যা প্রচারের রাজনীতি করছে শাসকদল।” বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুখময় শতপথী বলেন, “কেন্দ্রের অনুদানের টাকায় রেশনে চাল দেওয়া হয়। আমরা বিষয়টি নিয়ে প্রচার শুরু করতেই তৃণমূল এখন মিথ্যে ভয় দেখিয়ে ভোট আদায়ের চেষ্টা করছে।” সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য প্রদীপ সরকারের কটাক্ষ, “এত দিন পুলিশের ভয় দেখিয়ে তৃণমূল দলটা চলত। কমিশনের গেরোয় এখন পুলিশকে পাশে পাচ্ছে না শাসকদল। ফলে, চাল নিয়ে মিথ্য প্রচার করে ভোটারদের ভয় দেখাচ্ছেন তৃণমূল কর্মীরা।”

ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভাপতি চূড়ামণি মাহাতো বলেন, “ভোটের আগে সব বিরোধী একজোট হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে কুত্‌সা ও মিথ্যা প্রচার শুরু করেছে। ওরা যত কুত্‌সা করবে আমাদের জনসমর্থন তত বাড়বে।” ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক নকুলচন্দ্র মাহাতো বলেন, “এ ব্যাপারে কয়েকটি রাজনৈতিক দল মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছে। সরেজমিনে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

TMC Election Campaign rice Rs2
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy