মায়ের হাতে মিষ্টিমুখ।—নিজস্ব চিত্র।
ছোট থেকেই ফুটবল পাগল ছেলেটা কোনও দিনই তেমন ঘাড়গুঁজে পড়াশোনা করেনি। তবে ছাত্র হিসাবে মেধাবীই। ধুলিয়াপুর পল্লিশ্রী বাণীমন্দিরে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত দ্বিতীয় স্থানে থাকত জয়শিস সিংহ। নবম শ্রেণি থেকে শুরু হয় প্রথম হওয়া। টেস্টে ৬৫৪ পাওয়ায় আশা বেড়েছিল, হয়তো স্কুলের নাম উজ্জ্বল করবে ছেলেটা।
হলও তাই। ৬৭৪ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিকে অন্যতম দশম হিসাবে নিজের জায়গা পাকা করে নিয়েছে জয়াশিস। এতে অবশ্য অবাক তার মা। সুরানাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা যূথিকা সিংহ বলেন, ‘‘ছেলে পড়াশোনায় ভাল বরাবরই। কিন্তু একেবারে পড়াশোনা করত না। তাই এরকম দশজনের একজন হয়ে যাবে ভাবতেই পারিনি।’’
জয়শিস নিজে অবশ্য জানিয়েছে দিনে আট ঘণ্টা পড়াশোনা করত সে। সাতটি বিষয়ে গৃহশিক্ষকও ছিল। তারপর ফুটবলই তার ধ্যানজ্ঞান। আর ভক্তি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর পায়ে। এ ছাড়া যা কিছু ভালবাসা তা ব্যোমকেশ ও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্য তোলা।
পাঁশকুড়া স্টেশন বাজার সংলগ্ন বাহারগ্রাম এলাকার বাসিন্দা আশিস সিংহ পেশায় বিমা উপদেষ্টা। তাঁর একমাত্র ছেলে জয়শিস। আছে একমেয়ে অদ্রিজা, সে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। ছেলের ফলে বেজায় খুশি বাবাও। তিনি বলেন, ‘‘চিকিৎসক হতে চায় আমার ছেলে। যতদূর সম্ভব সাহায্য করে যাব ওকে।’’
মার্কশিট বলছে অঙ্ক, ভৌতবিজ্ঞান ও জীবন বিজ্ঞানে ৯৯ করে, বাংলায় ৯২, ইংরাজিতে ৯৬, ইতিহাসে ৯৭ আর ভূগোলে ৯২। ভূগোলের নম্বর নিয়ে খানিকটা খুঁতখুঁত করছে মন। জয়শিস জানায়, ‘‘বাকি সব বিষয়ে প্রত্যাশামত নম্বর পেয়েছি। ভূগোলে আর একটু বেশি পেলে ভাল লাগত। তবে এই ফলাফলে আমি খুশি।’’
চিকিৎসক হতে চাওয়া ছাত্রের প্রিয় বিষয় জীবনবিজ্ঞান, জানেন স্কুলের শিক্ষকরাও। তবে সকলেই খুশি জয়াশিসের সাফল্যে। ইতিহাসের শিক্ষক নির্মলকুমার বর্মণ উচ্ছ্বসিত, ‘‘আমাদের স্কুলে ৭৭ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম এতখানি সাফল্য। জেলার অতি প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলটি এর আগে ২০০০ উচ্চমাধ্যমিকে জেলায় তৃতীয় স্থান পেয়েছিল। কিন্তু জয়শিসের সাফল্যে আমরা আপ্লুত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy