Advertisement
১৯ জানুয়ারি ২০২৫

লাইনে বস্তা, রাতভর থমকে ট্রেন

জঙ্গলমহলের রেল লাইনে নজরদারি সত্ত্বেও অবাঞ্ছিত ঘটনা এড়ানো গেল না। বুধবার রাতভর ঝাড়গ্রামের সর্ডিহা এলাকায় রেল লাইনে একটি পরিত্যক্ত ছোট বস্তাকে ঘিরে বোমাতঙ্ক ছড়াল। রাত ১০টা থেকে প্রায় চার ঘন্টা দক্ষিণ পূর্ব রেলের খড়্গপুর-টাটা শাখায় বন্ধ থাকল ট্রেন চলাচল।

বস্তায় মিলেছে শালপাতা।

বস্তায় মিলেছে শালপাতা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৬ ০০:০১
Share: Save:

জঙ্গলমহলের রেল লাইনে নজরদারি সত্ত্বেও অবাঞ্ছিত ঘটনা এড়ানো গেল না। বুধবার রাতভর ঝাড়গ্রামের সর্ডিহা এলাকায় রেল লাইনে একটি পরিত্যক্ত ছোট বস্তাকে ঘিরে বোমাতঙ্ক ছড়াল। রাত ১০টা থেকে প্রায় চার ঘন্টা দক্ষিণ পূর্ব রেলের খড়্গপুর-টাটা শাখায় বন্ধ থাকল ট্রেন চলাচল। দূরপাল্লার ট্রেনগুলিকে বিভিন্ন স্টেশনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়।

রেল সূত্রের খবর, বুধবার রাতে পুরীগামী ডাউন পুরুষোত্তম এক্সপ্রেসের চালক সর্ডিহায় কুসুমঘাটি ক্রসিংয়ের কাছে ডাউন লাইনের মাঝে বস্তাটি পড়ে থাকতে দেখেন। কিন্তু ট্রেনটি দ্রুত গতিতে থাকায় বস্তার উপর দিয়েই ট্রেনটি চলে যায়। খড়্গপুরে পৌঁছে চালক বিষয়টি রেল কর্তৃপক্ষকে জানান। এরপরই ঝাড়গ্রাম থেকে রেল পুলিশ এবং রেল সুরক্ষা বাহিনীর কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছন। আসে মানিকপাড়া বিট হাউসের পুলিশ এবং সিআরপিএফ। খড়্গপুর-টাটা শাখায় ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ খড়্গপুর থেকে রেলের বম্ব ডিসপোজ্যাল স্কোয়াডের সদস্যরা এসে বস্তাটিকে আঁকশি-দড়ি দিয়ে টেনে প্রায় ৭০ মিটার দূরে সরান।

তাঁরাই জানিয়ে দেন, বস্তার ভিতরে ধাতব কোনও বস্তু নেই। রাত ১টা নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছন ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশের কর্তারা। ততক্ষণে ট্রেন চালানোর সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি জেনে রীতিমতো ক্ষুব্ধ জেলা পুলিশ আধকারিকরা। তাঁরা সাফ জানিয়ে দেন, উপযুক্ত তল্লাশি ছাড়া আপ ও ডাউন দু’টি লাইনেই ট্রেন চালানোটা ঝুঁকির কাজ হবে। এরপর সিদ্ধান্ত বাতিল করেন রেল কর্তৃপক্ষ। তল্লাশির পরে রাত সওয়া ২টো নাগাদ আপ লাইনে এবং রাত আড়াইটা নাগাদ ডাউন লাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ভোরের আলো ফোটার পরে কোবরা বাহিনীর বম্ব ডিসপোজ্যাল স্কোয়াডের সদস্যরা বিশেষ পদ্ধতিতে বস্তাটি খোলেন। দেখা যায়, ভিতরে অজস্র এঁটো শালপাতার খোলা এবং পাঁউরুটির ছেঁড়া প্লাস্টিকে রয়েছে।

রেল পুলিশের এক আধিকারিক জানান, কারা কেন, এ ভাবে রেল ট্র্যাকের মাঝে বস্তাটি রেখে দিয়েছিল সেটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের সন্দেহ, ইচ্ছাকৃত ভাবে রেল ট্র্যাকের মাঝে বস্তাটি রাখা হয়েছিল। জঙ্গলমহলে রাতের বেলা রেলওয়ে ট্র্যাক পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু বস্তাটি কেন নজরদার-কর্মীদের চোখে পড়ল না, প্রশ্ন উঠেছে।

দক্ষিণ পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, “বুধবার রাতে এক ট্রেন চালকের তৎপরতায় বিষয়টি দ্রুত নজরে আসে। ওই শাখায় রেল লাইনে রাতের বেলা নিয়মিত নজরদারি চালানো হয়। নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে।”

২০১০ সালে এই সর্ডিহার রাজার বাঁধ এলাকায় রেল লাইনে নাশকতার জেরে একটি মালগাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষ হয় হয় মুম্বইগামী আপ জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের। প্রাণ হারান ১৪৮ জন যাত্রী। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জঙ্গলমহলে মাওবাদী সক্রিয়তা বাড়ার খবর পাচ্ছেন গোয়েন্দারা। এর আগে ১৫ অগস্টের সকালে গিধনি স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে একটি পরিত্যক্ত ব্যাগকে ঘিরে বোমাতঙ্ক ছড়িয়েছিল। সেই রহস্যের কিনারা এখনও হয়নি।

পুলিশের একাংশের অবশ্য ধারণা, পরিত্যক্ত ব্যাগ ও বস্তা উদ্ধারের বিষয়টিকে মোটেই হাল্কা ভাবে দেখা উচিত নয়। পরিকল্পিত ভাবে কেউ এসব করছে। এক রেল পুলিশ কর্তা বলেন, “এ ধরনের ব্যাগ রেখে যাওয়ার ঘটনাটি ‘ডামি রান’ হতে পারে। পরপর আজেবাজে জিনিসপত্র রেখে পুলিশকে বিভ্রান্ত করা। হয়তো এ ভাবে একদিন আসল বিস্ফোরক রেখে নাশকতা ঘটানোর ছক কষা হচ্ছে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Railway Rail track Authority Bag
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy