Advertisement
E-Paper

আদালতে বজ্র আঁটুনি, হাজির কর্ণ

বৃহস্পতিবার কাঁথি আদালত চত্বরে পুলিশি হেফাজত থেকে গুলি এবং বোমা ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে গিয়েছিল কুখ্যাত দুষ্কৃতী কর্ণ বেরা। পরে অবশ্য সে এবং তার আর এক সঙ্গী ধরা পড়ে। এ দিন ওই দুই জনকে ফের আদালতে হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:১৩
কাঁথি আদালত চত্বরে কড়া নিরাপত্তা। শুক্রবার।নিজস্ব চিত্র

কাঁথি আদালত চত্বরে কড়া নিরাপত্তা। শুক্রবার।নিজস্ব চিত্র

সকাল ৯টার মধ্যেই আদালত চত্বরে হাজির কমব্যাট ফোর্স এবং পুলিশ বাহিনী। আদালতে আসা ব্যক্তি এবং গাড়িতে তল্লাশি চলছে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে। সামনের দু’টি রাস্তায় ‘রোড ব্লকার’ বসিয়ে তৈরি হয়েছে অস্থায়ী চেকিং পোস্ট— মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বদলে গিয়েছে কাঁথি আদালত চত্বরের ছবিটা। বৃহস্পতিবারও যেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল, শুক্রবার সেখানেই দেখা গিয়েছে নিরপত্তার বজ্রআঁটুনি। যদিও আদালতের আইনজীবীদের প্রশ্ন, এমন আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা ক’দিন থাকবে!

বৃহস্পতিবার কাঁথি আদালত চত্বরে পুলিশি হেফাজত থেকে গুলি এবং বোমা ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে গিয়েছিল কুখ্যাত দুষ্কৃতী কর্ণ বেরা। পরে অবশ্য সে এবং তার আর এক সঙ্গী ধরা পড়ে। এ দিন ওই দুই জনকে ফের আদালতে হয়। এ দিন যাতে আর কোনও অঘটন না ঘটে, সে জন্য কোনও রকম ঝুঁকি নিতে চায়নি পুলিশ। নিরপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছিল আদালত চত্বর। জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসুর নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল দফায় দফায় আদালত চত্বরে এসে নজরদারি এবং নিরাপত্তার বিষয়টি সরেজমিনে দেখে যান।

এ দিন দুপুর দেড়টা নাগাদ কাঁথি থানা থেকে আদালতে আনা হয় ধৃত কর্ণ বেরা ও তার সঙ্গী রথীকান্ত মণ্ডলকে। রীতিমতো দড়িতে বেঁধে, কপড়ে মুখ ঢেকে তাদের কাঁথি আদালতে আনা হয়। কর্ণের বিরুদ্ধে ডাকাতি, পুলিশকে খুন-সহ একাধিক অভিযোগ ছিলই। পুলিশ সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবারের ঘটনার পরে নতুন করে অস্ত্র আইন, বিস্ফোরণ আইন, বাইক ছিনতাই, আদালত থেকে পালানো, কর্তব্যরত পুলিশকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অন্য দিকে, তাকে পালাতে সাহায্য করার জন্য রথীকান্তের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এ দিন বিচারক তাদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। ওই সময়ে ধৃতদের শনাক্তকরণ হবে।

বৃহস্পতিবারের আদালত চত্বরে বোমা বাজির পর দুষ্কৃতীরা কাঁথির প্রাণ কেন্দ্র পোস্ট অফিস মোড়ে চলে এসেছিল। আদালত চত্বরেই ধরা পড়ে গিয়েছিল রথীকান্ত। কর্ণ, মুন্না এবং সুরজিৎ গুড়িয়া ওরফে বিশ্বজিৎ সেই পোস্ট অফিস মোড়ে মিলিত হয়। ওই এলাকার সিসিটিভির ফুটেজ পুলিশের হাতে পৌঁছেছে। যা ওই মামলায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ সূত্রে প্রকাশ, কর্ণ, মুন্না, সুরজিৎ ছাড়াও চতুর্থ এক ব্যক্তিকে মোটর বাইকে বসতে দেখা গেছে। কালো টি-শার্ট পরা এক হাতে ব্যাগ ও এক হাতে বন্দুক থাকা ওই চতুর্থ ব্যক্তি শূন্যে গুলিও ছোড়ে। আপাতত ওই চতুর্থ ব্যক্তিকে চিহ্নিতকরণের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। তাদের অনুমান, ওই চতুর্থ ব্যক্তিই বাইরে থেকে বন্দুক, বোমা, ছুরি, লঙ্কার গুঁড়ো আনতে সাহায্য করেছিল কাঁথি আদালত চত্বরে।

এছাড়া, ঘটনায় প্রধান চক্রী মুন্না বলেই অনুমান। তাই তাকে ধরতে কর্ণকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে পুলিশ। আদালত চত্বরে বহিরাগতরা কর্ণের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ করল তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। মেদিনীপুরের সংশোধনাগারে বসে মোবাইলে কর্ণ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল কি না, সে প্রশ্নও উঠেছে। জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, “আরও সন্দেহভাজন কয়েকজন রয়েছেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে সব কিছু বলা সম্ভব নয়। আর কাঁথি আদালতের নিরাপত্তা বাড়ানো হবে। শীঘ্রই সিসি টিভি ক্যামেরা বসানো হবে।’’

কাঁথি আদালতের নিরাপত্তা নিয়ে এদিন ক্রিমিনাল বার অ্যাসোসিয়েশন এবং সিভিল বার অ্যাসোসিয়েশন বৈঠক করে। ক্রিমিনাল বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অসিতবরণ মাইতি বলেন, “৪২ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। এমন ঘটনা ঘটেনি। তাই আমরা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক বিকাশ বণিকের কাছে বেশ কিছু দাবি নিয়ে স্মারকলিপি দেব।’’ তাঁদের দাবির মধ্যে রয়েছে, আদালত চত্বরে সিসিটিভি বসানো, সশস্ত্র প্রশিক্ষিত পুলিশ নিয়োগ, বম্ব স্কোয়াডের এক প্রশিক্ষিত সদস্য রাখা, মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে পরীক্ষা করা ইত্যাদি।

Karna Bera Contai Court Security
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy