শিলান্যাসের প্রস্তুতির পরেও বাজেটে অর্থ বরাদ্দ না থাকায় ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন ছিল। দোলাচলে ছিলেন ঘাটালবাসী। অবশেষে দীর্ঘ ছয় দশকের বহুল চর্চিত ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য বুধবার রাজ্য বাজেটে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণা হল। খুশি ঘাটালবাসী। উল্লসিত ঘাটাল তৃণমূল।
বন্যা রোধে মাস্টার প্ল্যান হবে, গেল লোকসভা ভোটের প্রচারে কথা দিয়েছিলেন ঘাটালের সাংসদ দেব। মুখ্যমন্ত্রী সেই কথা রাখার ব্যবস্থা করেছেন। দেব এ দিন বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী কথা দিয়ে কথা রেখেছেন। ঘাটাল মাস্টার প্লানের জন্য টাকা বরাদ্দ করেছেন। আমি এবং ঘাটাল লোকসভা এলাকার প্রত্যেক বাসিন্দাদের তরফ থেকে, বিশেষ করে যাঁরা বন্যার সময় প্রচণ্ড কষ্ট পান, তাঁদের হয়ে দিদিকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।" মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তাঁর ছবি নিয়ে বুধবার বিকেলে শহরে মিছিল করেছেন তৃণমূল কর্মীরা। মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রকল্পের শ্বেতপত্র প্রকাশ করে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষের দাবি জানিয়েছে মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ সংগ্রাম কমিটি। তবে দু'হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের ৫০০ কোটি বরাদ্দ নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধী বিজেপি, সিপিএম।
সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া অবশ্য বলেন, "ঘাটালবাসীকে বন্যার দুর্গতি থেকে মুক্তি দিতে প্রকল্পের কাজ শুরু এখন সময়ের অপেক্ষা।
মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরেই তার শিলান্যাস হবে। ঘাটালবাসীর কাছে আবেদন, আপনারা সহযোগিতা করুন।
পাশে থাকুন।"
গত বছর লোকসভা ভোটের আগে ঘাটালের সাংসদ দেবকে পাশে নিয়ে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রাজ্য সরকার একাই করবে বলে ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোট মিটতেই প্রকল্প রূপায়ণের প্রস্তুতি শুরু হয়।
সেচ দফতরের পদস্থ আধিকারিকেরা দফায় দফায় ঘাটালে এসে কাজ শুরু করেন। সংশোধিত ডিপিআর মাফিক কোথায় খাল কাটা হবে, নতুন করে নদী খনন হবে, কোথায় পাম্প হাউস, কোথায় নদীর তলদেশ থেকে দেওয়াল তৈরি হবে, সব চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। সেই সঙ্গে প্রকল্প রূপায়ণে কোন এলাকায় কত জমি দরকার, জমি মালিকদের তালিকা তৈরির প্রস্তুতি চলছিল। ইতিমধ্যেই প্রকল্প রূপায়ণের জন্য জেলাস্তরে নজরজারি কমিটি, ব্লক ও শহরে লেভেল কমিটি গঠন গিয়েছে। ফেব্রুয়ারিতেই প্রকল্পের শিলান্যাস হবে বলে সাংবাদিক বৈঠক করে সে জানিয়েছে ডিস্ট্রিক্ট লেভেল মনিটরিং কমিটি।
ইতিমধ্যে প্রকল্পের বিভিন্ন কাজের চূড়ান্ত দরপত্র দেওয়া শুরু হয়েছে। ঘাটাল শহরে শিলাবতী নদীতে আধুনিক যন্ত্র বসিয়ে মাটি পরীক্ষা চলছে। তবে এত কিছুর পরেও প্রশ্ন ছিল, টাকার সংস্থান নিয়ে।
রাজ্য বাজেটে বরাদ্দের পরে
সেই সংশয় কেটেছে। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ সংগ্রাম কমিটির সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র নায়েক বলেন, "মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। দ্রুত গোটা প্রকল্পের শ্বেতপত্র প্রকাশ করে কাজ শুরুর দাবি জানাচ্ছি।
প্রকল্পের তদারকি কমিটিতে আমাদের কমিটিকে অন্তর্ভুক্ত করারও আর্জি জানাচ্ছি।" ঘাটালের সিপিএম নেতা অশোক সাঁতরার অবশ্য দাবি, "দু'হাজার কোটির প্রকল্পে
৫০০ কোটি টাকায় কী কাজ হবে?" ঘাটালের বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাটেরও কটাক্ষ, "৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করে ঘাটালের মানুষকে বোকা বানাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্র সাহায্য না করলে মাস্টার-প্ল্যান রূপায়ণ
সম্ভব নয়।"
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)