একা হাতিতে রক্ষা নেই বাঘ তার দোসর। মাধ্যমিক পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে মেটাতে তাই চিন্তার শেষ নেই জঙ্গলমহল এলাকায়।
সম্প্রতি সিমলিপালের জঙ্গল থেকে আসা বাঘিনি জ়িনতের গলায় রেডিয়ো কলারের সঙ্কেত থেকে বোঝা গিয়েছিল, ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়িতেও ঘোরাফেরা করেছে সে। পরে পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের দিক থেকে একটি পূর্ণবয়স্ক বাঘেরও বেলপাহাড়িতে ঢোকার প্রমাণ মিলেছিল। এই বাঘটির গলায় অবশ্য রেডিয়ো কলার ছিল না। দিন কয়েক আগেও বেলপাহাড়ি-পুরুলিয়া সীমানাতেও বাঘের গতিবিধির ইঙ্গিত মিলেছে বলেছে সূত্রের খবর। যদিও বন দফতর অবশ্য দাবি করছে, এই মুহূর্তে ঝাড়গ্রাম জেলায় বাঘ থাকার নতুন করে প্রমাণ মেলেনি। আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।
এই মুর্হূতে বাঘের উপস্থিতির প্রমাণ না থাকলেও শুধুমাত্র ঝাড়গ্রাম জেলার তিনটি বনবিভাগ এলাকা মিলিয়ে রবিবার ৯৩টি হাতি ছিল বলে বন দফতর সূত্রেই খবর। রবিবার ভোরেই ঝাড়গ্রাম জেলার লালগড় বনাঞ্চলে হাজির হয়েছে ৭০টি হাতির দল। চাঁদড়ার বনাঞ্চল থেকে হাতিগুলি মেদিনীপুর বনবিভাগের লালগড়ের বনাঞ্চলে ঢোকার পর ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে ঝিটকা, ভাউদি, লালগড়, কাঁটাপাহাড়ি বিটের জঙ্গলে ঘুরে বেরাচ্ছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার রূপনারায়ণ বনবিভাগে ১৬টি, খড়্গপুর বনবিভাগে ১৯টি হাতি ছিল রবিবার।
পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম দুই জেলাতেই মাধ্যমিক পরীক্ষা উপলক্ষে ‘হাতি উপদ্রুত’ এলাকার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দুই জেলাতেই কয়েকটি এলাকায় পরীক্ষার্থীদের ‘এসকর্ট’ করে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছনো হবে। সামনে থাকবে ‘ঐরাবত’ গাড়ি। পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জঙ্গলের ছোট রাস্তা এড়িয়ে বড় রাস্তা দিয়ে যাতায়াতের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষাকেন্দ্রের আশেপাশে ও যাতায়াতের রাস্তায় নজর রাখবেন বনকর্মীরা। ঝাড়গ্রাম বনবিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, জঙ্গলপথের নিরাপত্তার জন্য ২০টি ড্রপ গেট থাকবে। এছাড়া ঐরাবত-সহ দশটি গাড়িতে টহল দেবেন বনকর্মীরা। বাড়তি সতর্কতা হিসেবে অতিরিক্ত গাড়িও থাকবে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদেরি বলেন, ‘‘জঙ্গল লাগোয়া এলাকার পরীক্ষার্থীদের যাতায়াতে যাতে কোনও রকম অসুবিধা না হয়, তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।’’ ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক সুনীল আগরওয়ালও জানান, জঙ্গল লাগোয়া এলাকার পরীক্ষার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে ও ফিরতে পারে তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। বন দফতর প্রয়োজনীয় নজরদারি করছে।
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝাড়গ্রাম জেলার ৩৯টি পরীক্ষাকেন্দ্রের মধ্যে বেলপাহাড়ি এসসি হাইস্কুল, বেলপাহাড়ি গার্লস হাইস্কুল, রোহিণী সিআরডি হাইস্কুল, রগড়া রাজা নরসিংহ মল্ল অ্যাকাডেমি, পাথরা হাইস্কুল, কুলটিকরি গার্লস, বেলিয়াবেড়া কেসিএম, মহাপাল শ্রীবিদ্যাপীঠ, নয়াগ্রাম বাণী বিদ্যাপীঠ, খড়িকা ভীমার্জুন এসসি হাইস্কুল, লালগড় রামকৃষ্ণ বিদ্যালয়, লালগড় সারদামণি বালিকা বিদ্যালয়ে যে সব পরীক্ষার্থী আসবে তাদের যাত্রাপথে নজরদারি থাকবে। লালগড় এলাকায় মাইকে সতর্কতামূলক প্রচার করা হচ্ছে। পশ্চিম মেদিনীপুর প্রশাসন ও বন দফতর সূত্রে খবর, মেদিনীপুর (সদর) ব্লকের চাঁদড়া হাইস্কুল এবং নয়াগ্রাম হাইস্কুল, শালবনির জয়পুর হাইস্কুল, গড়বেতা-২ এর (গোয়ালতোড়) নয়াবসত হাইস্কুল এবং কিয়ামাচা হাইস্কুল, কেশিয়াড়ির কুসুমপুর হাইস্কুল ‘হাতি উপদ্রুত’ এলাকার মধ্যে রয়েছে। পরীক্ষার দিনগুলিতে যাতায়াতের পথে হাতির গতিবিধির দিকে সতর্ক নজর রাখা হবে।
দুই জেলার প্রশাসন সূত্রেই জানা গিয়েছে, পরীক্ষার্থীদের সুবিধার্থে বাস ও বাস-স্টপের সংখ্যাও বাড়ানো হচ্ছে। একাধিক হাসপাতালে কিছু শয্যাও সংরক্ষিত থাকছে। কোনও কারণে পরীক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে বা অঘটন ঘটলে যাতে তার সুষ্ঠু চিকিৎসা হয়।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)