দুই-ছবি: আমলাশোল গ্রামে রাস্তার ধারে সৌর পথবাতি। —নিজস্ব চিত্র
বাম আমলে যা ছিল ক্ষত, তৃণমূল সরকার সেটাকেই ‘মডেল’ হিসেবে তুলে ধরতে চায়। লোকসভা ভোটে খারাপ ফলের পরে জঙ্গলমহলের হাসি ধরে রাখতে মরিয়া রাজ্য সরকারের হাতিয়ার এ বার আমলাশোল। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, আমলাশোলের পরিকাঠামো উন্নয়ন ও বাসিন্দাদের পরিষেবা দিতে রাজ্যের বিভিন্ন তহবিল থেকে মোট ১ কোটি ১৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে।
আমলাশোল গ্রামটি বেলপাহাড়ি ব্লকের বাঁশপাহাড়ি পঞ্চায়েতের অধীন। ২০০৪ সালে এই গ্রামে অনাহার আর অপুষ্টিতে চার জন শবর-সহ ৫ আদিবাসীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল। বাম আমলের ওই ঘটনায় তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে বাঁশপাহাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল। তৃণমূল আমলের শুরুতে আমলাশোলে শবরেরা বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হয়। গড়ে ওঠে পানীয় জল প্রকল্প। সেচ, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিতে উদ্যোগী হয় সরকার। ২০১৮ সালে ওই পঞ্চায়েত তৃণমূলের হাতছাড়া হয়। সেটি যায় আদিবাসী সমন্বয় মঞ্চের দখলে। সদ্য সমাপ্ত লোকসভা ভোটের ফলেও আমলাশোলে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। ঘটনাচক্রে লোকসভা ভোটের পরই আমলাশোলে ফের নানা উন্নয়নমূলক কাজ শুরু হয়েছে। ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আয়েরা রানি বলেন, ‘‘আমলাশোলকে মডেল গ্রাম হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নানা ধরনের উন্নয়ন হচ্ছে। এই গ্রামের জন্য একটি অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবাও চালু করা হবে।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আমলাশোল গ্রামে এখন ১১১টি পরিবারের বাস। এর মধ্যে ২৫টি শবর পরিবার। ইতিমধ্যেই সেখানে ৯ লক্ষ টাকা খরচ করে ১৫টি সৌর চালিত পথবাতি বসানো হয়েছে। ৫ লক্ষ টাকা খরচে তৈরি হয়েছে পানীয় জলের প্রকল্প। ওই গ্রামের শবর পরিবারগুলিকে আগেই বিভিন্ন প্রকল্পে বাড়ি দেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে ৭টি বাড়ি কিছুটা খারাপ হয়ে যাওয়ায় সেগুলির সংস্কার করা হয়েছে। গ্রামের ভিতরে একাধিক রাস্তা তৈরির জন্য প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। তার কাজও শুরু হয়েছে। গ্রামের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর জন্য ১০ লক্ষ ৮১ হাজার টাকা ব্যয়ে ওয়ার্কিং শেড তৈরির কাজ চলছে। আমলাশোল প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন একটি খেলার মাঠ ও শিশু উদ্যান তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সংস্কার ও বেড়া দেওয়ার কাজ চলছে। সেখানে রান্নাঘর তৈরির কাজ শীঘ্রই শুরু করা হবে জানা গিয়েছে। প্রাথমিক স্কুলের গ্রন্থাগারের বই ও আনুসঙ্গিক আসবাব কেনার জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। এখানেই মডেল শৌচাগার কমপ্লেক্স তৈরির জন্য সাড়ে ৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। পাঁচটি সৌরচালিত জল প্রকল্পের জন্য ২৩ লক্ষ ও বাড়ি বাড়ি জৈব সারের পিট তৈরির জন্য ৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে।
কাঁকড়াঝোর থেকে আমলাশোল যাওয়ার ঢালাই রাস্তার বেহাল অবস্থা। —নিজস্ব চিত্র
গ্রামবাসীর একাংশের অভিযোগ, আমলাশোলে উন্নয়নের কাজ আগেও হয়েছিল। তবে পঞ্চায়েত স্তরে চূড়ান্ত স্বজনপোষণ আর পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতির জন্য তার সুফল সাধারণ মানুষ পর্যন্ত বিশেষ পৌঁছয়নি। এ বারও যদি সেটা হয় তাহলে জঙ্গলমহলের হাসি কতটা ফিরবে সেই নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এছাড়া উঠছে অগ্রাধিকারের প্রশ্ন। যেমন কাঁকড়াঝোর থেকে আমলাশোল যাওয়ার ঢালাই রাস্তাটি উপযুক্ত চওড়া নয়। তাই আমলাশোলবাসীকে ৩ কিলোমিটার হেঁটে বা সাইকেলে কাঁকড়াঝোরে গিয়ে বাস ধরতে হয়। একসঙ্গে এত প্রকল্পের কাজ চললেও ওই রাস্তা চওড়া করার বিষয়ে নিয়ে এখনও কোনও আশ্বাস মেলেনি। বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুখময় শতপথীর কটাক্ষ, ‘‘আমলাশোলের উন্নয়ন তো উপলক্ষ মাত্র। বিধানসভা ভোটকে মাথায় রেখেই এসব করা হচ্ছে। প্রকৃত উন্নয়ন হচ্ছে না।’’
তৃণমূল অবশ্য আমলাশোলের উন্নয়নের সঙ্গে ভোটের সম্পর্ক নেই বলেই দাবি করছে। দলের জেলা সভাপতি বিরবাহা সরেন বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে জঙ্গলমহলে ধারাবাহিক উন্নয়ন চলছে। এর সঙ্গে ভোট-রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy