নয়নতারা আচার। নিজস্ব চিত্র
মৃত্যুর পরে অঙ্গদানের মাধ্যমে অন্যের শরীরে বেঁচে থাকবেন মা— এই ‘আশা’য় মৃত মায়ের চক্ষু এবং দেহ দান করলেন ভগবানপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের দুই ভাই। দিলেন সমাজের পাশে থাকার বার্তা।
স্থানীয় সূত্রের খবর, ভগবানপুর গ্রামের বাসিন্দা নয়নতারা আচার (৬৫) বেশ কয়েকদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। শুক্রবার গভীর রাতে তিনি মারা যান। নয়নতারাদেবীর দুই ছেলে চিন্ময় এবং নারায়ণ আচার। ওই রাতেই তাঁরা পূর্ব মেদিনীপুরের ‘রুরাল মেডিক্যাল প্র্যাকটিশনার্স অ্যাসোসিয়েশনে’র (আরএমপিএ) সঙ্গে দেহদানের ইচ্ছা প্রকাশ করে যোগাযোগ করেন। ওই সংগঠন অঙ্গ, দেহ দান সংক্রান্ত বিষয়েও কাজ করে।
চিন্ময় জানিয়েছেন, তাঁদের এক পরিচিত দেবাশিষ আচার ওই সংগঠনের ভগবানপুর-১ ব্লকের সম্পাদক। তাঁর কাছ থেকেই তাঁরা দেহদানের বিষয়টি জানতে পারেন। ওই সংগঠনের তরফে তাঁদের যোগাযোগ হয় হাওড়ার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার। তার পরেই শনিবার সকালে ওই সংস্থার তরফে চিকিৎসকেরা এসে নয়নতারাদেবীর চোখের কর্নিয়া সংগ্রহ করেন। দুপুরে জেলা আরএমপিএ’র সহযোগিতায় বৃদ্ধার দেহ নিয়ে যায় হাওড়ার ওই সংস্থা। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণার কাজে দেহটি আরজিকর মেডিক্যাল হাসপাতালে দান করা হবে।
বৃদ্ধার ছেলে নারায়ণ বলেন, ‘‘চিকিৎসাশাস্ত্রের নিয়ম মেনে প্রাথমিক ভাবে মৃতদেহ রাখা হয়েছিল। পরে তা নিয়ে যান সংগঠনের লোকেরা।’’ তাঁর কথায়, ‘‘মায়েরও ইচ্ছে ছিল। তাই অঙ্গ এবং শরীর দান করার সিদ্ধান্ত নিই। যদি একজনের অঙ্গদানে অন্য কেউ বেঁচে উঠতে পারেন, সে তো ভাল কাজ। সেটাই করেছি। অন্যদেরও আহ্বান জানাচ্ছি।’’
পূর্ব মেদিনীপুর ‘আরএমপিএ’র সম্পাদক নিশিকান্ত পাল বলেন, ‘‘কুসংস্কার ভেঙে দেহদান এবং অঙ্গদানের বিষয়ে মানুষ ধীরে ধীরে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। ভগবানপুরের ঘটনা তার প্রমাণ। শুক্রবার রাতে আমরা খবর পেয়েছিলাম। সেই মতো এ দিন ভোরেই ভগবানপুরে গিয়ে বৃদ্ধার চক্ষু সংগ্রহ করে তা আই ব্যাঙ্কে পাঠানো হয়। দেহ হাওড়ার এক সংস্থা নিয়ে গিয়েছে। যা আরজিকর হাসপাতালে দান করা হবে। গ্রামের মানুষ এই বিষয়ে আমাদের সহযোগিতা করেছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy