Advertisement
১৮ মে ২০২৪

পথ-কুকুরদের নিয়েই ভালবাসার ভুবন কুটুদা-র

কে যেন একবার গায়ে গরম জল ঢেলে দিয়েছিল। দগদগে ক্ষত নিয়ে দোকানের সামনে কুঁইকুঁই করে কাঁদছিল কুকুর ছানাটি। সদ্য সন্তানহারা রাধেশ্যাম বণিক চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। পরম মমতায় শুশ্রূষা করে সারিয়ে তুলেছিলেন রাস্তার কুকুর ছানাটিকে।

কুটুদার দোকানে পথ সারমেয়দের খাওয়ার ভিড়। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

কুটুদার দোকানে পথ সারমেয়দের খাওয়ার ভিড়। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৬ ০১:০৪
Share: Save:

কে যেন একবার গায়ে গরম জল ঢেলে দিয়েছিল। দগদগে ক্ষত নিয়ে দোকানের সামনে কুঁইকুঁই করে কাঁদছিল কুকুর ছানাটি। সদ্য সন্তানহারা রাধেশ্যাম বণিক চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। পরম মমতায় শুশ্রূষা করে সারিয়ে তুলেছিলেন রাস্তার কুকুর ছানাটিকে। আদর করে নাম দিয়েছিলেন ছেবলি। তারপর পেরিয়ে গিয়েছে দু’টো দশক। কাল্টি, কালু, ছেবলি, কাইল্যা, ভুলিদের নিয়েই রাধেশ্যামবাবু ওরফে কুটুদার ভালবাসার ভুবন। ঝাড়গ্রাম শহরের ওল্ড টেলিফোন এক্সচেঞ্জ রোডের ধারে মুদি ও মনোহারি দোকানটির সামনে ওই সারমেয়দের নিয়েই সময় কেটে যায় তাঁর।

খদ্দের সামলে পোষ্যদের পরম স্নেহে চার বেলা খাওয়ানো, তাদের শরীরের ক্ষতে মলয় লাগানোটা কুটুদার দৈনিক রুটিন। গোটা ২৫ পথ কুকুরের নিরাপদ আশ্রয় কুটুদার দোকান চত্বর। রোজগারের সিংহভাগ টাকা খরচ হয়ে যায় ওই পথ কুকুরদের পরিচর্চাতেই। সকাল সাতটায় কুটুদার বাড়ির উঠোনে রান্না মাছ-ভাত আর তিনটে বিস্কুট দিয়ে ব্রেকফাস্ট সারে কাইল্যা, কাল্টিরা। সকাল ৮ টায় কুটুদা দোকানে চলে আসেন। রাতজাগা পোষ্যদের আরামের ঘুমের জায়গা তখন দোকানের সামনের চত্বর। সকাল ১০ টায় মুড়ি আর লাড্ডু খেয়ে যে যার মতো পাড়া বেড়াতে যায়। কয়েকজন শুয়ে থাকে দোকানের সামনে। দুপুর ১২ টায় ভিটামিন ট্যাবলেট আর চিনি দিয়ে মাখা মুড়ি গুঁড়ো খাওয়ার জন্য দোকানের সামনে পোষ্যরা ফের হাজির হয়। দুপুরে দোকান বন্ধ করে কুটুদা বাড়িতে যান। তখন তাঁর বাড়িতে লাঞ্চে মাছ-ভাত, রবিবার অবশ্য মাংস-ভাত। শুক্রবার কুটুদা নিরামিষ খান। সেদিন পোষ্যদের দুধ-ভাত খাওয়ানোর জন্য বাড়তি কয়েক লিটার দুধ কেনা হয়। সন্ধ্যা ছ’টায় ফের মুড়ি-লাড্ডু আর বিস্কুট। রাতে বাড়ির উঠোনে আবার মাছ-ভাত। এর মধ্যে বছরে নিয়ম করে কয়েকজনকে জন্ম নিয়ন্ত্রণের ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়।

কুটুদা ও স্ত্রী খুকুদেবী নিঃসন্তান। দু’বার তাঁদের সদ্যোজাত দু’টি সন্তানের মৃত্যু হয়। সন্তানশোকে মুহ্যমান বণিক দম্পতির জীবনের মোড় অবশ্য ঘুরিয়ে দেয় ছেবলি। এখন পোষ্যদের জন্য রান্নাবান্না সারতে দিন কেটে যান খুকুদেবীর। খুকুদেবীর কথায়, “আলাদা রান্না করি না। আমরা যা খাই, ওরাও তাই খায়। একসঙ্গে আমাদের আর পোষ্যদের রান্না করি।”

তবে এই সারমেয় প্রেমের জন্য নানা অশান্তি ও ঝক্কিও পোহাতে হয়েছে রাধেশ্যামবাবুকে। দিতে হয়েছে জরিমানাও। দোকানের খদ্দের হাইস্কুলের শিক্ষক ক্ষিতীশচন্দ্র মাহাতো, অবসরপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী নগেন্দ্রনাথ সিংহ-রাও সারমেয়প্রেমী হয়ে উঠেছেন। ক্ষিতীশবাবু বলেন, ‘‘প্রতিদিন সন্ধ্যায় দোকানে গিয়ে কিছু হাতে গড়া রুটি দিয়ে আসি।” আর রাধেশ্যামবাবুর কথায়, “পথের কুকুরগুলো সন্তানতুল্য। ওদের নিয়েই
জীবন-যন্ত্রণা ভুলে থাকি।”

অধরা কুকুর-ঘাতক

নিজস্ব সংবাদদাতা • হলদিয়া

রাস্তার একটি প্রসূতি কুকুরকে খুনের ২৪ ঘণ্টা পরও অভিযুক্ত অনুপকুমার দাসকে গ্রেফতার করতে পারল না হলদিয়া থানার পুলিশ। মঙ্গলবার ঘটনার পর থেকেই পলাতক হলদিয়া বন্দরে একটি ঠিকাদারি সংস্থার অস্থায়ী এই শ্রমিক। পুলিশ জানিয়েছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, সারমেয়টিকে প্রসবকালীন অবস্থায় পিটিেয় মারা হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে ১১(১)(এল) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্তকে ধরার চেষ্টা চলছে। আর যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে, তার সম্পাদক রীতা ভট্টাচার্য জানান, আগামী ২৮ অক্টোবর কুকুরকে রক্ষা করা নিয়ে সচেতনতা শিবির করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এলাকার বাসিন্দারা অভিযুক্তের গ্রেফতারের দাবি নিয়ে সরব হয়েছেন বুধবারও। এ দিনও এলাকায় পুলিশ পিকেট ছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

stray dogs
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE