Advertisement
E-Paper

জল মিলছে না মানিকপাড়ার তিন মৌজায়

বিনে পয়সায় এলাকাবাসীকে পানীয় জল খাইয়ে এখন হাবুডুবু খাচ্ছেন ঝাড়গ্রাম ব্লকের মানিকপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ, তৃণমূলের ক্ষমতাসীন পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ পরিকল্পনাবিহীন ভাবে রাস্তার ধারে টাইম কলের সংখ্যা বাড়িয়ে গিয়েছেন। বাড়ানো হয়েছে জল সরবরাহের সময়সীমা। আর তার জেরে বেড়েছে বিদ্যুতের খরচ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৫ ০০:১৪
মানিকপাড়ার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রাঙ্গণে জল নেওয়ার ভিড়। পঞ্চায়েত অফিস লাগোয়া জল সরবরাহ প্রকল্প। (ইনসেটে) ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

মানিকপাড়ার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রাঙ্গণে জল নেওয়ার ভিড়। পঞ্চায়েত অফিস লাগোয়া জল সরবরাহ প্রকল্প। (ইনসেটে) ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

বিনে পয়সায় এলাকাবাসীকে পানীয় জল খাইয়ে এখন হাবুডুবু খাচ্ছেন ঝাড়গ্রাম ব্লকের মানিকপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ, তৃণমূলের ক্ষমতাসীন পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ পরিকল্পনাবিহীন ভাবে রাস্তার ধারে টাইম কলের সংখ্যা বাড়িয়ে গিয়েছেন। বাড়ানো হয়েছে জল সরবরাহের সময়সীমা। আর তার জেরে বেড়েছে বিদ্যুতের খরচ। বিল বাবদ ৪ লক্ষ ১৪ হাজার ৯৩৬ টাকা বকেয়া থাকায় গত বুধবার জল প্রকল্পের বিদ্যুত্‌ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে বিদুত্‌ বন্টন সংস্থা। এর জেরে গত তিন দিন ধরে মানিকপাড়ার তিনটি মৌজায় পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। চরম সমস্যায় পড়েছেন এলাকার প্রায় সাত হাজার বাসিন্দা। এলাকার মানিকপাড়া, ললিতাশোল ও কৃষ্ণগঞ্জ এই তিনটি মৌজায় রাস্তার ধারে ৭৪টি টাইম কল রয়েছে। এলাকার ১,৭০০ পরিবারের তেষ্টা মেটে ওই টাইম কলের জলে। কিন্তু গত তিন দিন ধরে জল নেই। প্রশাসন সূত্রের খবর, বিগত পাঁচ বছরের বিপুল পরিমাণ ওই বিল মেটাতে রাজি হয় নি ঝাড়গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতি।

শুক্রবার মানিকপাড়ায় গিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভের আঁচ পাওয়া গেল। প্রবীণ বাসিন্দা নৃপতি চক্রবর্তী, গৃহবধূ বনলতা রুইদাস, সুমিত্রা রুইদাস-রা বলেন, “টানা তিনদিন পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। অথচ এ ব্যাপারে প্রশাসনের কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই।” বৃষ্টির সময় পরিস্রুত জল না মিললে পেটের অসুখের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। এলাকার আমজনতার ভরসা বলতে টাইম কলের জল। পঞ্চায়েতের জলের অভাবে পাতকুয়োর জলেই তাঁরা তেষ্টা মেটাচ্ছেন। কেউ কেউ স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের রিজার্ভারের জল নেওয়ার জন্য ভিড় করছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাম আমলে ২০০৫ সালে ঝাড়গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে মানিকপাড়ায় জল প্রকল্পটি চালু হয়েছিল। সাব মার্সিবল পাম্প চালিত গভীর নলকূপের জল তুলে পাইপ লাইনের মাধ্যমে রাস্তার ধারে টাইম কলে দিনে দু’বার জল সরবরাহ করার ব্যবস্থা হয়। শুরুতে ছিল ১৫টি টাইম কল। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে টাইম কলের সংখ্যা বেড়ে হয় ৭৪টি। পানীয় জল ব্যবহারের জন্য বাম আমলে সর্বদলীয় ভাবে গঠিত জল উপভোক্তা কমিটির মাধ্যমে প্রতি পরিবার ও দোকানদারদের কাছ থেকে মাসে দশ টাকা করে ‘জল কর’ নেওয়া হত। সংগৃহীত টাকায় জলপ্রকল্পের অস্থায়ী কর্মীদের সাম্মানিক দেওয়া হত এবং বিদ্যুতের বিলের আংশিক খরচ বহন করা হত। বিদ্যুত্‌ বিলের বাকি খরচ বহন করতেন পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ। ২০০৯-১০ সালে মাওবাদী সন্ত্রাসপর্বে এলাকায় জল কর আদায় বন্ধ হয়ে যায়। সেই সময় থেকেই বকেয়া রয়েছে বিদ্যুতের বিল। ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতার পালা বদলের পরে পঞ্চায়েতের নিয়ন্ত্রণ নেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক ভাবে গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল। কিন্তু অভিযোগ, পানীয় জল সংক্রান্ত নতুন উপভোক্তা কমিটি গঠন করা হয় নি। বিদ্যুত্‌ বন্টন সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৫ মে পর্যন্ত বকেয়া বিলের পরিমাণ ৪ লক্ষ ১৪ হাজার ৯৩৬ টাকা।

কয়েক মাস আগে বিদ্যুত্‌ বন্টন সংস্থা জল প্রকল্পের বিদ্যুত্‌ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার নোটিশ জারি করে। এর পরই মাস খানেক আগে পঞ্চায়েত অফিসে এলাকাবাসীদের নিয়ে একটি প্রস্তাবিত উপভোক্তা কমিটির তালিকা তৈরি করা হয়। কিন্তু কী ভাবে বকেয়া বিল মেটানো হবে তা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তই নিতে পারেন নি পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ। মানিকপাড়ার বাসিন্দা ফরোয়ার্ড ব্লকের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “তৃণমূলের পঞ্চায়েত বোর্ড পুরোপুরি ব্যর্থ। যাঁরা জনগণকে পানীয় জল খাওয়াতে পারেন না, তাঁদের নৈতিক দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করা উচিত।”

মানিকপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান নন্দলাল মাহাতোর দাবি, “প্রকল্পটি যেহেতু পঞ্চায়েত সমিতির তাই বিদ্যুতের বিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষই মেটাবেন।” ঝাড়গ্রামের বিডিও অনির্বাণ বসু বলেন, “সমস্যার কথা শুনেছি। বকেয়া বিল মেটানোর উদ্যোগ নিচ্ছি।” রাজ্য বিদ্যুত্‌ বন্টন সংস্থার ঝাড়গ্রামের ডিভিশনাল ম্যানেজার উজ্জ্বল রায় বলেন, “বকেয়া বিল মেটানো হলে আমরা পুনরায় সংযোগ দেব।”

কবে তেষ্টা মিটবে, চাতক-চোখে অপেক্ষায় রয়েছেন মানিকপাড়াবাসী!

jhargram water cpm trinamool tmc
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy