Advertisement
E-Paper

অনুমোদন ছাড়াই মেডিক্যাল কলেজ

বায়ো হোমিওপ্যাথি কোর্সের ছাত্র দমদমের দীপঙ্কর মিশ্র বলেন,  “ওরা বলেছে তিন বছরের কোর্স। দিতে হবে মোট ৪৫ হাজার টাকা। বলা হয়েছে, কলেজ ও কোর্স রাজ্য সরকারের অনুমোদন প্রাপ্ত। তবে ঠিকমতো খোঁজ নিইনি।’’

শান্তনু বেরা

শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৪১
কলেজে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি

কলেজে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি

‘প্যারামেডিক্যাল ও ডাক্তারি কোর্সে ভর্তি চলছে’— স্থানীয় সংবাদপত্রে এ রকম বিজ্ঞাপন দিয়েই পড়ুয়া সংগ্রহ করছিল কাঁথি ধনদিঘি এলাকার ‘সুস্থি ইলেকট্রো হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল। ওই সংস্থা বেআইনি কারবার করছে বলে পূর্ব মেদিনীপুরের সহকারী জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সমুদ্র সেনগুপ্তের কাছে অভিযোগ করলেন কাঁথিরই এক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক। ওই চিকিৎসকের দাবি, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর এবং কাঁথি পুরসভার অনুমোদন ছাড়া এ ভাবে কলেজ ও হাসপাতাল চালানো যায় না।

বৃহস্পতিবার ধনদিঘির প্রফেসর কলোনির ওই কলেজে গিয়ে দেখা মিলল অধ্যক্ষ শক্তিপদ শীটের। শুধু কলেজ নয়, ঘুপচি অন্ধকার ঘরে একই সঙ্গে তিনি ‘পরমানন্দ ই এইচ ক্লিনিক’ নামে একটি চেম্বারও চালান। নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে শক্তিপদবাবু স্বীকার করে নিলেন, এই কলেজ ও হাসপাতালের জন্য রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর ও কাঁথি পুরসভার কোনও অনুমোদন নেই। তাহলে তো বিষয়টি অবৈধ? নির্বিকার গলায় শক্তিপদবাবুর জবাব, “ রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের অনুমোদনে কী হবে! তিনটি কাউন্সিলের অনুমোদন নিয়ে আমি এই কলেজ ও হাসপাতাল চালাচ্ছি।’’

জানা গিয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুরের ‘জেনারেল কাউন্সিল অফ ইলেক্ট্রো হোমিওপ্যাথি সিস্টেম অফ মেডিসিন’-এর অনুমোদন নিয়ে এই কলেজে দেড় বছরের ‘ফেলো কাউন্টমেট্টি সিস্টেম’ এবং ‘সার্টিফিকেট অফ আমোরাইজ অফ ইলেক্ট্রো হোমিওপ্যাথি’ নামে দু’টি কোর্স করানো হচ্ছে। পড়ুয়া প্রতি নেওয়া হচ্ছে ১২ হাজার টাকা। এক বছর থিওরেটিক্যাল ও ছ’ মাসের প্রাকটিক্যাল ক্লাস হচ্ছে। ‘সেন্ট্রাল কাউন্সিল অফ ইলেক্ট্রো হোমিওপ্যাথি সিস্টেম অফ মেডিসিন কাউন্সিল’-এর অনুমোদন নিয়ে ‘ডিপ্লোমা ইলেক্ট্রো হোমিওপ্যাথি’ এবং কলকাতার ‘ডাঃ সুসলার বায়োকেমিক মেডিক্যাল কলেজে’র শাখার অনুমোদনে এখানে পড়ানো হয় এম. বি. এস অৰ্থাৎ বায়ো হোমিওপ্যাথি। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মণ্ডল অবশ্য বলেন, ‘‘এ রকম কোনও কাউন্সিল রাজ্যে আছে বলেই জানি না। এখান থেকে পাশ করে কেউ সরকারি চাকরি জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবে না।’’

তারপরেও অবশ্য কাঁথি-দিঘা বাইপাসে একটি বেসরকারি স্কুলের দোতলায় দিব্যি চলছে এই ডাক্তারি কলেজ। তিনটি বর্ষ মিলিয়ে মোট ২০ জন পড়ুয়াও রয়েছেন। বায়ো হোমিওপ্যাথি কোর্সের ছাত্র দমদমের দীপঙ্কর মিশ্র বলেন, “ওরা বলেছে তিন বছরের কোর্স। দিতে হবে মোট ৪৫ হাজার টাকা। বলা হয়েছে, কলেজ ও কোর্স রাজ্য সরকারের অনুমোদন প্রাপ্ত। তবে ঠিকমতো খোঁজ নিইনি।’’

কলকাতার ডাঃ সুসলার বায়োকেমিক মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অরবিন্দ পাল আবার জানালেন, বাড়তি টাকা নিচ্ছে বলে গত জুনে কাঁথির ওই কলেজের অনুমোদন তাঁরা বাতিল করেছেন। ‘জেনারেল কাউন্সিল অফ ইলেক্ট্রো হোমিওপ্যাথি সিস্টেম অফ মেডিসিন’-এর প্রেসিডেন্ট ডাঃ এস কে বিশ্বাস বলেন, “আমরা শুধু ট্রেনিংয়ের জন্য অনুমোদন দিয়েছি। পড়ুয়াদের ডাক্তারি পড়ানোর কোনও অনুমোদন দেওয়া হয়নি।’’ ‘সেন্ট্রাল কাউন্সিল অফ ইলেক্ট্রো হোমিওপ্যাথি সিস্টেম অফ মেডিসিন কাউন্সিল’-এর সম্পাদক অশোককুমার মল্লিক অবশ্য বলেন, “আমরা শক্তিপদবাবুকে অনুমোদন দিয়েছি।’’

কলেজ বেআইনি বলে যাঁরা কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে, সেই জেলা সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সমুদ্রবাবু জানিয়েছেন, অভিযোগ তদন্তের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, “রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য দফতরের অনুমোদন ছাড়া এমন কলেজ ও হাসপাতাল চলতে পারে না। শুধু কাউন্সিলের অনুমোদন দিয়ে হয় না।

Notice College
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy