Advertisement
E-Paper

জেলা হাসপাতালে সব রোগের পথ্য এক

শুধু ওষুধ নয়, রোগের ধরন অনুযায়ী চিকিৎসক স্থির করে দেন রোগীর পথ্যও। এমনকী ওষুধের ‘কোর্স’ শেষ হওয়ার পর রোগ সেরে ওঠার অনেকটাই নির্ভর করে পথ্যের উপর। কিন্তু সেই পথ্যটাই যে ঠিক ঠিক পাচ্ছেন না সরকারি হাসপাতালের রোগীরা। ব্লক বা গ্রামীণ হাসপাতাল নয়, নিয়ম মেনে খাবার দেওয়া হয় না পূর্ব মেদিনীপুর জেলা হাসপাতালে।

আনন্দ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৪৯
পথ্যের হাল এমনই। নিজস্ব চিত্র।

পথ্যের হাল এমনই। নিজস্ব চিত্র।

শুধু ওষুধ নয়, রোগের ধরন অনুযায়ী চিকিৎসক স্থির করে দেন রোগীর পথ্যও। এমনকী ওষুধের ‘কোর্স’ শেষ হওয়ার পর রোগ সেরে ওঠার অনেকটাই নির্ভর করে পথ্যের উপর। কিন্তু সেই পথ্যটাই যে ঠিক ঠিক পাচ্ছেন না সরকারি হাসপাতালের রোগীরা। ব্লক বা গ্রামীণ হাসপাতাল নয়, নিয়ম মেনে খাবার দেওয়া হয় না পূর্ব মেদিনীপুর জেলা হাসপাতালে।

তমলুক হাসপাতালের দেওয়ালে ইংরাজিতে দিব্যি টাঙানো রয়েছে রোগীর পথ্যের তালিকা। ইনডোরে চিকিৎসাধীন সাধারণ প্রাপ্তবয়স্ক রোগীর জন্য সকালে ৫০ গ্রাম পাউরুটি, ৫০ গ্রামের একটি ডিম সেদ্ধ, ১০০ গ্রামের সিঙ্গাপুরি কলা ও ২৫০ মিলিলিটার গরম দুধ দেওয়ার কথা। সেই সঙ্গে ১০ গ্রাম চিনি বরাদ্দ।

দুপুরে ৪৫০ গ্রাম ভাত, রান্না করা ১০০ গ্রাম ডাল, নানা রকম সব্জি দিয়ে তরকারি ২২৫ গ্রাম এবং ৫০ গ্রাম মাছের সঙ্গে ১০০ গ্রাম ঝোল।

রাতে ৩০০ গ্রাম ভাত, ১০০ গ্রাম ডাল, ২২৫ গ্রাম তরকারি ও ৫০ গ্রামের একটি ডিম সেদ্ধ।

শিশু ও ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে পথ্য তালিকায় তরকারির হেরফের করে দেওয়া হয়। যেমন ডায়াবেটিক রোগীদের একটি করে করলা সেদ্ধ খেতে দেওয়া হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে ওজনও একটু কমিয়ে বাড়িয়ে দেওয়া হয় বলা জানা গেল হাসপাতাল সূত্রে। কিন্তু মোটের উপর একই রকম খাবার বরাদ্দ সকলের জন্য। কিন্তু তেমনটা যে হওয়ার কথা নয়।

জেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪০০ রোগী ভর্তি থাকেন। তাঁদের সকালের টিফিন, দুপুর ও রাতের খাবার সরবরাহ করা হয়। কিন্তু তা যে আদৌ সঠিক ভাবে হয় না তা স্বীকার করে নিলেন হাসপাতাল সুপার নিজেই। শনিবার জেলা হাসপাতালের সুপার সুপার গোপাল দাস বলেন, ‘‘চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়াবেটিক রোগীদের আলাদা খাদ্য তালিকা করা হয়। সেই অনুযায়ী খাবার বরাদ্দও করার ব্যবস্থা রয়েছে। বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে, তরল খাবারের ব্যবস্থাও রয়েছে। কিন্তু জেলা হাসপাতালে কোনও পুষ্টিবিদ নেই। তাই প্রত্যেক রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী আলাদা খাদ্য তালিকা দেওয়া সম্ভব নয়।’’

যদিও নিয়ম অনুযায়ী প্রতি রোগীর জন্য রান্না হওয়ার কথা আলাদা পাত্রে বা সম্পূর্ণ আলাদা ভাবে। যে রোগীর কোলেস্টোরল আছে তিনি যে তরকারি খাবেন, যাঁর ইউরিক অ্যাসিড রয়েছে তাঁর জন্য সে খাবার উপযুক্ত না-ও হতে পারে। তবে?

উত্তরটা তো জানা— ‘‘নিউট্রিশিয়নিস্ট নেই।’’

শুক্রবার সন্ধ্যায় জেলা হাসপাতালে রাতের খাবার বিলির সময় গিয়ে দেখা গেল ভাতের সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে মুসুর ডাল, কুমড়ো-পটলের তরকারি এবং একটি সেদ্ধ ডিম। খাবার ঠিক আছে? প্রশ্ন করতেই হাসপাতালের চিকিৎসাধীন নন্দকুমারের টেংরাখালির বাসিন্দা মঙ্গল মাইতি বলেন, ‘‘এই ভাত, তরকারিতে পেট ভরে নাকি। কুমড়ো-পটলের এই তরকারি তো মুখে তোলা যায় না।’’ ভগবানপুরের কাঞ্চন দাস, কাঁথির মারিশদা এলাকার সুমিত্রা দাসরা জানান, খাবারের যা পরিমাণ তাতে কোন মতেই একজনের পেট ভরা সম্ভব নয়।

তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, চিকিৎসকের পরামর্শ মেনেই ভাতের পরিমাণ ঠিক করা হয়। বেশি ভাত দেওয়ার কথা তো নয়। শনিবার দুপুরের খাবারেও দেখা গেল ভাত, মুসুর ডাল, পেঁপে-কাঁচকলার তরকারি ও মাছ ভাজা দেওয়া হল। চিকিৎসাধীন তমলুকের নকিবসানের বাসিন্দা নির্মল ভক্তার আবার ‘মাছের সাইজটা’ পছন্দ হয়নি। মেচেদার বাসিন্দা গোপাল মাইতির দাবি, ‘‘হাসপাতালের দেওয়া খাবার মোটেই ভাল নয়। এ বিষয়ে প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিত।’’নন্দকুমারের ছবিরানি মেটা বলেন, ‘‘খাবারের পরিমাণ একটু কম-বেশী যাই হোক, তরকারি একদম খাওয়া যায় না।’’

জেলা হাসপাতালে খাবার সরবরাহের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থার কর্তা পাপ্পু সিংহের দাবি করেন, ‘‘সরকারি ডায়েট চার্ট মেনেই হাসপাতালের রোগীদের খাবার দেওয়া হয়। পরিমাণ ও গুণগত মান ঠিক রাখার জন্য সবসময় নজরদারি চলে।’’ নজরদারির কথা বলেছেন হাসপাতাল সুপারও। রোগীরাও অবশ্য তা অস্বীকার করেননি। তবু সে খাবার যে স্বাস্থ্য-সহায়ক নয় তা বলাই বাহুল্য।

district medicines
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy