E-Paper

হঠাৎ মেডিক্যালের ভোলবদল!

ছবিগুলো মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পরিদর্শন’ ঘিরেই রাতারাতি ভোলবদল হয়েছে হাসপাতালের। সোমবারই ‘তৈরি থাকার’ নির্দেশ চলে এসেছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২৩ ০৯:৫০
An image of Mamata Banerjee

মেদিনীপুর মেডিক্যালে  মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার বিকেলে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

ওড়িশার বালেশ্বরের বাহানাগায় ট্রেন দুর্ঘটনায় জখমেরা যে সব ওয়ার্ডে ভর্তি, তার সামনে রাতারাতি টাঙানো হল ফ্লেক্স। সেখানে লেখা, ‘সার্জিক্যাল অবজারভেশন ওয়ার্ড, বালেশ্বর ট্রেন এক্সিডেন্ট’। পুলিশের একটি কেন্দ্র ছিল। হাসপাতাল চত্বরে দেখা গেল আরও একটি সহায়তা কেন্দ্র। সেটি বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের। হাসপাতালের একটি গেটের কাছে পুরসভা আগেই একটি সহায়তা কেন্দ্র খুলেছিল। সোমবার সেই কেন্দ্রটি দেখা যায়নি। মঙ্গলবার অবশ্য পুরসভার সহায়তা কেন্দ্র দেখা গিয়েছে। জরুরি বিভাগের সামনে। এখানেই শেষ নয়, হাসপাতাল চত্বরের বেশ কিছু এলাকা নীল-সাদা রঙের কাপড় দিয়ে ঘেরাও হয়েছে।

ছবিগুলো মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পরিদর্শন’ ঘিরেই রাতারাতি ভোলবদল হয়েছে হাসপাতালের। সোমবারই ‘তৈরি থাকার’ নির্দেশ চলে এসেছিল। তারপর এই পদক্ষেপ। সাফসুতরো করা হল হাসপাতাল চত্বর। ছড়ানো হল ব্লিচিং। পরিষ্কার হল আগাছা। বারবারই সাফাই হল সেই ওয়ার্ডগুলো, যেখানে দুর্ঘটনায় জখমেরা চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তদারকিতে এলেন পুরপ্রধান সৌমেন‌ খান।

এই সব দেখে রোগীর পরিজনেদের একাংশের প্রশ্ন, হাসপাতালের পরিবেশ সারা বছর এ ভাবে ঝকঝকে, চকচকে থাকে না কেন! মেডিক্যালের এক আধিকারিকের অবশ্য দাবি, ‘‘রোজ যেমন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়, এদিনও তেমনটাই করা হয়েছে। আলাদা করে সে ভাবে কিছুই পরিবর্তন করার দরকার পড়েনি!’’

ভোলবদলের এই তৎপরতা কেন? একাধিক মহল মনে করাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী আগেও কয়েকবার এই হাসপাতালে এসেছেন। কখনও দুর্ঘটনায় জখমদের সঙ্গে দেখা করতে, কখনও পরিদর্শনে। এখানে কোথায় কী ‘খামতি’ রয়েছে, সে সবই তাঁর জানা। বছর দুয়েক আগে, এক বৈঠকেও এই হাসপাতালের এক পরিষেবা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘মেদিনীপুর কিন্তু হ য ব র ল হয়ে যাবে! এটা হতে দেওয়া যায় না।’’ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনকে সতর্ক করেই এ কথা বলেছিলেন মমতা। একাধিক মহলের অনুমান, বাড়তি তৎপরতা সেই সূত্রেই। সোমবার রাতে ওই হাসপাতালে এসে সবকিছু খতিয়ে দেখে যান জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদেরী, জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার, জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী প্রমুখ। মঙ্গলবার দুপুরে ওই তিন আধিকারিকই ফের পরিদর্শনে আসেন। দুপুরে হাসপাতালে এসে সবকিছু খতিয়ে দেখে যান রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম।

জেলা হাসপাতালটি ২০০৪ সালে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে উন্নীত হয়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে তো বটেই, আশেপাশের ভিন্ জেলা থেকেও অনেকে চিকিৎসার জন্য এখানে আসেন। তবে সকলে সময় মতো পরিষেবা পান না বলেই অনুযোগ। মেডিক্যালে একাধিক বিভাগের পরিকাঠামো অত্যন্ত দুর্বল বলেই দাবি একাংশ রোগীর পরিজনেদের। যেমন কার্ডিওলজি বিভাগ। শেষমেশ এখানে ক্যাথল্যাব চালু হলেও এর পরিষেবা নিয়ে রয়েছে নালিশ।

এদিন মেডিক্যালের অন্য ‘চেহারা’ তুলে ধরতে তৎপর ছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রাজ্য পুলিশের একাংশ আধিকারিক অবশ্য বুঝিয়ে দেন, সবকিছু ‘ঢেকে’ ফেলার দরকার নেই। অন্যদিন যেমনটা থাকে, তেমন থাকুক। ‘স্যর, এখানে ভিউ- কাটার দিয়ে দিই?’ জানতে চেয়েছিলেন হাসপাতালের এক আধিকারিক। জরুরি বিভাগের অদূরে, বাইরে এক জায়গায় ‘ভিউ- কাটার’ দিতে চেয়েছিলেন তিনি। যাতে সেখানকার অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ‘ঢেকে’ ফেলা যায়। পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়ে দেন, ‘‘এখানে ভিউ-কাটারের দরকার নেই। এটা জরুরি বিভাগে যাওয়ার রাস্তা। এখানে গাডরেল বসানোরও দরকার নেই।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Mamata Banerjee medical college midnapore

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy