Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

টাঁকশালের টাকায় স্কুলের ভোলবদল

গরিব পড়ুয়াদের গৃহশিক্ষক রাখার সামর্থ্য নেই। স্কুলে নতুন বিজ্ঞান বিভাগ খুলেছে। অথচ পরীক্ষাগারে পরিকাঠামো নেই। নেই কম্পিউটার। মুশকিল আসান শালবনি টাঁকশাল।

নতুন পাঠাগারে ছাত্রীরা। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

নতুন পাঠাগারে ছাত্রীরা। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

সুমন ঘোষ
শালবনি শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:২৫
Share: Save:

গরিব পড়ুয়াদের গৃহশিক্ষক রাখার সামর্থ্য নেই। স্কুলে নতুন বিজ্ঞান বিভাগ খুলেছে। অথচ পরীক্ষাগারে পরিকাঠামো নেই। নেই কম্পিউটার। মুশকিল আসান শালবনি টাঁকশাল।

পঞ্চাশের দশকে মাত্র ২৭ জন ছাত্র নিয়ে গড়ে ওঠে শালবনি নিচু মঞ্জুরী বালিকা বিদ্যালয়। বেশিরভাগ ছাত্রীর বই কেনার সামর্থ্য নেই। বেতনও দিতে পারত না অনেকে। আর বাড়িতে গৃহশিক্ষক রাখা তো স্বপ্ন।

স্কুল ভবনও ছিল জীর্ণ। তিনতলা ভবনের বারান্দায় গ্রিল ছিল না। দুর্ঘটনার আশঙ্কা ছিল। আর বারান্দা দিয়ে সহজেই শ্রেণিকক্ষে ঢুকে পড়ত হনুমান। হনুমানের আতঙ্কে শ্রেণিকক্ষের দরজা-জানলা বন্ধ রেখেও ক্লাস করতে হয়েছে। ২০১৩ সালে স্কুলে বিজ্ঞানবিভাগ খোলে। অথচ বিজ্ঞানের পরীক্ষাগারে উপযুক্ত সরঞ্জামই ছিল না।

টাঁকশালের সাহায্যে বদলে গিয়েছে সবই। বারান্দায় গ্রিল বসেছে। বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষাগারেও এসেছে বিভিন্ন সরঞ্জাম। পদার্থবিদ্যার শিক্ষিকা পৌষালী সামন্তর কথায়, “সরঞ্জাম না থাকায় আলোর কোনও পরীক্ষা ছাত্রছাত্রীদের দেখাতে পারতাম না। টাঁকশালের সাহায্যে ‘অপটিক্যাল বেঞ্চ’ পাওয়ায় আলোর পরীক্ষাগুলি করতে পারি।”

বদল এসেছে আরও। নিরাপত্তায় স্কুলে বসেছে সিসিটিভি ক্যামেরা। চালু হয়েছে ‘বায়োমেট্রিক’ হাজিরা। বসানো হয়েছে ‘ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন’। হস্টেলের আবাসিকদের জন্য মশারি, কম্বল, বিছানাও কেনা হয়েছে। এত আয়োজনের বেশিরভাগটাই হয়েছে টাঁকশালের আর্থিক সাহায্যে। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্পের অর্থ, বিধায়ক, সাংসদ তহবিলের অর্থও উন্নয়নে খরচ করা হয়েছে।

সাহায্য পেয়ে আপ্লুত পড়ুয়ারাও। দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী শিল্পা চক্রবর্তী বা মুনমুন পাত্রের বই কেনার সামর্থ্য ছিল না। শিল্পা স্কুল থেকেই রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সংস্কৃত, কম্পিউটার ও ইংরেজি ব্যাকরণ বই পেয়েছে। মুনমুন পেয়েছে ইংরেজি ব্যাকরণ, জীবনবিজ্ঞান ও ভৌতবিজ্ঞান বই। তাঁদের কথায়, “এই স্কুলে ভাই ও আমি পড়ি। এত বই কেনা, গৃহশিক্ষক রাখা- বাবা এত খরচ দিতে পারেন না। স্কুল তাই বই দিয়ে সাহায্য করেছে।”

দ্বাদশ শ্রেণির পরমা সিংহ স্কুলের কোচিং ক্লাসেই পড়ে। তার কথায়, “বাবা গৃহশিক্ষক রাখতে পারেননি। স্কুল থেকে হস্টেলের পড়ুয়াদের সঙ্গে আমাদেরও সব বিষয়েই গৃহশিক্ষক দিয়ে পড়ানোর ব্যবস্থা করেছে।” স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বাসবী ভাওয়াল বলেন, “ইতিমধ্যেই দু’জন ছাত্রীর খরচ বহন করছে টাঁকশাল। আরও কয়েকজন ছাত্রী চিহ্নিত করতে বলেছে। তাঁদেরও দায়িত্ব নেবে টাঁকশালই।” প্রধান শিক্ষিকার কথায়, “আমরা টাঁকশাল কর্তৃপক্ষকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি, কেন সাহায্য প্রয়োজন। সাহায্য পাওয়ার পর খরচের হিসাবও দেখিয়েছি। তাই আবদার করলে বিমুখ হতে হয় না।”

ভাদুতলা হাইস্কুল, মৌপাল হাইস্কুলের মতো শালবনির আরও অনেক স্কুল আগেই টাঁকশালের সাহায্য পেয়েছে। বছর দু’য়েক হল আর সাহায্য না মেলায় এই স্কুলগুলির প্রধান শিক্ষকদের মন খারাপ। ভাদুতলা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিতেশ চৌধুরী বলেন, “বছর দু’য়েক হল টাঁকশাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, টাঁকশাল থেকে বৃত্তাকারে ১০ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যের স্কুলগুলিকেই সাহায্য করা হবে। আমরা আর সাহায্য পাচ্ছি না।”

পড়ুয়াদের মিড-ডে মিল খাওয়ার জন্য শেড, পরীক্ষাগারের সরঞ্জাম, বৈদ্যুতিন পাখা-সহ একাধিক সাহায্য পেয়েছে ধান্যশোল জেএসএম হাইস্কুল। তাঁরা অবশ্য এখনও সাহায্য পাচ্ছে। মাসকয়েক আগে বজ্রাঘাতে এই স্কুলের পড়ুয়ারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক গোপালচন্দ্র সাঁতরা বলেন, “স্কুলে বজ্রপাত নিরোধক যন্ত্রও বসিয়ে দিয়েছেন টাঁকশাল কর্তৃপক্ষ।”

স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের কথায়, স্কুলের উন্নয়নে সাহায্য পেতে হন্যে হয়ে ঘুরতে হয়। কিন্তু টাঁকশাল সহায় হওয়ায় এলাকার স্কুলগুলির ছোট-বড় সব সমস্যাতেই সাহায্য মিলছে। বদলাচ্ছে স্কুলগুলির চেহারাও। টাঁকশালের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার প্রকাশকুমার সামন্তরায় বলেন, “সামাজিক উন্নয়নের তাগিদ থেকেই আমরা বিভিন্ন ধরনের সাহায্য দিয়ে থাকি। স্কুলকে যেমন দেওয়া হয় তেমনই এলাকার উন্নয়নেও সাহায্য করে থাকি।” কিন্তু টাঁকশাল থেকে ১০ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যেই শুধু সাহায্য কেন? তাঁর কথায়, “আগে কাছের এলাকাগুলির উন্নয়ন জরুরি। সেখানকার মানুষ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চাহিদা মিটলে আমরাও সাহায্যের পরিধি বাড়াতে থাকব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mint students school
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE