এক বছরের শিশুকে খুনের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হল মায়ের। সোমবার সাজা শুনিয়েছে মেদিনীপুর আদালত। সরকারপক্ষের আইনজীবী গৌতম মল্লিক বলেন, “এটা জঘন্যতম অপরাধ। মা নিজের শিশুপুত্রকে খুন করেছে। এতে কঠোর সাজাই হওয়া উচিত।” অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী অনিমেষ অধিকারী জানান, রায়কে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে যাবেন।
সোমবার দুপুর সওয়া বারোটা। মেদিনীপুরের সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক প্রসাদকুমার রায়ের এজলাসে আনা হয় অণিমা দাসকে। গত শুক্রবারই অভিযুক্ত অনিমাকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। এ দিন ছিল সাজা ঘোষণা। এজলাসে এসে এক কোণে দাঁড়িয়েছিলেন এই গৃহবধূ। বিচারক জানতে চান, সাজা ঘোষণার আগে তিনি কিছু বলতে চান কি না। বিচারকের প্রশ্ন শুনে বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে ছিলেন অণিমা। পরে একবারই তাঁকে চোখের জল মুছতে দেখা যায়। বিচারক ফের জানতে চান, তাঁর কিছু বলার আছে কি না। এর পর অণিমার আর্জি, তাঁর আর এক ছেলে রয়েছে। সেই ছেলেকে তিনি মানুষ করতে চান। সাজা ঘোষণার আগে আদালত যেন এই বিষয়টি ভেবে দেখে। এর পর দু’পক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য শোনার পর অণিমাকে সশ্রম যাবজ্জীবন কারা দন্ডের সাজা শোনান বিচারক। সাজা ঘোষণার পর ফের পুলিশি ঘেরাটোপে এজলাসে ছাড়েন এই গৃহবধূ। যান পুলিশ লক-আপে। সেখান থেকে মেদিনীপুর জেল।
২০১৫ সালের ১০ মার্চ ডেবরার ভবানীপুরে খুন হয় সুমন দাস নামে এক বছরের এক শিশুপুত্র। ওই দিন সকালে বাড়ির ছাদ থেকে সুমনের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। অণিমাই তাঁর ছোট ছেলেকে ছাদে নিয়ে গিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় কুপিয়ে খুন করে বলে অভিযোগ। ঘটনার পর অভিযোগ দায়ের করেন সুমনের জেঠু অসিত দাস। অভিযোগ পেয়ে খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় অণিমাকে। মেদিনীপুরে সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতে মামলা চলে। এই মামলায় সবমিলিয়ে ১১ জন সাক্ষ্য দেন। এরমধ্যে অবশ্য ৬ জনকে ‘বিরূপ’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সাক্ষ্য দেন একাধিক পুলিশকর্মীও।
অণিমার দাবি ছিল, ছেলে ছাদে পড়ে গিয়ে জখম হয়। মাথায় চোট পায়। পরে তার মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অবশ্য এই দাবি নস্যাৎ করে। রিপোর্টে শিশুপুত্রকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর প্রমাণ মেলে। সুমনের শরীরের তিন জায়গায় আঘাত ছিল বলে দেখা যায়। অভিযোগপত্রে অসিতবাবুও দাবি করেছিলেন, ‘তিনি ছাদে গিয়ে দেখেন, ছেলেটি রক্তাক্ত অবস্থায় ছাদের উপর পড়ে রয়েছে। অণিমা দাসকে দেখেছিলেন চিৎকার করে বলছে, ‘আমি আমার ছেলেকে খুন করেছি, বেশ করেছি।’ ঠিক কী কারণে অনিমা ওর বাচ্চাকে খুন করল তা বলতে পারব না।’ পারিবারিক অশান্তির জেরেই এই ঘটনা বলে তদন্তে নেমে জানতে পারে পুলিশ। পুলিশ এও জানতে পারে, সেই সময় মাঝেমধ্যেই স্বামী তন্ময় দাসের সঙ্গে মতবিরোধ হত অনিমার। সাজা ঘোষণার পর সরকারপক্ষের আইনজীবী গৌতমবাবু বলেন, “কোনও মা নিজের শিশুকে খুন করবে, এটা ভাবাই যায় না।”