Advertisement
২৪ মে ২০২৪

নতুন জেলায় অধিকার ফিরবে, আশায় মুন্ডারা

নতুন জেলায় এ বার নিজেদের অধিকার বুঝে নিতে চান বিরসা মুন্ডার উত্তরসূরীরা!মুন্ডা সম্প্রদায়ের অভিযোগ, আদিবাসী হয়েও সরকারি সুযোগ থেকে তাঁরা বঞ্চিত। এমনকী সরকারি নিয়মের বেড়াজালে জঙ্গলমহলে জাতিগত শংসাপত্র পাওয়ার ক্ষেত্রেও মুন্ডারা সমস্যায় পড়ছেন।

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৭ ০০:৩৩
Share: Save:

নতুন জেলায় এ বার নিজেদের অধিকার বুঝে নিতে চান বিরসা মুন্ডার উত্তরসূরীরা!

মুন্ডা সম্প্রদায়ের অভিযোগ, আদিবাসী হয়েও সরকারি সুযোগ থেকে তাঁরা বঞ্চিত। এমনকী সরকারি নিয়মের বেড়াজালে জঙ্গলমহলে জাতিগত শংসাপত্র পাওয়ার ক্ষেত্রেও মুন্ডারা সমস্যায় পড়ছেন। মাতৃভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও মাতৃভাষায় শিক্ষার অধিকারের দাবিতে গত কয়েক বছর ধরে প্রশাসনিক মহলে দরবার করে চলেছে সারা ভারত মুন্ডা সমাজ। এ বার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ভেঙে নতুন ঝাড়গ্রাম জেলা গঠিত হওয়ায় আশায় বুক বাঁধছে মুন্ডাদের সামাজিক সংগঠন। ঝাড়গ্রাম জেলার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত। আদিবাসী মুন্ডারা হলেন ১৮ শতাংশ। ঝাড়গ্রাম জেলার ৮টি ব্লকে কমবেশি মুন্ডাদের বাস। তবে, গোপীবল্লভপুর, বেলিয়াবেড়া ও সাঁকরাইল ব্লকে মুন্ডাদের জনবসতি বেশি।

ঊনবিংশ শতকের শেষের দিকে ছোটনাগপুর এলাকায় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন আদিবাসী সমাজ সংস্কারক বিরসা মুন্ডা। ইংরেজ শাসকদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে আদিবাসী মুন্ডাদের সংগঠিত করে মুন্ডা বিদ্রোহের সূচনা করেন তিনি। বিরসার আন্দোলনের জেরে নাকাল হয় ইংরেজ শাসকের আরক্ষা-বাহিনী। দমনমূলক নীতি নিয়ে বিরসা ও তাঁর শতাধিক সঙ্গীকে গ্রেফতার করে ব্রিটিশ সরকার। ১৯০০ সালের ৯ জুন রাঁচির কারাগারে বিরসার মৃত্যু হয়। বিরসার মৃত্যুর পরে ছোটনাগপুর এলাকায় ইংরেজ অত্যাচার বেড়ে যায়।

মুন্ডাদের আদি বাসস্থান ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চল। ঊনবিংশ শতকের শেষের দিকে ইংরেজ শাসকদের অত্যাচারে পালিয়ে এসে বাংলা-ওড়িশার সুবর্ণরৈখিক এলাকায় আশ্রয় নেয় মুন্ডাদের একাংশ। বিরসার উত্তরসূরীরা আদিবাসী হলেও ঝাড়গ্রাম জেলায় অসংখ্য মুন্ডা পরিবার রয়েছেন, যাঁদের আদিবাসী হওয়ার প্রমাণ স্বরূপ জাতিগত শংসাপত্র নেই। মুন্ডা শিশুরা মাতৃভাষায় পড়াশোনার সুযোগও পায় না। নব্বইয়ের দশকে ওড়িশার শিক্ষাব্রতী রুইদাস সিংনাগ ‘মুন্ডারি বাণী’ লিপি তৈরি করেন। সারা ভারত মুন্ডা সমাজের উদ্যোগে ঝাড়গ্রাম জেলায় ১৫টি অস্বীকৃত প্রাথমিক স্কুলে মুন্ডারি ভাষায় পড়ানো হয়।

মুন্ডাদের জাতিগত শংসাপত্র পাওয়ার জন্য পূর্বপুরুষের ১৯৫২ সালের জমির দলিল দেখাতে হয়। কিন্তু ছোটনাগপুর থেকে ছিন্নমূল হয়ে আসা মুন্ডাদের অনেকেরই জমির দলিল নেই। ফলে, বাংলা ও ওড়িশায় বসবাসকারী মুণ্ডাদের অনেকেই জাতিগত শংসাপত্র পাচ্ছেন না। সাঁওতালি ভাষার মতো মুন্ডারি ভাষাকেও সংবধানের অষ্টম তফসিলে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে কেন্দ্রীয় আদিবাসী প্রতিমন্ত্রী জুয়াল ওরামের সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি দিয়েছেন মুন্ডা সমাজের প্রতিনিধিরা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের কাছেও দাবিপত্র দেওয়া হয়েছে।

সারা ভারত মুন্ডা সমাজের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য স্বপন সিং বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা হচ্ছে। তাঁদের কাছে আমাদের সমস্যা ও দাবির বিষয়গুলি জানিয়ে আবেদন করা করা হবে।” ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ মন্ত্রী চূড়ামণি মাহাতো বলেন, “জাতিগত শংসাপত্র পাওয়ার নিয়ম সরলীকরণ করা হয়েছে। সমস্যা মেটাতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। বাদবাকি দাবির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Munda people Rights
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE