Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
National Human Rights Commission

National Human rights Commission: পুলিশের পক্ষপাতিত্বের নালিশ শুনল কমিশন

সেখানে এক মহিলা জানান, ভোট পরবর্তী হিংসার শিকার হয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন তিনি।

মেদিনীপুর সার্কিট হাউসে। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

মেদিনীপুর সার্কিট হাউসে। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২১ ০৫:৫৭
Share: Save:

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দু’টি দল বুধবার পৌঁছল দু’টি জেলায়। পশ্চিম মেদিনীপুরের দলের কাছে পৌঁছে অভিযোগকারীরা পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন। আর ঝাড়গ্রামের দলটি পৌঁছে গিয়েছিল অভিযোগকারীদের দুয়ারে।

এ দিন সন্ধ্যায় মেদিনীপুরে আসে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের একটি দল। ওঠে সার্কিট হাউসে। সেখানে ভিড় করেছিলেন অভিযোগকারীরা। একে একে তাঁরা নিজেদের অভিযোগ নথিভুক্ত করান। সেখানে এক মহিলা জানান, ভোট পরবর্তী হিংসার শিকার হয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন তিনি। থানার আইসি নাকি তাঁকে পুলিশের বদলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। পরে দলের নেতৃত্বে থাকা, জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্য রাজুল দেশাই বলেন, ‘‘কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে আমরা এসেছি। আমাদের কাছে অনেক অভিযোগ গিয়েছে। অভিযোগকারীদের কথা শুনতেই এসেছি। অভিযোগ নথিভুক্ত করেছি। প্রত্যেকেরই গণতান্ত্রিক অধিকার রয়েছে। যাঁদের সঙ্গে অন্যায় হয়েছে, তাঁরা প্রতিবাদে সরব হতেই পারেন।’’ অভিযোগকারীদের সূত্রে জানা যাচ্ছে, এ দিন জেলার তিন আইসি, পাঁচ ওসি- র নামে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ শুনেছে দলটি। জানা যাচ্ছে, পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার দীনেশ কুমারের সঙ্গেও কথা বলেছেন রাজুল। পুলিশ সুপারের কাছ থেকে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছেন তিনি।

সার্কিট হাউসে মহিলাদের ভিড়ে মিশেছিলেন অর্পিতা নায়েক, বুল্টি মণ্ডল, নমিতা জানা, আলপনা পালেরা। এক মহিলা বলেছেন, "আমার বাড়িতে তৃণমূলের ছেলেরা চড়াও হয়েছিল। বলেছিল হয় আমাকে না- হয় আমার মেয়েকে তুলে নিয়ে যাবে। ভয় সপ্তাহ দুয়েক বাড়ি থেকে বেরোতে পারিনি। মেয়ের এ বার উচ্চমাধ্যমিক দেওয়ার কথা ছিল।’’ কমিশনের দলটির কাছে অভিযোগ নথিভুক্ত করাতে শতাধিক বিজেপি কর্মী-সমর্থক ভিড় করেছিলেন। সকলের সঙ্গে পৃথকভাবে দেখা করতে পারেনি দলটি। মেদিনীপুর ছাড়ার আগে অভিযোগ নথিভুক্ত করাতে আসা মানুষজনের উদ্দেশে রাজুলকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আপনাদের অভিযোগ পেয়েছি। যারা অভিযুক্ত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসার তদন্ত করতে আগেই জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে দায়িত্ব দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। হাইকোর্টের নির্দেশ মতো তদন্তকারী দল গঠন করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে হিংসায় ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ নথিভুক্ত করছে দলটি। রাজুলের নেতৃত্বাধীন দলটি বুধবার সকালে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে গিয়েছিল। সেখান থেকে মেদিনীপুরে আসে।

ঝাড়গ্রামে মানবাধিকার কমিশনের দলটির নেতৃত্বে ছিলেন ডিএসপি পদ মর্যাদার অফিসার রাজেন্দ্র সিংহ। দুপুরে চার সদস্যের দলটি প্রথমে ঝাড়গ্রাম সার্কিটহাউসে এসে পৌঁছয়। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে দু’ভাগে কমিশনের সদস্যরা বেরিয়ে পড়েন। জামবনির ভাদুয়া গ্রামে গিয়ে বিজেপির কিসান মোর্চার নিহত নেতা কিশোর মান্ডির স্ত্রী ও পরিজনদের সঙ্গে একান্তে কথা বলেন কমিশনের প্রতিনিধিরা। গত ৫ মে সন্ধ্যায় জামবনির খাটখুরা এলাকার মহুয়াচকে আক্রান্ত হন কিশোর। জেলা সুপার স্পেশালিটিতে নিয়ে যাওয়া তাঁর মৃত্যু হয়। কিশোর খুনের ঘটনায় এ পর্যন্ত দু’জন গ্রেফতার হয়েছে। জঙ্গলমহলে ভোটের আগে ২১ মার্চ ঝাড়গ্রামের নেতুরা গ্রামের বিজেপি কর্মী তারক সাউয়ের উপর হামলার ঘটনায় স্থানীয় তৃণমূলের নাম জড়িয়েছিল। ২৫ মার্চ কটকের হাসপাতালে মৃত্যু হয় তারকের। এদিন তারকের বাড়িতে গিয়েছিল কমিশনের প্রতিনিধি দল। ভোটের ফল প্রকাশের পরদিন ৩ মে ঝাড়গ্রাম শহরের বাছুরডোবা এলাকায় বিজেপির নগর মণ্ডলের কোষাধ্যক্ষ প্রশান্ত সিংহের বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কোনও মতে পালিয়ে বাঁচেন প্রশান্ত। তাঁর বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। প্রশান্তের মাকেও মারধরের অভিযোগ ওঠে। প্রশান্তের বাড়িতে গিয়েও কথা বলেন কমিশনের সদস্যেরা। প্রশাসন সূত্রের খবর, কমিশনের প্রতিনিধিরা রাতে সার্কিট হাউসে কাটিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে ফিরে যেতে পারেন।

এর আগে গত ১৪ জুন জেলায় এসেছিল জাতীয় আদিবাসী কমিশন (ন্যাশনাল কমিশন ফর সিডিউল ট্রাইব)। ওই কমিশনের প্রতিনিধিরাও জামবনির ভাদুয়া গ্রামে কিশোর পরিবারের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের অভিযোগ শুনেছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

National Human Rights Commission
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE