Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
kharagpur municipality

পদ সামলানোই চ্যালেঞ্জ নয়া পুরপ্রধান কল্যাণীর

মহিলা তৃণমূলের শহর সভানেত্রীও। এই মুহূর্তে তৃণমূলের ২৫জন কাউন্সিলরের মধ্যে এমন অভিজ্ঞতা কারও নেই। তবে অশান্তির আবহে পেতে চলা পুরপ্রধানের চেয়ার সুখকর হবে কি না সেই নিয়েই চর্চা চলছে।

পুরপ্রধানের এই চেয়ারেই বসার অপেক্ষায় কল্যাণী ঘোষ। নিজস্ব চিত্র

পুরপ্রধানের এই চেয়ারেই বসার অপেক্ষায় কল্যাণী ঘোষ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:৩৭
Share: Save:

কাঁটা তুলতে সকলের ‘মন জয়ে’র মন্ত্র জপছেন খড়্গপুরে তৃণমূলের ঘোষিত নতুন ‘পুরপ্রধান’!

খড়্গপুরের পুরপ্রধান পদে তৃণমূল কল্যাণী ঘোষের নাম ঘোষণার পর থেকেই ভবিষ্যৎ জল্পনায় শহরের রাজনৈতিক মহল। কারণ, গত প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে এই পুরপ্রধানের চেয়ার নিয়ে অশান্ত হয়েছে শহর। মূলত সেই অশান্তির মূলে কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। তবে শেষ এক বছরে সেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেছে। শহরের উন্নয়নের বদলে পুরপ্রধানের চেয়ার নিয়ে দড়ি টানাটানি চলেছে তৃণমূলের অভ্যন্তরে। গত ২০২২সালের পুর নির্বাচনে তৃণমূল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও পুরপ্রধানের একাধিক দাবিতে অশান্তি বাড়ছিল। এমনকি সেই সময়ে দৌড়ে ছিলেন কল্যাণীও। শেষমেশ পুরপ্রধান পদে প্রত্যাবর্তন হয় প্রদীপ সরকারের। তবে ছ’মাস পেরোতেই পুরপ্রধানের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে চিঠি পাঠান প্রদীপ বিরোধী ২০জন কাউন্সিলর। সেই চিঠিতে সই করানোর নেপথ্যে ছিলেন যিনি প্রদীপ ‘ঘনিষ্ঠ’ সেই প্রবীর ঘোষকে পুরপ্রধান করার সিদ্ধান্ত নেন ২০জন কাউন্সিলর। নানা অশান্তির পরে দলের ‘চাপে’ মহকুমাশাসকের কাছে পুরপ্রধান পদ ছাড়তে ইস্তফাপত্র জমা দিতে হয় প্রদীপ সরকারকে। নতুন পুরপ্রধানের নাম ঘোষণা নিয়ে তৃণমূলের অভ্যন্তরে চলে নানা টালবাহানা। সামনে আসে কল্যাণী, প্রবীর-সহ একাধিক নাম। তবে এ বার তৃণমূলের ঘোষণায় শেষ হাসি হাসলেন কল্যাণী। তবে চেয়ারে কি কাঁটা রয়ে গেল না? তৃণমূলের জেলা কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতি বলেন, “আমি অনেকগুলি নাম দলের কাছে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু গতবারই কল্যাণীর নাম ছিল। তবে পুরপ্রধান হয় প্রদীপ। তাই দল কল্যাণীকে এ বার পুরপ্রধান করতে বলেছে। তবে এই সিদ্ধান্ত সকলে মেনে নিয়েছে।”

অবশ্য দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও কাঁটা যে থাকছে তা তৃণমূলের অভ্যন্তরে কান পাতলেই স্পষ্ট। এক তৃণমূল কাউন্সিলর বলছেন, “একজনের নাম ২০ জন কাউন্সিলর মিলে পুরপ্রধান হিসাবে কোলাঘাটে ঠিক করলাম। তার পরে আরও কয়েকটা নাম এল। আমাদের দলে তো গোষ্ঠীর অভাব নেই। কল্যাণীদি অভিজ্ঞ। কিন্তু তাঁকে সোনার মুকুট পরে কাঁটার এই চেয়ারেই বসতে হবে এ নিয়ে তো সংশয় নেই।” শাসক-বিরোধী সকলেই অবশ্য অভিজ্ঞতার নিরিখে কল্যাণী যে যোগ্য তা স্বীকার করেছেন। দীর্ঘবছর চাচা জ্ঞানসিংহ সোহন পালের সান্নিধ্যে রবিশঙ্কর পাণ্ডের পরিচালিত কংগ্রেস বোর্ডে পুর পারিষদের দায়িত্ব সামলেছেন কল্যাণী। তৃণমূলে যোগ দিয়েও এখনও পর্যন্ত পুর-পারিষদের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। সব মিলিয়ে পাঁচবারের কাউন্সিলর। তিনি মহিলা তৃণমূলের শহর সভানেত্রীও। এই মুহূর্তে তৃণমূলের ২৫জন কাউন্সিলরের মধ্যে এমন অভিজ্ঞতা কারও নেই। তবে অশান্তির আবহে পেতে চলা পুরপ্রধানের চেয়ার সুখকর হবে কি না সেই নিয়েই চর্চা চলছে। পুরসভার বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের বিষ্ণুবাহাদুর কামি বলেন, “কল্যাণীদি আমার পুরনো সতীর্থ। ওঁর অভিজ্ঞতা যথেষ্ট। এই মুহূর্তে ওঁর থেকে যোগ্য পুরপ্রধান তৃণমূলে নেই। কিন্তু তৃণমূলের যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তাতে চেয়ারটা অনেক চ্যালেঞ্জের।” আবার বিজেপি কাউন্সিলর অনুশ্রী বেহেরা বলছেন, “প্রথম মহিলা পুরপ্রধান পেল খড়্গপুর পুরসভা। এই পুরসভার একজন মহিলা কাউন্সিলর হিসাবে আমিও গর্বিত। কিন্তু তৃণমূলের যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তাতে উন্নয়ন বাধা পাচ্ছে। কল্যাণীদিকে পুরপ্রধান হিসাবে অন্য চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে।” আর সিপিএমের কাউন্সিলর জয়দীপ বসু বলেন, “কল্যাণী অভিজ্ঞ। তিনি নিশ্চয়ই ঘরে-বাইরে যে ঝড়-ঝাপটা সেটা সামলে পুরপ্রধান হিসাবে সফল হতে পারবেন।”

চ্যালেঞ্জ যে প্রতি পদক্ষেপে তা আঁচ করতে পারছেন কল্যাণীও। তবে তিনি বলছেন, “চ্যালেঞ্জ আছে জানি। অনেকে এই পুরপ্রধান পদের দাবিদার ছিল। তাই একটা মন খারাপ তো ওঁদেরও থাকবে। তবে দল আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে। সেই সম্মান রক্ষা করব। সঙ্গে বিগতদিনে যে সম্মান কাউন্সিলররা পায়নি বলে অভিযোগে পুরপ্রধানকে সরতে হয়েছিল সেই সম্মান ফিরিয়ে সকলকে নিয়ে উন্নয়নের কাজ করব। এটাই আমার চ্যালেঞ্জ।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kharagpur municipality TMC Kharagpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE