Advertisement
E-Paper

চিকিৎসক কম, বহির্বিভাগে ভোগান্তির লাইন

পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই। নির্ধারিত সময়ের অনেক পরেও তমলুক জেলা হাসপাতালে চর্মরোগের বহির্বিভাগের দরজা খোলে না বলে অভিযোগ। গরমে দীর্ঘক্ষণ হাসপাতালের বহির্বিভাগে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় রোগীদের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৬ ০১:৫৬
চর্মরোগের বহির্বিভাগে রোগীদের ভিড়। — পার্থপ্রতিম দাস।

চর্মরোগের বহির্বিভাগে রোগীদের ভিড়। — পার্থপ্রতিম দাস।

পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই। নির্ধারিত সময়ের অনেক পরেও তমলুক জেলা হাসপাতালে চর্মরোগের বহির্বিভাগের দরজা খোলে না বলে অভিযোগ। গরমে দীর্ঘক্ষণ হাসপাতালের বহির্বিভাগে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় রোগীদের।

তীব্র গরমে বাড়ছে চামড়ার নানা রোগ। জেলা হাসপাতালের চর্ম রোগ বিভাগেও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। হাসপাতালে দু’জন চর্মরোগের চিকিৎসক থাকার কথা। রয়েছেন একজন। ফলে হাসপাতালের পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ।

শুক্রবার সকালেও হাসপাতালের বহির্বিভাগে গিয়ে দেখা গেল দীর্ঘ লাইন। লাইনে অপেক্ষা করছিলেন তমলুকের বনমালীকালুয়া গ্রামের কিশোরী অঞ্জলি সিংহ। পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন ওই কিশোরীর দাদা বিশ্বজিৎ সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘অঞ্জলির চোখের কাছে পুড়ে যাওয়ার মতো কালো দাগ হয়ে গিয়েছে। বহির্বিভাগে চিকিৎসা করাতে সকাল ৯টা থেকে দু’ঘণ্টা অপেক্ষা করে আছি। কখন চিকিৎসককে দেখাতে পারব জানি না।’’

ওই লাইনে দাঁড়িয়েই অপেক্ষা করছিলেন মহিষাদলের কেশবপুর গ্রামের গৃহবধূ সুমা মণ্ডল। তাঁর সারা মুখে দাগ হয়ে গিয়েছে। সুমাদেবী বলেন, ‘‘রোদের মধ্যেই কাজ করতে হয়। প্রচণ্ড রোদেই মুখে দাগ হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে । ভিড়ের কারণে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।’’

জেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই চর্মরোগের বহির্বিভাগে রোগীদের ভিড় অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। শীতকালে বহির্বিভাগে যেখানে প্রতিদিন গড়ে ১৫০ জন রোগী আসেন। সেখানে এখন দিনে গড়ে ২৫০-৩০০ জন রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসার জন্য আসছেন। অন্য বছরের তুলনায় এ বার গরমে চর্মরোগীর সংখ্যা বেড়েছে বলেও হাসপাতাল সূত্রে খবর। প্রতি সপ্তাহে তিন দিন চর্মরোগের বহির্বিভাগ খোলা থাকে। ফলে রোজই ভিড়় উপচে পড়ে। গরমে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোগান্তির শিকার হন রোগীরা।

চিকিৎসক শুভজিৎ অধিকারীর মতে, সূর্যের প্রবল তাপ সরাসরি শরীরে লাগার ফলে চামড়ার উপরিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে চামড়ায় পুড়ে যাওয়ার মতো কালো দাগের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়াও গ্রামের বাসিন্দাদের অনেকেই এখনও পুকুরের জলে স্নান করেন। দাবদাহের জেরে জলের তাপমাত্রাও অনেক বেশি থাকে। অতিরিক্ত উত্তপ্ত জলে স্নান করার ফলেও বিভিন্ন চামড়ার রোগ হতে পারে। আবার গরমে অনেক পুকুরের জল তলানিতে চলে গিয়েছে। অল্প জল অনেক ক্ষেত্রে দূষিত হয়ে যায়। দূষিত জলে স্নান করলেও চর্ম রোগ হতে পারে।

শুভজিৎবাবুর মতে, গরমের সময় চর্মরোগ এড়াতে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যেমন, প্রবল রোদ এড়িয়ে চলতে হবে। রোদের মধ্যে বের হলে চোখে সানগ্লাস, মুখে মাস্ক ও শরীর ঢাকা পোশাক পরা উচিত। বাইরের রোদ থেকে এসে সঙ্গে সঙ্গে জল পান করা উচিত নয়। বেশি করে জল পান করা প্রয়োজন। প্রবল রোদ থেকে এসেই পুকুরের জলে স্নান করা উচিত নয়। পুকুরের জলে স্নান করা এড়িয়ে চলা উচিত।

জেলা হাসপাতালের চর্ম রোগ চিকিৎসক অপূর্ব গিরি বলেন, ‘‘একটানা প্রবল গরমের কারণে ব্যাকেটিরিয়া, ছত্রাক জনিত বিভিন্ন চর্ম রোগ হচ্ছে। ঘামাচি, ত্বকে কালো দাগ, ‘স্কেবিস’ ( চুলকানি ) ছাড়াও ‘চিকেন পক্স’ হওয়ার প্রবণতাও রয়েছে। তাপপ্রবাহের কারণে এ বার চর্ম রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি।’’ অপূর্ববাবুর মতে, গরমে সুস্থ থাকতে সারাদিনে দু’বার স্নান করতে হবে। স্নানের সময় সাবান ব্যবহার করতে হবে। জল, ওআরএস, ডাবের জল বেশি করে খাওয়া উচিত।

স্বাস্থ্য কর্মীদের সংগঠন ‘নন-গেজেটেড হেলথ্‌ এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের’ জেলা সম্পাদক সত্যরঞ্জন সাহু বলেন, ‘‘জেলা হাসপাতালে দু’জন চর্মরোগ চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু বর্তমানে এখানে মাত্র একজন চিকিৎসক রয়েছেন। ফলে হাসপাতালে আসা রোগীদের চরম সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। আরও একজন চর্ম রোগ চিকিৎসক নিয়োগের জন্য স্বাস্থ্য দফতরের কাছে দাবি জানিয়েছি।’’ এ নিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘বর্ষাকালে চর্মরোগের প্রবণতা বেশি থাকে। তবে গরমেও বিভিন্ন ধরনের চর্ম রোগ হয়ে থাকে। এইসব রোগের চিকিৎসার জন্য জেলা হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রয়েছে। ওই বিভাগে চিকিৎসকের সমস্যা মেটানোর জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

Dermetologist Patient Hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy