হ্যারিকেনের আলোয় পড়াশোনা।—নিজস্ব চিত্র।
আজও আলো জ্বলেনি খড়্গপুরের রেলবস্তিতে।গত বিধানসভা ভোটের আগে খড়্গপুরে প্রচারে এসে রেল এলাকার বস্তির উন্নয়নে একাধিক প্রতিশ্রুতি দেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু। আলো জ্বালানোর কথাও বলেছিলেন তিনি। তার মাস আটেক পরেও সন্ধে হলেই অন্ধকারে ডোবে রেলবস্তি। নিমপুরা বস্তির এস সুধাকর রাও, মথুরাকাটি শান্তিনগর বস্তির কে গণেশ বলেন, “বিদ্যুতের জন্য দীর্ঘদিন লড়াই করছি। বাড়িতে ছেলে-মেয়েদের প্রশ্নের জবাব দিতে পারি না।’’ তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘বিজেপি তো কেন্দ্রে ক্ষমতায় রয়েছে। তারপরেও কেন বস্তির উন্নয়নে কিছু করা হচ্ছে না?”
সন্ধে নামলেই অন্ধকারে পড়াশোনা লাটে ওঠে নিমপুরা বস্তির তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী এস কমল, চায়না টাউন বস্তির নবম শ্রেণির ছাত্রী এম প্রমিলা, ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র এম সহিত কুমারদের। তাদের কথায়, ‘‘বন্ধুদের বাড়িতে আলো রয়েছে। ওরা কত স্বাচ্ছন্দ্যে পড়াশুনো করে। বাবা-মারা বলেছিল, ভোটের পরে আলো আসবে। কিন্তু কোথায়!’’”
খড়্গপুরে রেল কোয়ার্টারের গা ঘেঁষে গজিয়ে উঠেছে একাধিক বস্তি। নিমপুরা বাজার বস্তি, বোরিং বস্তি, সুপার মার্টেক বস্তি, চায়না টাউন, শান্তি নগর, পাঁচপীর, আয়মা ধোবিঘাট-সহ প্রায় ৩০টি বস্তি এলাকায় কয়েক হাজার মানুষের বাসন। যদিও অবৈধভাবে গজিয়ে ওঠা বস্তির উন্নয়নের দায় তাদের নয় বলে দায় ঝেড়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ।
২০১৩ সালে কংগ্রেস পরিচালিত পুরবোর্ডের উদ্যোগে বস্তি এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি বসানো শুরু হয়। যদিও রেলের বাধায় মাঝপথে সেই কাজ থমকে যায়। তারপর আর কাজ এগোয়নি। তখন রেলের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করে পুরসভা। তা এখনও বিচারাধীন। পশ্চিমবঙ্গ বস্তি উন্নয়ন সমিতির খড়্গপুরের সম্পাদক অনিল দাসের অভিযোগ, “রেলবস্তির মামলা নিয়ে উদাসীন তৃণমূল পরিচালিত পুরসভা। আর বিধানসভা নির্বাচনের আগে রেলমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়ে সব ভুলে গিয়েছেন। বিধায়ক দিলীপ ঘোষেরও দেখা পাওয়া যায় না।’’ গত বিধানসভা ভোটে কিন্তু রেল এলাকার আটটি ওয়ার্ডে প্রথমে স্থানে ছিল বিজেপি।
বস্তি উন্নয়ন থমকে থাকার জন্য রেলের বাধাকেই দায়ী করছে তৃণমূল। খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, “রেলবস্তির উন্নয়নে আমরা যথেষ্ট উদ্যোগী। তবে রেলের বাধায় বস্তিতে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ করতে পারছি না।’’ বিজেপিকে বিঁধে পুরপ্রধানের কটাক্ষ, ‘‘রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু ও বিধায়ক দিলীপ ঘোষ নির্বাচনী চমক দেখিয়েছিলেন।”
খড়্গপুরের বিধায়ক তথা বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপবাবু বলেন, “আমার সঙ্গে রেলমন্ত্রীর কথা হয়েছে। কিন্তু খড়্গপুরের রেল আধিকারিকেরা গড়িমসি করছেন।’’ তাঁর আশ্বাস, ‘‘রেলমন্ত্রী যাতে খড়্গপুরে এসে এ বিষয়ে পদক্ষেপ করেন তার চেষ্টা করব। রেল এলাকার বাজারে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার আগে দিল্লির একটি সংস্থা সমীক্ষা করেছে। বাজার এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার পরেই ধীরে ধীরে বস্তির বাসিন্দারাও বিদ্যুৎ পাবেন বলে আমার আশা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy