হঠাৎ অসুস্থ হয়ে বেশ কিছুদিন হাতপাতালে ভর্তি ছিলেন অনিল সিংহ। চিকিৎসার খরচ জোটাতে স্ত্রী-র তখন হিমশিম দশা। স্বাস্থ্যবিমার কার্ড নবীকরণ না হওয়ায় শেষে দেনা করতে হয়েছিল।
শুধু অনিল সিংহ নন, স্বাস্থ্যবিমার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের কয়েক লক্ষ পরিবার। ২০১২-’১৩ সালে রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যবিমা যোজনায় জেলার বিপিএল তালিকায় থাকা পরিবারগুলি নথিভুক্ত হয়েছিল। প্রতি বছর নবীকরণের ঝক্কি এড়াতে ২০১৪ সাল থেকে স্বয়ংক্রিয় নবীকরণ ব্যবস্থা চালু করে সরকার। আর তাতেই বিপাকে পড়তে হয়েছে সাধারণ গরিব মানুষকে। কারণ, ২০১৪ সালে বিমার আওতাধীন জেলার প্রায় অর্ধেক উপভোক্তা কার্ড নবীকরণ করাতে পারেননি। যাঁরা পেরেছিলেন, তাঁদের নাম বছরের পর বছর নবীকরণ হয়ে চলেছে। আর যাঁরা বঞ্চিত ছিলেন তাঁরা বঞ্চিতই রয়ে গিয়েছেন। নতুন করে আর কার্ডও করছে না সরকার। ফলে, ভোগান্তির অন্ত থাকছে না। মেদিনীপুর শহরের হাঁসপুকুরের বাসিন্দা তুফান খাঁ যেমন বললেন, “বাবা, মা, দাদা বৌদি, ভাইপোর কার্ড রয়েছে। কিন্তু আমি, স্ত্রী ও সন্তান বিমার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। রিকশা চালিয়ে খাই। হঠাৎ অসুস্থ হলে রোজগার বন্ধ হয়ে যায়। তখন ধার-দেনা করে চিকিৎসা করতে হয়।’’
কেন এই সঙ্কট?
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ফি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষের কার্ড নবীকরণ করতে সমস্যা হত। বিভিন্ন জায়গায় শিবির পর্যন্ত করতে হত। ঝক্কি এড়াতে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে নবীকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে প্রতিটি কার্ডের নবীকরণ করা জরুরি ছিল। কিন্তু সেটাই করতে পারেনি প্রশাসন। সেই সংখ্যাটাও কম নয়। ২০১৪ সালে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় স্বাস্থ্য বিমার কার্ড নবীকরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ লক্ষ ১৩ হাজার ৬২৬। কিন্তু নবীকরণ করা গিয়েছিল মাত্র ৪ লক্ষ ৪৩ হাজার ৩৫৫টি। অর্থাৎ প্রায় অর্ধেকেরই কার্ড নবীকরণ হয়নি। এর ফলে, বহু গরিব মানুষ ৩০ টাকার বিনিময়ে বছরে ৩০ হাজার টাকার চিকিৎসা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। একই সঙ্গে অভিযোগ, বহু গরিব মানুষ নবীকরণের কথা জানেনই না। স্বাস্থ্য বিমার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত এক নার্সিংহোম মালিক দেবব্রত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বহু গরিব মানুষ পুরনো কার্ড নিয়ে নার্সিংহোমে ভর্তি হন। তাঁরা জানেনই না যে নবীকরণ হয়নি। ফলে, আর্থিক সহায়তা মিলবে না। এই সমস্যার কথা বিভিন্ন বৈঠকেই প্রশাসনিক কর্তাদের জানিয়েছি। কিন্তু কোনও উদ্যোগ দেখতে পাইনি।’’
রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নোডাল মহম্মদ ইসরার অবশ্য বক্তব্য, ‘‘২০১৪ সালের পর থেকে চলতি বছর পর্যন্ত স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতেই স্বাস্থ্যবিমার কার্ড নবীকরণ হচ্ছে। সরকার ফের আবেদনের ভিত্তিতে নবীকরণের সিদ্ধান্ত নিলে বা নতুন করে স্বাস্থ্য বিমা যোজনায় মানুষের নাম নথিভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিলে বাকিরাও সুযোগ পাবেন।’’ পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনার বক্তব্য, “নবীকরণ না হওয়া কার্ডগুলি নবীকরণে যাতে সরকার উদ্যোগী হয় সেই আবেদন করেছি। যাঁরা আগে কার্ড করতে পারেননি তাঁরা যাতে সুযোগ পান, তা-ও জানানো হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy