নিরাপত্তার বালাই নেই। মেদিনীপুরের সাহাভড়ং বাজার।
গত ১৭ জুন খড়্গপুরের মালঞ্চ টাটা ব্যাঙ্ক এলাকায় আক্রান্ত হয়েছিলেন সোনার দোকানের মালিক উত্তম দাস। দুষ্কৃতীদের ছোড়া গুলিতে জখমও হন তিনি। টাকার ব্যাগটি বাড়ির দিকে ছুড়ে দেন উত্তমবাবু। দুষ্কৃতীরা এলোপাথাড়ি গুলির মধ্যে পড়ে সে দিন জখম হয়েছিলেন এক কাঠের মিস্ত্রিও।
সোনার ব্যবসায়ী খুনের নজির মেদিনীপুরেও রয়েছে। ২০১৪ সালের জুনে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে খুন হয়েছিলেন স্বপন পাণ্ডব। আলোড়ন পড়েছিল সদর শহরে।
গড়বেতায় দিনে দুপুরে দোকানের মধ্যে সোনার ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে খুন ও যাবতীয় গয়না লুঠের পরে দুই শহরের এই সব ঘটনার স্মৃতি উস্কে গিয়েছে। মেদিনীপুর-খড়্গপুর দুই শহরের ব্যবসায়ী মহলই উদ্বিগ্ন। মাঞ্চয় আক্রান্ত উত্তমবাবুরও বক্তব্য, “আমরা নিরাপত্তার দাবি করেছি। এলাকায় আরও পুলিশি বন্দোবস্ত হলে ভাল।’’
মেদিনীপুর-খড়্গপুর দুই শহর জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে অজস্র সোনার দোকান। মেদিনীপুরে যেমন বড়বাজার, সাহাভড়ংবাজার, স্কুলবাজারের মতো জমজমাট এলাকার পাশাপাশি বিভিন্ন পাড়াতেও ছোট সোনার দোকান রয়েছে। খড়্গপুরের প্রাণকেন্দ্র গোলবাজারের ভাণ্ডারিচক সংলগ্ন এলাকায় আবার গোটা দশেক সোনার দোকান রয়েছে। বড় দোকানগুলোয় বেসরকারি সংস্থার নিরাপত্তারক্ষী থাকে। দোকান মালিকেরা নিজেদের উদ্যোগে রক্ষী রাখেন। সিসিটিভিও থাকে। তবে ছোট দোকানগুলোয় সে সবের বালাই নেই।
গোলবাজারে সোনার দোকানের এলাকায় নিরাপত্তাও আঁটোসাঁটো নয়। ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও তাদের আগ্নেয়াস্ত্র থাকে না। তাই সোনার দোকানের মালিকরাই নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করেছেন। কিন্তু তা-ও যথেষ্ট নয়। গোলহাজারের এক সোনার দোকানের মালিক বিপিন গুপ্তের কথায়, “যে ভাবে একের পর এক খুন-জখম হচ্ছে, তাতে খুব ভয়ে থাকি। ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী দিয়ে দুষ্কৃতীদের রোখা সম্ভব নয়। পুলিশকে কড়া পদক্ষেপ করতে হবে। পুলিশি টহল বাড়াতে হবে।’’
রাতের শহরে পুলিশের টহল দেওয়ার কথা। তবে পুলিশ সব এলাকায় সবদিন সমান টহল দেয় না বলেই অভিযোগ। বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির মেদিনীপুর শাখার সম্পাদক জিতেন্দ্রনাথ দাস বলেন, “দুষ্কৃতীরা ছোট দোকানকেই নিশানা করছে। নজরদারি আরও বাড়ানো উচিত।”
শুধু সোনার দোকানের মালিক নন, নিরাপত্তার অভাবে ভুগছেন কর্মীরাও। সোনা আনার পথে হামলার আশঙ্কা করছেন তাঁরা। ২০১৪-র অক্টোবরে খড়্গপুর স্টেশন থেকে ফেরার পথে ৭ নম্বর রেলকলোনিতে সোনার দোকানের কর্মী প্রদীপ ধাওলিয়াকে লক্ষ করে গুলি চালিয়ে ব্যাগ ছিনতাইয়ের চেষ্টা হয়েছিল। ওই ঘটনার পরেও অবশ্য শুনশান এলাকাটিতে কোনও পুলিশ মোতায়েন করা হয়নি।
জেলা পুলিশের এক কর্তার অবশ্য বক্তব্য, “গড়বেতায় একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে। এমন ঘটনা এড়াতে সর্বত্র পুলিশি নজরদারি আরও বাড়ানো হচ্ছে।” পুলিশ সূত্রের দাবি, শহরগুলিতে নতুন করে ‘নাকা’ হতে পারে। শহরে ঢোকা-বেরনোর পথে নাকা রাখা হতে পারে। অপরাধমূলক কাজকর্ম ঠেকাতে দোকান বন্ধের সময়ও পুলিশি টহলের ব্যবস্থা থাকতে পারে। জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, “শহরে প্রতিদিন প্রচুর মানুষ আসেন। কে কী উদ্দেশ্য নিয়ে আসছে বোঝা কঠিন। তবে অপরাধমূলক কাজকর্মে রাশ টানার সব রকম চেষ্টা চলছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy